কলেজ-স্কুলের চাপানউতোরের মধ্যে ঋষি রাজনারায়ণ বসুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ‘সিল’ করে দিল প্রশাসন। শুক্রবার দুপুরে প্রশাসনের কর্মীরা এসে বাড়িতে ঢোকার মূল ফটকটি ‘সিল’ করে দেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, যতক্ষণ না ওই জায়গা সংক্রান্ত সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হচ্ছে, ততক্ষণ ওই ‘সিল’ খোলা হবে না।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অরিন্দম দত্তের উপস্থিতিতে এ দিন দুপুরে এক আলোচনা হয়। আলোচনায় ডাকা হয় দু’পক্ষকেই। ছিলেন মেদিনীপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুধীন্দ্রনাথ বাগ, মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের (বালক) প্রধান শিক্ষক দিলীপ দাস প্রমুখ। ছিলেন মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তও। জানা গিয়েছে, আলোচনা চলাকালীনও কলেজ এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে নালিশ করতে থাকেন। দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটিও হয়। পরিস্থিতি দেখে এরপরই মূল ফটকটি ‘সিল’ করার নির্দেশ দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “সমস্যা সমাধানের জন্য তিন-চারবার বৈঠক হয়েছে। দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অথচ, কেউ নিজেদের দাবি থেকে এতটুকু সরতে নারাজ। ওই জায়গা সংক্রান্ত সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ‘সিল’ খোলা হবে না।” মেদিনীপুর কলেজ এবং কলেজিয়েট স্কুল (বালক) পাশাপাশিই রয়েছে। কলেজের একপাশে রয়েছে স্কুল। স্কুলের পাশেই রয়েছে এই বাড়িটি। কলেজিয়েট স্কুল চালু হয় ১৮৩৪ সালে। মেদিনীপুর কলেজ চালু হয় ১৮৭৩ সালে। ১৮৫১ থেকে ১৮৬৬-টানা ১৬ বছর কলেজিয়েট স্কুলের (বালক) প্রধান শিক্ষক ছিলেন রাজনারায়ণ বসু। যে বাড়িটি নিয়ে চাপানউতোর, সেই বাড়িতেই থাকতেন তিনি। রাজনারায়ণবাবু ছিলেন ভারতের নব জাগরণের অন্যতম পথ-প্রদর্শক ও সমাজ- সংস্কারক। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ইচ্ছে ছিল, ভারতের নব জাগরণের অন্যতম এই পথ-প্রদর্শকই যেন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। বিদ্যাসাগরের ইচ্ছের মর্যাদা দেন রাজনারায়ণবাবু।
বাড়িটি দীর্ঘ দিন ধরে মেদিনীপুর কলেজ অধ্যক্ষের আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি ‘প্রিন্সিপ্যাল কোয়ার্টার’ নামেই এখন পরিচিত। গত বছর বাড়িটির দখল ‘ফিরে পেতে’ জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন স্কুল কর্তৃপক্ষ। গণ্ডগোলের সেই শুরু। এরপর থেকে চাপা নউতোর চলছেই। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এক সময় স্কুল কর্তৃপক্ষই বাড়িটিকে কলেজ অধ্যক্ষের আবাসন হিসেবে ব্যবহার করার মৌখিক অনুমতি দিয়েছিলেন। এই নয় যে, বাড়িটি কলেজেরই। এটি কলেজের সম্পত্তিও নয়। ফলে, এ ভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বাড়িটির দখল রাখতে পারেন না। অন্য দিকে, কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, এক সময় জেলাশাসকই কলেজ এবং স্কুলের সভাপতি পদে থাকতেন। বাড়িটি সরকারি জায়গার উপর রয়েছে। ওই বাড়ির জায়গা ব্যক্তি মালিকানাধীন নয়। তৎকালীন জেলাশাসক চেয়েছিলেন বলেই রাজনারায়ণ বসু এই বাড়িতে থেকেছেন। ১৯৫৭ সালের পর থেকে অবশ্য এই বাড়িতে কলেজ অধ্যক্ষই থাকেন।
শুক্রবার সকালে জায়গার মাপজোক করা ঘিরে দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। তারপর দুপুরেই বাড়িতে ঢোকার মূল ফটকটি ‘সিল’ করে দেওয়া হয়।