ব্যাঙ্কে নকল চেক জমা দিয়ে মেদিনীপুর কলেজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু করল পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, চেকটি জমা দেওয়া হয়েছিল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের খড়্গপুর শাখায়। কোন অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা পড়েছে, গোড়ায় তাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, এ ক্ষেত্রে কোনও দুষ্টচক্র জড়িত থাকতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্তও শুরু হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুরো বিষয়টি কোতয়ালি থানায় জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানতে পেরেই নড়েচড়ে বসেন মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে শুক্রবার কথা বলেছেন আইসি। দ্রুত যাতে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হয়, সেই নির্দেশও দেন তিনি। অন্যদিকে, আইসি’র সঙ্গে কথা হয়েছে জেলা পুলিশ সুপারেরও। পুলিশ সুপারও দ্রুত সব দিক খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। নকল চেক জমা দিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তবে, মেদিনীপুর- খড়্গপুরের মতো শহরে এমন ঘটনা বেশি ঘটেনি। জেলা পুলিশের এক অফিসারের কথায়, “বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে কোনও দুষ্টচক্র জড়িত থাকতে পারে। দুষ্টচক্র জড়িত থাকলে ওই চক্রের মূল পান্ডাকে ধরা জরুরি। তাহলেই জানা যাবে কী ভাবে কতদিন ধরে তারা এই সব কাজ করছে। চক্রের সঙ্গে কে কে যুক্ত রয়েছে।”
মেদিনীপুর কলেজে এমন ঘটনা এই প্রথম। চলতি শিক্ষাবর্ষেই স্বশাসিতের মর্যাদা পেয়েছে শহরের এই কলেজ। মেদিনীপুরের এলআইসি মোড়ের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় মেদিনীপুর কলেজের নামে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ওই শাখা থেকেই বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, এক ব্যক্তি প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার চেক জমা দিয়েছেন। কলেজের নামে ওই চেকের নম্বরও কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপরই কেলেঙ্কারি সামনে আসে। জানা যায়, জমা পড়া চেকটি নকল। যে নম্বরের চেক জমা দেওয়া হয়েছে, সেই নম্বরের চেক কলেজেই রয়েছে। এরপর জমা পড়া চেকটির ক্লিয়ারেন্স আটকে দেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। পরে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা যায়, দিন কয়েক আগেই নকল চেক জমা দিয়ে কলেজের অ্যাকাউন্ট থেকে ২ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এরপরই কলেজ কর্তৃপক্ষ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আর্জি জানান। সন্ধ্যায় পুরো বিষয়টি মেদিনীপুর কোতয়ালি থানায় জানানো হয়।
কলেজের আধিকারিকেরা ব্যাঙ্কে গিয়ে প্রয়োজনীয় খোঁজখবরও করেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, কলেজের কাছে কোন কোন নম্বরের চেক রয়েছে, তা দুষ্টচক্রের লোকজনেরা জানে। না হলে একই নম্বরের চেক তৈরি করা অসম্ভব। এখন প্রশ্ন, কলেজের কাছে কোন কোন নম্বরের চেক রয়েছে, তা দুষ্টচক্রের লোকেরা জানল কী ভাবে। এ ক্ষেত্রে সর্ষের মধ্যে ভূত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশের একটি দল সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে এবং কলেজে যাবে। কয়েকজন আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলবে। মেদিনীপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুধীন্দ্রনাথ বাগ বলেন, “নকল চেক জমা দিয়েই কলেজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিষয়টি জানতে পারি। পুরো বিষয়টি পুলিশকেও লিখিত ভাবে জানিয়েছি।” পুলিশের আশ্বাস, যত দ্রুত সম্ভব ঘটনার কিনারা করার চেষ্টা চলছে।