Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ঘাটাল কেন্দ্রে ‘মানস দুর্গ’ সবংই ভাবনা তৃণমূলের

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এখনও কংগ্রেসের ‘শক্ত ঘাঁটি’ বলে পরিচিত সবং। আর কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার এই গড়ই ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে শাসকদলের চিন্তার একমাত্র কারণ।

সবংয়ে মানস ভুঁইয়ার সমর্থনে দেওয়াল লিখন। —নিজস্ব চিত্র।

সবংয়ে মানস ভুঁইয়ার সমর্থনে দেওয়াল লিখন। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৪ ০১:৫৭
Share: Save:

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এখনও কংগ্রেসের ‘শক্ত ঘাঁটি’ বলে পরিচিত সবং। আর কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার এই গড়ই ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে শাসকদলের চিন্তার একমাত্র কারণ। তৃণমূলের দলীয় সূত্রে খবর, দিন দু’য়েক আগে ডেবরায় লোকসভা কেন্দ্রে ভোট সংক্রান্ত তৃণমূলের যে সভা ডাকা হয়েছিল সেখানে উঠে এসেছে এমনই তথ্য। ভোট বাড়লেও সংখ্যার বিচারে ওই লোকসভা কেন্দ্রের অন্য ৬টি বিধানসভার মধ্যে সবং বিধানসভা কেন্দ্রে পিছিয়ে থাকতে হবে দলকে, এমনটাই অনুমান তৃণমূলের দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকগুলির পর্যালোচনায়।

জানা গিয়েছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় ব্লক সভাপতি ও বিধানসভা এলাকার চেয়ারম্যানদের নিয়ে ভোট পর্যালোচনার জন্য একটি সভা ডেকেছিল তৃণমূল। সেই সভায় হাজির ছিলেন জেলা সভাপতি দীনেন রায়, ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক শঙ্কর দোলুই, রাধাকান্ত মাইতি, সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের দলের চেয়ারম্যান ও ৯টি ব্লকের সভাপতিরা। শাসকদল সূত্রে খবর, ওই বৈঠকে ৭টি বিধানসভা এলাকার পর্যালোচনা করা হয়। যেখানে বাকি ৫টি বিধানসভা কেন্দ্রে গড়ে ২০ থেকে ২২ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকার আশা প্রকাশ করেছেন প্রতিনিধিরা, সেখানে সবং বিধানসভা থেকে ১০ হাজার ভোটে দল এগিয়ে থাকার কথা বৈঠকে জানান নেতৃত্বেরা।

পরিসংখ্যান বলছে, পরিবর্তনের ভরা জোয়ারেও তৃণমূলকে পিছিয়ে থাকতে হয়েছে কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার খাস তালুক সবংয়ে। এই বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় রয়েছে সবং ব্লকের ১৩টি ও পিংলা ব্লকের ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট প্রার্থী মানস ভুঁইয়া ৯৮৭৭৫ টি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। তবে পঞ্চায়েত ভোটে জোট না হওয়ায় এই বিধানসভা এলাকায় ৪ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। যদিও সবংয়ের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে শাসকদল ও ৫টির দখল পায় কংগ্রেস। তবে পঞ্চায়েত সমিতির ৩৯টি আসনের মধ্যে ২৪টি কংগ্রেস দখল করায় বোর্ড গড়েছে তারাই। একটি জেলা পরিষদের আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। সে দিক থেকে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের তুলনায় ২০১৩ সালে ভাল ফল হয়েছে তৃণমূলের।

হাল ছাড়েননি শাসকদলের নেতারাও। তাঁদের দাবি, ‘ভূমিপুত্র’ মানস ভুঁইয়া লোকসভা আসনের প্রার্থী হলেও তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন আর আর ‘ভূমিপুত্র’ তারকা দেব। দেবের জনপ্রিয়তার সঙ্গে রয়েছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উন্নয়নের ভাবনাও। এছাড়া সম্প্রতি কংগ্রেস, সিপিএম ছেড়ে অনেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সবংয়ে দলের ভাল ফলের বিষয়ে আশাবাদী তৃণমূল। সবংয়ের তৃণমূল ব্লক সভাপতি প্রভাত মাইতির কথায়, “সবংয়ে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এখানে বাম ও কংগ্রেসে একটা গোপন সন্ধি রয়েছে। তা সত্ত্বেও আমাদের আশা শুধু সবংয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার ভোটে এগিয়ে যাব। তবে পিংলার ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ৮ হাজারের ভোট বেশি পাব। তাই এই বিধানসভা ক্ষেত্রে প্রায় ১১ থেকে ১২ হাজার লিড দিতে পারব।”

এ দিকে একদা ‘লাল দুর্গ’ কেশপুরেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল এগিয়ে থাকায় সেখানেও ভাল ভোটে এগিয়ে থাকার বিষয়ে আশাবাদী ব্লক সভাপতি তথা বিধানসভার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সঞ্জয় পান। ডেবরা ব্লক সভাপতি রতন দে বলেন, “আমরা বিধানসভা নির্বাচনে ৮ হাজার ৮১৩টি ভোটে এগিয়ে ছিলাম। পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেকে নির্দলের হয়ে দাঁড়ালেও ১৬ হাজার ভোটে আমরা এগিয়ে ছিলাম। আশা করি এই লোকসভা নির্বাচনেও আমরা ২৫ হাজার ভোটে এগিয়ে যাব।”

কিন্তু সব ব্লকের তুলনায় সবং এত পিছিয়ে কেন?

সবং বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অমূল্য মাইতি বলেন, “অন্য বিধানসভার তুলনায় সংখ্যায় কম ভোটে এগোনোর কারণ আমরাই সবংয়ে তিল তিল করে তিলোত্তমা গড়েছিলাম মানস ভুঁইয়াকে নিয়ে। দীর্ঘদিন আমাদের প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি। আমরা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সবংয়ে ৪ হাজার ভোটে পিছিয়ে থাকলেও ভাল ফল করেছি। উন্নয়ন দেখে এখন অনেকেই ফের দলে যোগ দিচ্ছেন। ফলে এ বার আরও ভাল ফল করব আমরা।” তবে সবং কংগ্রেস ব্লক সভাপতি অমল পাণ্ডা বলেন, “সন্ত্রাস করে ভোট করতে চাইলে সব ভোটই তৃণমূল পাবে। স্বচ্ছভাবে নির্বাচন হলে ওদের ভোট পাওয়ার আশা নেই।” যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায়ের দাবি, “দীর্ঘদিনের অপশাসনের পর মানুষ ধীরে ধীরে পরিবর্তনের পক্ষে সায় দিচ্ছেন। সবংয়ে পঞ্চায়েত

নির্বাচনে আমরা ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছি। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে সর্বত্র ভাল ফল হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sabang manas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE