অবশেষে এল কাঙ্খিত ‘জয়’। বুধবার প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগপত্র পেলেন দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শঙ্কর ধাড়া। অভিযোগ, ২০০৯-এ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ যে ভুল করেছিল এত দিন তারই ‘খেসারত’ দিয়ে আসছিলেন শঙ্করবাবু।
কী ভাবে মুশকিল আসান হল? শঙ্করবাবু জানাচ্ছেন, জুন মাসের শেষে তিনি সব নথি নিয়ে দেখা করেন জেলাশাসক অন্তরা আচার্যের সঙ্গে। তারপরে জেলাশাসকই উদ্যোগী হন। জানা গিয়েছে, এ বিষয়ে সংসদের কাছে রিপোর্ট তলব করার পর নিজেই তত্পর হয়ে হলদিয়া হাসপাতালের সুপারকে নথি পাঠাতে বলেন। সুপার জেলাশাসককে শঙ্করের দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শংসাপত্র সংক্রান্ত রিপোর্ট পাঠালে জেলাশাসক তা সংসদে পাঠান। অভিযোগ, এরপরই সংসদ এক রকম বাধ্য হয় নিয়োগপত্র দিতে। জেলাশাসক এ দিন বলেন, “শঙ্করবাবু নিয়োগপত্র পাওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত।” জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের নতুন সভাপতি মানস দাস বলেন, “নথির সমস্যা মেটায় আমরা ওঁকে নিয়োগপত্র দিয়েছি।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, সুতাহাটার ধনবেড়িয়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের শঙ্কর পিতৃ-মাতৃহীন। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসারের হাল ধরবেন এই আশায় ২০০৯-এ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসেন তিনি। সরকারি শংসাপত্র অনুযায়ী একশো শতাংশ দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী হলেও সংসদ অ্যাডমিট কার্ড ও অন্যত্র তাঁকে অস্থি প্রতিবন্ধী হিসাবে নথিভুক্ত করে। ‘ভুলের’ সেই শুরু। অভিযোগ পেয়ে সংসদ শুধুমাত্র অ্যাডমিট কার্ডের ত্রুটি সংশোধন করে। মৌখিক পরীক্ষার চিঠিতেও সেই একই ভুল! অভিযোগ, সেই ভুলভুলাইয়ায় জেরে মৌখিক পরীক্ষার পরেও তাঁর ফলপ্রকাশ হয়নি। ফল জানতে তথ্য জানার অধিকার আইন, হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শঙ্কর। আদালত সংসদের ত্রুটি ধরিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্যে সংসদকে নির্দেশ দেয়। জানানো হয় তত্কালীন শিক্ষামন্ত্রীকেও।
গোটা বিষয়টি আনন্দবাজারে প্রকাশিত হয়। শঙ্করবাবুর দুঃসময়ে তাঁর পাশে থেকে লড়াই চালিয়েছেন সুতাহাটা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রণজিত্ দাস। তিনি বলেন, “এ বার ফের ওঁর হয়ে লড়ব, যাতে ২০১২ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বেতন ও অন্য সুবিধা পান।” লড়াইয়ে পাশে ছিলেন স্থানীয় মিশন আশ্রমের স্বামী বিবেকাত্মানন্দও। তিনিও মনে করেন, “সংসদ ও সরকারের উচিত শঙ্করকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।”
এপ্রিলেই ৪৫ বছর পেরিয়েছেন শঙ্কর। সংসদের নিয়োগ পেয়ে তিনি বলেন, “গ্রামের স্কুল ধনবেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াতে পারব জেনে ভাল লাগছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy