Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

দেব রাজি, রোড শো ঢুকল গ্রামে

গনগনে দুপুরে গাড়ি ঘিরে চেঁচাচ্ছে কয়েকশো লোক। দাবি একটাই ‘‘আমাদের গ্রামে একটি বার ঢুকতে হবে।” শুক্রবার বেলা ১টা নাগাদ পাঁশকুড়ার জয়কৃষ্ণপুরের কাছে তখন সবে পৌঁছেছে ‘খোকাবাবু’র হুডখোলা জিপ। সেই রোড-শো ঘিরে উন্মাদনা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছল যে তৃণমূল নেতা-কর্মীরাই জড়িয়ে পড়েন বচসায়।

দেবের কনভয়। জয়কৃষ্ণপুরের মোরাম রাস্তায়।  —নিজস্ব চিত্র l

দেবের কনভয়। জয়কৃষ্ণপুরের মোরাম রাস্তায়। —নিজস্ব চিত্র l

আনন্দ মণ্ডল
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৪০
Share: Save:

গনগনে দুপুরে গাড়ি ঘিরে চেঁচাচ্ছে কয়েকশো লোক। দাবি একটাই ‘‘আমাদের গ্রামে একটি বার ঢুকতে হবে।”

শুক্রবার বেলা ১টা নাগাদ পাঁশকুড়ার জয়কৃষ্ণপুরের কাছে তখন সবে পৌঁছেছে ‘খোকাবাবু’র হুডখোলা জিপ। সেই রোড-শো ঘিরে উন্মাদনা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছল যে তৃণমূল নেতা-কর্মীরাই জড়িয়ে পড়েন বচসায়।

স্থানীয় তৃণমূল নেতারা চাইছেন, গ্রামের মোরাম রাস্তা ধরে দেবের কনভয় এক বার ঢুকুক। কিন্তু পাঁশকুড়ার ব্লক তৃণমূল নেতাদের প্রবল আপত্তি। নির্ধারিত সূচিতে গ্রামে ঢোকার পরিকল্পনা নেই। অবস্থা এমন পর্যায়ে যায় যে, স্থানীয় দুই নেতা অঞ্জন দাস ও হানিফ মহম্মদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ালেন ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি সুজিত রায়। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা ‘গো ব্যাক’ স্লোগান পর্যন্ত তুললেন।

অবশেষে আসরে নামলেন স্বয়ং দেব। ইশারায় জানিয়ে দিলেন, তিনি গ্রামে যাবেন। অমনি রাগ-ক্ষোভ গলে জল। ‘গো ব্যাক’ স্লোগান বদলে গেল জয়ধ্বনিতে। ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে গ্রামের মোরাম পথে ঢুকল নায়কের গাড়ি। প্রায় আধ কিলোমিটার রাস্তা চড়াই-উতরাই ভেঙে এগোল রোড শো। গ্রামের ছেলে-বুড়োর দল তখন নাচছে। দেবের মুখেও হাসি। তিনি বিলক্ষণ জানেন, এ সবই ভালবাসার অত্যাচার!

বিপত্তি বেধেছিল আগেই।

বেলা ১১টা নাগাদ মাইশোর যাওয়ার পথে শাহলাজপুরের কাছে দেবের গাড়ির পিছনের চাকার টায়ার ফেঁসে গিয়েছিল। একে চড়া রোদ, তায় রাস্তার দু’ধারে অগুনতি মানুষ। তৃণমূল নেতারা প্রমাদ গোনেন। এ বারও মুশকিল আসান সেই দেব। চটজলদি তিনি জানিয়ে দেন, “গাড়ি সারানো হোক। আমি বরং ততক্ষণ হাঁটি।” রোদ মাথায় নিয়েই প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটার পরে ফের গাড়িতে ওঠেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী।

পাঁশকুড়ায় এ দিনই প্রথম প্রচারে এলেন দেব। সকালে যশোড়া কালীবাজার থেকে রোড-শো শুরু হওয়ার আগেই জড়ো হয়ে যান কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে ছোটোখাট একটা মঞ্চও বাঁধা হয়েছিল। পৌনে ১০টা নাগাদ দেবের গাড়ি পৌঁছতেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। উন্মাদনার চোটে প্রার্থীকে মঞ্চে তুলে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করতে হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। তড়িঘড়ি নায়ককে তোলা হয় ফুল দিয়ে সাজানো হুড খোলা গাড়িতে। ছিলেন রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, পাঁশকুড়ার উপ-পুরপ্রধান নন্দ মিশ্র, ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দলুই প্রমুখ। গাড়িতে দেবের মামাও ছিলেন।

মালিদা বাজারের কাছে স্থানীয় মহিলারা শাঁখ বাজিয়ে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন টলিউডের সুপারস্টারকে। যাত্রাপথে কখনও বাচ্চাদের কোলে নিয়ে আদর করেছেন দেব, কোথাও আবার বৃদ্ধারা ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন তাঁকে। বেলদা গ্রাম দিয়ে যাওয়ার পথে এক জায়গায় ছিল গণেশ পুজোর মণ্ডপ। মাইকে বাজছিল, ‘পাগলু, থোড়া সা করলে রোমান্স’। ঠিক তখনই ‘পাগলু’কে কাছে পেয়ে গ্রামবাসী উল্লাসে ফেটে পড়েন।

গাড়ি থেকে নেমে কাঁসাইয়ের ধারে ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় কচিকাঁচার দল দেবের পিছু নিয়েছিল। ‘রাজুদা রাজুদা’ (দেবের ডাকনাম) বলে চিৎকারও জোড়ে তারা। শাহলাজপুরের যুবক বিকাশ দোলই তো আবার সটান জিজ্ঞাসা করে বসে, “দাদা আপনার চুলের কাটটার নাম কী?” মুচকি হেসে খোকাবাবুর জবাব, “এটা দেব স্টাইল।” সন্ধে সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত প্রায় ৬৩ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে প্রচার সারেন সিক্স-প্যাক নায়ক।

পাঁশকুড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বহুচর্চিত। এক দিকে জাইদুল খানের গোষ্ঠী এবং অন্য দিকে আনিসুর রহমানের অনুগামীরা। এ দিন অবশ্য দেবের টানে এক গাড়িতেই দেখা গিয়েছে জাইদুল ও আনিসুরকে। দেবও বার্তা দিয়েছেন, “আমি রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে দলমত নির্বিশেষে কাজ করতে চাই।”

বাঘ আর গরুকে এক ঘাটে দেখে পাঁশকুড়া বলছে এটাও বোধহয় ‘দেব স্টাইল’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dev
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE