Advertisement
E-Paper

জেলায় শিল্প নেই, ঘটা করে শ্রমিক মেলা

জেলায় শিল্প আসছে না। বন্ধ হচ্ছে একের পর এক কারখানা। এরই মধ্যে ঘটা করে শ্রমিক মেলার আয়োজন করল শ্রম দফতর। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনতে সোমবার খড়্গপুরের কলাইকুণ্ডার সিমেন্ট ডাম্প ময়দানে মেলার সূচনা হয়। চলবে বুধবার পর্যন্ত। এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, শ্রম দফতরের সচিব অমল রায়চৌধুরী, অতিরিক্ত শ্রম মহাধ্যক্ষ পশুপতি ঘোষ, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়।

দেবমাল্য বাগচি

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:২০
প্রকল্পের চেক বিলি করছেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। নিজস্ব চিত্র।

প্রকল্পের চেক বিলি করছেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। নিজস্ব চিত্র।

জেলায় শিল্প আসছে না। বন্ধ হচ্ছে একের পর এক কারখানা। এরই মধ্যে ঘটা করে শ্রমিক মেলার আয়োজন করল শ্রম দফতর। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনতে সোমবার খড়্গপুরের কলাইকুণ্ডার সিমেন্ট ডাম্প ময়দানে মেলার সূচনা হয়। চলবে বুধবার পর্যন্ত। এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, শ্রম দফতরের সচিব অমল রায়চৌধুরী, অতিরিক্ত শ্রম মহাধ্যক্ষ পশুপতি ঘোষ, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়।

শ্রমিকদের স্বার্থে এই মেলার আয়োজন হলেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় শিল্পায়নের ছবিটা আদৌ আশাব্যঞ্জক নয়। একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়েছে। ক’দিন আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে শালবনির জিন্দলদের কারখানা। খড়্গপুরেও রামস্বরূপ, কালামাটির মতো একাধিক কারখানা বন্ধ। বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে গত তিনবছরে নতুন কোনও শিল্প আসেনি। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিক মেলার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে শ্রমিক সংগঠনগুলিই। জেলা এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, “যে রাজ্যের সরকার শ্রমিকদের কাজ পাওয়া সুনিশ্চিত করতে পারে না, যেখানে শিল্পায়নের বদলে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, সেখানে শ্রমিক মেলা অপ্রাসঙ্গিক।” শ্রমিক মেলায় শ্রমিক সংগঠনগুলিকে না ডাকাতেও ক্ষোভ জানান তিনি। তাঁর কথায়, “ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে ডাকার সৌজন্যটুকু দেখায়নি শ্রম দফতর। শুনেছি মেলায় তৃণমূল নেতাদের ভিড় জমেছে।”

কেন ডাকা হয়নি শ্রমিক সংগঠনগুলিকে? মন্তব্য করেননি জেলার উপ-শ্রম আধিকারিক সন্দীপ নন্দী। আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসা মন্ত্রী সৌমেনবাবু সাংবাদিকদের বলেন, “যত শিল্প খড়্গপুর-সহ সারা বাংলায় বন্ধ হয়েছে, তা বাম আমলেই বন্ধ হয়েছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যে শিল্পনীতি গ্রহণ করেছেন তাতে শিল্প আসছে। অনেকে গুজরাতের সঙ্গে তুলনা করছেন। দেখুন না আগামী দিনে কী হয়! কারণ, গুজরাতের শ্রমজীবী মানুষের তুলনায় আমাদের শ্রমিকেরা দ্বিগুণ উপকৃত হচ্ছেন।” সৌমেনবাবুর আরও দাবি, “বাম আমলে অসংগঠিত শ্রমিকেরা এই সব সুযোগ-সুবিধের কথা জানতই না। এখন তাঁরা তা জানতে পারছেন, সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন।”

তাঁত, নির্মাণশিল্প, বিড়ি, অঙ্গনওয়াড়ি, খাদি, কুটিরশিল্পের মতো অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরাও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতাভুক্ত। সেই সব প্রকল্পের টাকা দিতেই এই মেলা। তিনটি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে ১৭১৫ জন শ্রমিককে মোট প্রায় ৫৬ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকার চেক বিলি হয় এ দিন। কী ভাবে অসংগঠিত শ্রমিকরা সরকারি সুবিধা পেতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনাও চলছে। যেমন, ভবিষ্যনিধি প্রকল্পে শ্রমিক ২৫ টাকা দিলে সরকারের তরফে ৩০ টাকা দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষে সুদ-সহ ওই টাকার চেক দেয় শ্রম দফতর। শ্রমিকরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্পেও সুবিধা পান। তিন দিনের মেলায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা, শিশুশ্রম, ইএসআই সংক্রান্ত সচেতনতামূলক প্রচার চলছে। শিশু শ্রমিক পুনর্বাসন সমিতির স্টল সমিতির ফিল্ড অফিসার মহাশ্বেতা মিত্র বলেন, “জেলায় ৪২টি শিশুশ্রমিক স্কুল চালাই আমরা। শিশুদের শ্রমিকজীবন থেকে কী ভাবে মূলস্রোতে আনা যায়, সেই প্রচার করছি।”

শ্রমিক মেলায় বিভিন্ন স্বনির্ভর দল কুটিরশিল্পের পসরা নিয়ে বসেছে। মোহনপুরের বেতের ফুলদানি, সবংয়ের মাদুর শিল্প, দাঁতনের পোশাক, খড়্গপুর-১ ব্লকের পশমের সামগ্রীর স্টলে ভিড়ও জমছে। তবে স্বনির্ভর দলগুলির অবস্থা যে সরকারি সাহায্যের অভাবে ভাল নয়, তা দলের সদস্যদের কথাতেই স্পষ্ট। খড়্গপুরের আমগেছিয়ার ‘ছবি’ গোষ্ঠীর কৃষ্ণা মাহাতো, ছবি মাহাতো বলেন, “১০ জন মিলে আসন, উলের পোশাক, ঘর সাজানোর নানা জিনিস বানাই। কিন্তু সরকারি সাহায্য পাচ্ছি না।” দাঁতনের সোমা দোলুই, অঞ্জলি দাসদের বক্তব্য, “সারা বছর একশো দিনের কাজে জব সুপারের কাজ করি। তাতেও টাকা পাচ্ছি না। সেলাই মেশিন দেবে বলেও দেয়নি।” কেন এই অবস্থা? জেলা পরিষদ সূত্রে অবশ্য সদুত্তর মেলেনি।

kalaikunda workers fair soumen mahapatra debmalya bagchi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy