Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জমি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, চাষে ক্ষতির নালিশ

বাবার নামে থাকা জমির কিছুটা দিতে হবে কাকা-জেঠার ছেলেকেও। তা না দেওয়ায় ওই পরিবারকে চাষে বাধার অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, তাতে মদত রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরও। ফলে বন্ধ চাষ। চরম সঙ্কটে পড়েছেন কেশপুর এলাকার নারায়ণচকের শঙ্কর, দোলুই, মধু দোলুই ও নিরোদ দোলুইরা।

সুমন ঘোষ
কেশপুর শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

বাবার নামে থাকা জমির কিছুটা দিতে হবে কাকা-জেঠার ছেলেকেও। তা না দেওয়ায় ওই পরিবারকে চাষে বাধার অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, তাতে মদত রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরও। ফলে বন্ধ চাষ। চরম সঙ্কটে পড়েছেন কেশপুর এলাকার নারায়ণচকের শঙ্কর, দোলুই, মধু দোলুই ও নিরোদ দোলুইরা। চাষে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে লিখিত ভাবে পুলিশ ও প্রশাসনে জানিয়েছেন তাঁরা। যদিও কেউই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

পেশায় স্কুল শিক্ষা দফতরের কর্মী শঙ্কর দোলুইয়ের অভিযোগ, “বাবার মৃত্যুর পর জমির কিছুটা অংশ কাকা ও জেঠুর ছেলেরা দাবি করে। না দেওয়ায় চাষে বাধা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ, প্রশাসন, তৃণমূল নেতৃত্বকে জানিয়েও সুফল মেলেনি। জমি পতিত থাকায় চরম সমস্যায় দিন কাটছে।” চাষ বন্ধের বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি তৃণমূলের কেশপুর ব্লকের সভাপতি সঞ্জয় পানের। তাঁর কথায়, “দলের কেউ এ সব করতে পারে না। কেশপুরে এমন ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না।” বিডিও জামিল আখতার বলেন, “এমনটা হলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”

যে গ্রামে এমন ঘটনা সেই গ্রামের ধলহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্যালয়। পঞ্চায়েত প্রধান শেখ জসিমুদ্দিন বলেন, “এটা একেবারেই পারিবারিক ব্যাপার। ওঁদের বাবা-কাকাদের মধ্যে কথা হয়েছিল, যাঁর নামে বেশি জমি তিনি কিছুটা ছেড়ে দেবেন। কিন্তু তা করার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। তারপর জটিলতা বাড়ে। আইন অনুযায়ী পুরো জমি শঙ্করবাবুদের। আবার কথা দেওয়ায় মানবিকতার দিক দিয়ে কিছুটা জমি ছাড়ারও কথা। যা গ্রামের সকলের জানা। তা নিয়ে বহুবার গ্রামে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু সফল হয়নি। একপক্ষ মেনেছে, তো অন্য পক্ষ তা মানতে রাজি হয়নি।

আর চাষ বন্ধের বিষয়টি? প্রধানের কথায়, “একবার চাষ বন্ধ হয়েছিল জানতে পেরে ধান কাটার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা এর বিরুদ্ধে। কিন্তু বাবা-কাকাদের কথা না রাখায় কয়েক জনের উপরে গ্রামের সকলে ক্ষিপ্ত হলে আমাদের কী করার আছে।” স্থানীয় গোপাল দোলুইয়ের কথায়, “গ্রামের বাচ্চা ছেলেটাও জানে শঙ্করবাবুর বাবার নামে বেশি জমি ছিল। তার কিছুটা কাকার ছেলেদের নামে করার মৌখিক কথাও ছিল। গ্রামের ব্যাপার, হচ্ছে হবে করে দিন কাটে! হঠাত্‌ বাবার মৃত্যুর পরেই শঙ্করবাবু জমি দেবেন না বলে বেঁকে বসেন। ওই রকম মানুষদের সঙ্গে কে সম্পর্ক রাখবে!” গ্রামের সকলেই অভিযোগকারীদের বিপক্ষে যাওয়ায় জোটেনি মজুরও।

নারায়ণচক গ্রামের মধু দোলুই (শঙ্কর দোলুইয়ের ভাই) লিখিত ভাবে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি। একই দিনে বিডিও, জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানান তিনি। তাঁর অভিযোগ, ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে তাঁদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হচ্ছে। খুড়তুতো ও জ্যাঠাতুতো ভাই কিঙ্কর দোলুই, গুণধর দোলুই, লক্ষণ দোলুই, পথিক দোলুইয়েরা এই কাজ করেছেন।

এ ব্যাপারে মন্তব্য করেননি কিঙ্কর দোলুই। আর শঙ্করবাবু বলছেন, “আমাদের পরিবার স্বচ্ছ্বল। আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনেই চাকরি করি। জমিও রয়েছে। এমন সুখে থাকাটাই গুটিকয় প্রতিবেশি মানতে পারেননি।” তিনি বলেন, “ভাইয়ের দশ কাঠা চাষের জমি ও পঞ্চায়েত অফিসের উল্টো দিকে থাকা ছোট্ট ভাঙা বাড়ির জমিটাও ছাড়তে চেয়েছিলাম। ওঁরা রাজি হয়নি। ওদের দাবি প্রায় আড়াই বিঘে জমি দিতে হবে। তা দিইনি বলেই আমাদের সমস্যায় ফেলা হচ্ছে।” প্রশাসন অবশ্য বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

suman ghosh keshpur land dispute
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE