Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূল নেত্রীর কর্মিসভায় ‘না’ রেলের

ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে অমিত শাহের জনসভার অনুমতি নিয়ে পুরসভা-বিজেপি’র তরজা গড়িয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ ছিল, তাঁদের দলের উত্থানকে ‘ভয়’ পেয়ে সভার অনুমতি নিয়ে নানা টালবাহানা করেছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকার, কলকাতা পুরসভা।

খড়্গপুরের এই বিএনআর ময়দানেই কর্মিসভা করার কথা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। চলছিল প্রস্তুতিও। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

খড়্গপুরের এই বিএনআর ময়দানেই কর্মিসভা করার কথা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। চলছিল প্রস্তুতিও। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৫
Share: Save:

ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে অমিত শাহের জনসভার অনুমতি নিয়ে পুরসভা-বিজেপি’র তরজা গড়িয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ ছিল, তাঁদের দলের উত্থানকে ‘ভয়’ পেয়ে সভার অনুমতি নিয়ে নানা টালবাহানা করেছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকার, কলকাতা পুরসভা। সেই বিতর্কের কয়েক দিনের মধ্যেই এ বার খড়্গপুরে রেলের জমিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভায় আপত্তির কথা জানিয়ে দিল রেল। তৃণমূলের রাজ্য সরকার ভিক্টোরিয়া হাউসে যা করেছিল, বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সরকার খড়্গপুরের বিএনআর ময়দানে কি তারই পাল্টা দিল প্রশ্ন তুলছে তৃণমূলেরই একাংশ। তবে বিজেপি কলকাতায়

যা করেছিল, খড়গপুরের ক্ষেত্রে সে ভাবে সংঘাতের পথে যাওয়ার ইঙ্গিত এখনও মেলেনি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে।

বিএনআর ময়দানে তৃণমূল নেত্রীর কর্মিসভার অনুমতি চেয়ে গত সপ্তাহে দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। গত শনিবার সেই আবেদনপত্র জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা পাঠিয়ে দেন খড়্গপুরের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। সোমবার সন্ধ্যায় রেলের পক্ষ থেকে জেলাশাসককে জানিয়ে দেওয়া হয়, রেলের জমিতে ওই সভার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

জেলাশাসক বলেন, “ওই রাজনৈতিক সভা করা যাবে না বলে রেলের কাছ থেকে চিঠি এসেছে।” কেন অনুমতি দেওয়া হল না? ডিআরএম গৌতমবাবু বলেন, “রেলের নির্দেশিকা অনুযায়ী রেলের জমিতে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি করা যায় না। জেলাশাসকের মাধ্যমে বিএনআর ময়দানে একটি রাজনৈতিক দলের সভার অনুমতি চেয়ে আবেদনপত্র এসেছিল। নিয়ম মেনেই তা খারিজ করা হয়েছে।”

খড়্গপুরের বড় অংশ জুড়েই রয়েছে রেল এলাকা। এর আগেও রেল এলাকার অন্তর্গত গিরি ময়দান (ভিক্টোরিয়া গ্রাউন্ড), বিএনআর ময়দান, রাবনপোড়া ময়দান, ধানসিংহ ময়দান, ট্রাফিক রিক্রিয়েশন ময়দানে রাজনৈতিক দলগুলির সভা-সমাবেশ হয়েছে। চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল রেলের ধানসিংহ ময়দানে প্রচার-সভা করেছিলেন লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যা রায়। সে ক্ষেত্রে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? ডিআরএমের জবাব, এমন সভার কথা তাঁর নজরে নেই। তবে তথ্য বলছে, রেলের অন্য মাঠে রাজনৈতিক দলের সমাবেশ হলেও প্রায় দু’দশক বিএনআর ময়দানে কোনও সভা-সমাবেশ হয়নি।

গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে পশ্চিম মেদিনীপুরের একমাত্র খড়্গপুর শহর বিধানসভা এলাকায় এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। নতুন বছরেই খড়্গপুরে পুরসভা নির্বাচন। সেখানেও এই ফল ধরে রাখতে আশাবাদী বিজেপি নেতৃত্ব। নিজেদের জমি রক্ষায় মরিয়া তৃণমূলও। সংগঠন মজবুত করতে দুই মেদিনীপুরের কর্মীদের নিয়ে প্রথমে মেদিনীপুরে সাংগঠনিক সভার সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল। কিন্তু পরে পুরভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে তারা আগামী ১৯ ডিসেম্বরের কর্মিসভার জন্য বেছে নেয় খড়্গপুরের বিএনআর ময়দানকে।

তবে কি বদলার রাজনীতিতেই হাঁটছে বিজেপি? দলের সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকারের বক্তব্য, “রেলের সঙ্গে বিজেপি-কে জড়ানো ঠিক নয়। রেলের জায়গায় সভার অনুমতি পেতে হলে অনেক নিয়ম-কানুন মানতে হয়। লোকসভা ভোটের আগে নদিয়ায় রেলের জমিতে আমরাও সভা করতে চেয়ে জায়গা পাইনি। রেলের তরফে বলা হয়েছিল, অনুমতি ছাড়াই সভা করুন। আমরা চোখ বুজে থাকব! কিন্তু অনুমতি চাইলে পাবেন না।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিজেপি-র সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলছেন, “রেল কেন দিচ্ছে না, সেটা রেল বলতে পারবে। কিন্তু রেলের আরও নমনীয় হয়ে সভা করতে দেওয়া উচিত।”

বিএনআর ময়দানে কর্মিসভার অনুমতি না মেলায় অবশ্য বিশেষ চিন্তিত নন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। প্রশ্নের জবাবে এ দিন তিনি বলেন, “ওখানে সভা করতে দেওয়া হবে কি না, এখনও জানি না। জেলাশাসককে দেওয়া চিঠির উত্তর এখনও পাইনি।” তাঁর সংযোজন, “জেলা প্রশাসন যেখানে অনুমতি দেবে, সেখানেই আমরা সভা করব।” মমতার ১৯ তারিখের কর্মিসভার প্রস্তুতি নিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করতে এবং সম্ভাব্য স্থান দেখতে সুব্রতবাবু এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় সম্প্রতি খড়্গপুরে গিয়েছিলেন। এখন সংসদের অধিবেশন চলায় দু’জনেই দিল্লিতে। সেখান থেকেই তাঁরা সভার বিষয়ে খোঁজ রাখছেন।

রাজ্য নেতৃত্ব বিশেষ গা না ঘামালেও খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা জেলা তৃণমূলের নেতা জহরলাল পালের অভিযোগ, “সারা ভারতের তাবড় নেতারা রেল-শহরের জমিতে সভা করেছেন। হঠাৎ করে মোদী সরকার বলছে অনুমতি দেবে না। এটা চক্রান্ত বই অন্য কিছু নয়!”

জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেনবাবু শুধু বলেন, “রেলের জমিতে এর আগেও বহু রাজনৈতিক দলের সভা হয়েছে।” এখনও আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই বিকল্প জমি খুঁজতে উঠে পড়ে লেগেছেন দীনেনবাবুরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE