Advertisement
E-Paper

পারিবারিক বিবাদ মেটাতে জেলা পুলিশ সুপারের দারস্থ

পুত্রবধূর অত্যাচারে ঘরছাড়া হতে হয়েছে, এমনই অভিযোগ তুলে খোদ পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে ধর্নায় বসলেন বৃদ্ধ দম্পতি। সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা কাঁথির মারিশদা থানার বল্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা ত্রিবাঙ্কুর ভুঁইয়া ও তাঁর স্ত্রী আরতিদেবী ধর্না চালিয়ে যান। ওই দম্পতির আরও অভিযোগ, গ্রামের তৃণমূল নেতারা সমস্যা সমাধানের নামে সালিশি সভা বসিয়েছিল। সেখানে তাঁদের মারধর করে বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৭
ধর্নায় বৃদ্ধ দম্পতি। নিজস্ব চিত্র।

ধর্নায় বৃদ্ধ দম্পতি। নিজস্ব চিত্র।

পুত্রবধূর অত্যাচারে ঘরছাড়া হতে হয়েছে, এমনই অভিযোগ তুলে খোদ পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে ধর্নায় বসলেন বৃদ্ধ দম্পতি। সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা কাঁথির মারিশদা থানার বল্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা ত্রিবাঙ্কুর ভুঁইয়া ও তাঁর স্ত্রী আরতিদেবী ধর্না চালিয়ে যান। ওই দম্পতির আরও অভিযোগ, গ্রামের তৃণমূল নেতারা সমস্যা সমাধানের নামে সালিশি সভা বসিয়েছিল। সেখানে তাঁদের মারধর করে বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়। পুলিশে অভিযোগ জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ কুমার জৈন বলেন, “দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি ওঁদের পারিবারিক সমস্যা রয়েছে। অভিযোগ দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মারিশদা থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বল্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁয়ষট্টির ত্রিবাঙ্কুরবাবু পেশায় কৃষক। তাঁর বড় ছেলে কর্মসূত্রে কাঁথি শহরে পরিবার নিয়ে থাকেন। আর ছোট ছেলে প্রদীপ আঁকা শেখান। বছর আটেক আগে কলকাতার তরুণী শঙ্করীকে ভালবেসে বিয়ে করেন প্রদীপ। তবে বিয়ের এক বছরের মধ্যেই প্রদীপ-শঙ্করীর সম্পর্কে চিড় ধরে। শঙ্করী বাপের বাড়ি চলে যান। ২০১২ সালের ১৯ জুন মারিশদা থানায় স্বামী-শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করেন ওই তরুণী। অভিযোগ, পুলিশ তার প্রেক্ষিতে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে সমস্যা মেটাতে সালিশি সভা ডাকেন এলাকার তৃণমূল নেতারা। সেই সভায় ছিলেন কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ হৃষীকেশ গোল, প্রদীপ জানা, অশোক প্রধান, অশ্বিনী কর-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। ত্রিবাঙ্কুরবাবুর অভিযোগ, সেই সভায় তাঁর কাছ থেকে এক বিঘা জমি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে রাজি ছিলেন না বৃদ্ধ। এরপরই ত্রিবাঙ্কুরবাবু, তাঁর স্ত্রী ও ছোট ছেলে প্রদীপকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

ওই ঘটনার পর থেকে বৃদ্ধ দম্পতির ঠাঁই হয়েছিল বাড়ির কাছে নিজেদের মন্দিরে। আর ছেলে প্রদীপ মারিশদা শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। সেখানে তাঁর আঁকার স্কুলও ঈছে। প্রদীপবাবু বলেন, “ওই তৃণমূল নেতাদের মদতে আমার স্ত্রীই আমাদের ঘরছাড়া করেছে।” ওই বৃদ্ধ দম্পতির অভিযোগ, “সালিশি সভায় তৃণমূল নেতারা পার্টি অফিস তৈরি জন্য আমাকে এক বিঘা জমি লিখে দিতে বলেছিল। তা না দেওয়াতেই আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিল।” বাড়ি ফেরানো ও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে তিন বছর ধরেই মারিশদা থানার পুলিশের কাছে দরবার করেছেন ত্রিবাঙ্কুরবাবু। তাঁর অভিযোগ, পুলিশ প্রথম দিকে তাঁদের বাড়ি ফেরানোর জন্য ব্যবস্থা নিলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য ব্যবস্থা করেনি।

অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল নেতা হৃষীকেশ গোল বলেন, “শঙ্করীদেবী নয়। ত্রিবাঙ্কুরবাবু, তাঁর স্ত্রী ও ছেলে প্রদীপই শঙ্করীদেবীর উপর অত্যাচার করতেন। এমনকী তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়েও দিয়েছিলেন। গ্রামবাসীরা সালিশি সভা ডেকে শঙ্করীকে বাড়িতে ফেরানোর ব্যবস্থা করে। পঞ্চায়েত সদস্য হিসেবে আমি ওই সালিশি সভায় ছিলাম।” এমনকী জমি লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। শঙ্করীর বক্তব্য, “শ্বশুর-শাশুড়ি আমার উপর অত্যাচার করতেন। এলাকার বাসিন্দারা এভাবে আমার পাশে না থাকলে খুব অসুবিধা হত।’’ এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ত্রিবাঙ্কুরবাবুর বসতবাড়িতে একটি কাঁচাবাড়ি ও মন্দির সংলগ্ন একটি পাকা বাড়ি রয়েছে। সমস্যার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের পরামর্শেই শঙ্করীদেবী ওই মাটির বাড়িতে রয়েছেন। ওই বৃদ্ধ দম্পতি থাকতেন মন্দির সংলগ্ন পাকা বাড়িতে। ফলে ত্রিবাঙ্কুরবাবুর ঘরছাড়া হওয়ার কথা মানতে নারাজ এলাকার বাসিন্দারাই। মারিশদা থানার ওসি স্বপন ছাবড়ি বলেন, “বিষয়টি পারিবারিক। শঙ্করীদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে বধূ নির্যাতনের মামলা চলছে। ত্রিবাঙ্কুরবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকায় গিয়ে বারবার তদন্ত চালানো হলেও ঘটনার সত্যতা মেলেনি।”

tamluk kanthi sukesh kumar jain east midnapore police super
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy