Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুরসভা হবে, খুশি কোলাঘাট-মেচেদা, বেলদা

পুরসভা গঠনের জন্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আগেই। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বুধবারের ঘোষণায় পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট-মেচেদা এবং পশ্চিমের বেলদা পুরসভার গঠনের প্রক্রিয়াটি আরও এক ধাপ এগোল। এ দিন বিধানসভায় পুরমন্ত্রী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আগের সরকার অনেক পুরসভা তৈরি করেছে। সেগুলির পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। আমরা সে পথে হাটতে রাজি নই। পরিকাঠামো তৈরি করে তবেই আমরা নতুন পুরসভা তৈরি করব।” এরপরেই তিনি রাজ্যের একুশটি ভাবী পুরসভার নাম ঘোষণা করেন। সেই তালিকায় রয়েছে কোলাঘাট-মেচেদা এবং বেলদার নাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৪ ০০:৫৩
Share: Save:

পুরসভা গঠনের জন্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আগেই। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বুধবারের ঘোষণায় পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট-মেচেদা এবং পশ্চিমের বেলদা পুরসভার গঠনের প্রক্রিয়াটি আরও এক ধাপ এগোল।

এ দিন বিধানসভায় পুরমন্ত্রী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “আগের সরকার অনেক পুরসভা তৈরি করেছে। সেগুলির পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। আমরা সে পথে হাটতে রাজি নই। পরিকাঠামো তৈরি করে তবেই আমরা নতুন পুরসভা তৈরি করব।” এরপরেই তিনি রাজ্যের একুশটি ভাবী পুরসভার নাম ঘোষণা করেন। সেই তালিকায় রয়েছে কোলাঘাট-মেচেদা এবং বেলদার নাম।

রূপনারায়ণের পশ্চিম তীরে কোলাঘাট পূর্ব মেদিনীপুরের অন্যতম প্রাচীন বাণিজ্য কেন্দ্র ও জনপদ। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের মেচেদা বাজার এখন জেলার অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র। ক’য়েক কিলোমিটার ব্যবধানে কোলাঘাট ব্লকের কোলাঘাট বাজার ও মেচেদা বাজারের মধ্যে রয়েছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধুনিক উপনগরী। দুই এলাকার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে ৬ ও ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক, হাওড়া-খড়গপুর রেললাইন। বর্তমানে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা হলেও বিভিন্ন নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার কারণে এই এলাকার জনবসতি দ্রুত হারে বাড়ছে। স্থানীয়দের মত, পুরসভা গঠনের প্রায় সব রসদ রয়েছে এই দুই জনপদে। বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল নাগরিক পরিষেবার সার্বিক উন্নতির জন্য পুরসভায় উন্নীত হোক। অবশেষে সেই দাবি পূরণ হতে চলেছে।

নতুন পুরসভার তালিকায় কোলাঘাট-মেচেদার নাম থাকায় খুশির হাওয়া কোলাঘাট-মেচেদায়। কোলাঘাট শহরের বড়িশার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী অমিয় গায়েন বলেন, “কোলাঘাট পুরসভা হোক এটা আমরা দীর্ঘ দিন ধরে চাইছিলাম। পুরসভা হলে নাগরিক পরিষেবার মানের উন্নতি হবে। দাবি-পূরণ হওয়ায় রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” কোলাঘাটের বাড় বড়িশা এলাকার অসীম দাস বলেন, “কোলাঘাট পুরসভা হবে এটা অন্তত ২০ বছর ধরে শুনছি। তবে পুরমন্ত্রীর ঘোষণায় আশার আলো দেখছি।” তাঁদের দাবি, মন্ত্রীর ঘোষণা দ্রুত কার্যকর হোক।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কোলাঘাট ব্লকের কোলাঘাট বাজার সংলগ্ন কোলা ১, ২, আমলহাণ্ডা ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের মেচেদা বাজার সংলগ্ন শান্তিপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সম্পূর্ণ এলাকা ও শান্তিপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের আংশিক এলাকা নিয়ে পুরসভা গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী কোলাঘাট-মেচেদা ছাড়াও মহিষাদলকে পুরসভা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্তমান রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেন। এরপরে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে জেলা প্রশাসনের কাছে কোলাঘাট-মেচেদা এলাকার নিয়ে বিশদে জানতে চাওয়া হয়। তখন জেলা প্রশাসনের তরফে কোলাঘাট ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক প্রশাসনের কাছে প্রস্তাবিত পুর-এলাকার মৌজা সংখ্যা, আয়তন, জনসংখ্যা, কৃষি-অকৃষি এলাকার আয়তন, বাসিন্দাদের পেশাগত বিন্যাস প্রভৃতি তথ্য-সহ রিপোর্ট চাওয়া হয়। ব্লক প্রশাসন বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠায় জেলা প্রশাসনের কাছে। জেলা প্রশাসন তা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠায়। তারপরেই পুরমন্ত্রীর এই ঘোষণা।

কোলাঘাটের তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, “এতে এলাকার নাগরিক পরিষেবার মান বাড়বে বলে আশা করছি।” ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় সাহুও।

কোলাঘাট-মেচেদার পাশাপাশি পুরসভা হতে চলেছে বেলদাও। পুরসভা-প্রশ্নে দীর্ঘ দিন ধরে চলা নানা টালবাহানায় ক্ষোভ বাড়ছিল স্থানীয়দের। অবশেষে মন্ত্রীর ঘোষণায় খুশি তাঁরা। ঘোষণার পর থেকেই অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলি কৃতিত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার কৌশলে ব্যস্ত হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ প্রকৃত উন্নয়নেরই দাবি তুলেছেন।

নারায়ণগড় ব্লকের বাজার এলাকা বলেই পরিচিত বেলদা। এই বাজারকে কেন্দ্র করে মানুষের বসতি বৃদ্ধির সঙ্গেই বেলদা পেয়েছে শহরের তকমা। ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই এই শহরকে পুরসভায় উন্নীত করার তোড়জোড় শুরু হয়। পঞ্চায়েত গঠনের পরে ২০০৪-০৫ সালে পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমেই প্রস্তাব যায় জেলা থেকে রাজ্য স্তরে। তখনই পুরসভা হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়েছিল বেলদা। নানা জটিলতায় সেই গতি থমকে যাওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছিল বেলদাবাসীর। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়রি বেলদায় মুখ্যমন্ত্রী এসে ফের বেলদাকে পুরসভা করার কথা বলেছিলেন। এর পরেই গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর বেলদায় গিয়ে পুরসভা-না হওয়ায় তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তৎকালীন সাংসদ প্রবোধ পাণ্ডা।

বিস্তর ঝড়ঝাপ্টা পেরিয়ে পুরসভা হওয়ায় সিদ্ধান্তে খুশি বেলদার রাজনৈতিক মহল। বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে শেষমেষ পুরসভা হতে চলেছে। ফলে এর সিংহভাগ কৃতিত্ব নিতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাকে নস্যাৎ করে সিপিএমের দাবি, বাম আমলেই পুরসভার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল।

এই তর্কে না গিয়ে সাধারণ মানুষ চান, দ্রুত উন্নয়ন হোক এলাকার। বেলদার বাসিন্দা অম্লান জানার কথায়, “পুরসভা গঠনের পরে মানুষের জীবনযাত্রা বদলানোর আশায় থাকলাম। বেলদার উন্নয়ন হোক, এখন এটুকুই কামনা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE