Advertisement
E-Paper

পাশ করেও মেলেনি নিয়োগপত্র, ক্ষোভ

প্রাথমিক স্কুলের চাকরির পরীক্ষায় সফল হয়েও মেলেনি চাকরি। ২০০৯ সালে যে ভুল করেছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ, এখনও তারই খেসারত দিয়ে যেতে হচ্ছে দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শঙ্কর ধাড়াকে। অভিযোগ, অমানবিক ভাবে নানা অজুহাতে বারবার ঘোরানো হচ্ছে তাঁকে। সুতাহাটা থানার ধনবেড়িয়া গ্রামের এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান শঙ্করবাবু পিতৃ-মাতৃহীন। দাদা সুকুমার ধাড়ার কাছেই তাঁর বেড়ে ওঠা।

অমিত কর মহাপাত্র

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৫:০৪
শংসাপত্র হাতে শঙ্কর ধারা।—নিজস্ব চিত্র।

শংসাপত্র হাতে শঙ্কর ধারা।—নিজস্ব চিত্র।

প্রাথমিক স্কুলের চাকরির পরীক্ষায় সফল হয়েও মেলেনি চাকরি। ২০০৯ সালে যে ভুল করেছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ, এখনও তারই খেসারত দিয়ে যেতে হচ্ছে দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শঙ্কর ধাড়াকে। অভিযোগ, অমানবিক ভাবে নানা অজুহাতে বারবার ঘোরানো হচ্ছে তাঁকে।

সুতাহাটা থানার ধনবেড়িয়া গ্রামের এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান শঙ্করবাবু পিতৃ-মাতৃহীন। দাদা সুকুমার ধাড়ার কাছেই তাঁর বেড়ে ওঠা। সেই দাদা আজ পঙ্গু। দাদা-বৌদি আর তিন ভাইঝিকে নিয়ে ছ’জনের সংসার কার্যত অচল! দৃষ্টিহীন হলেও বরাবরের মেধাবী শঙ্করকেই শেষ ভরসা করেছিলেন সবাই। বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমের আবাসিক দৃষ্টিহীন শিক্ষায়তনে পড়ে মাধ্যমিকে ৭৭ শতাংশ নম্বর পান শঙ্করবাবু। বাণিজ্য শাখায় স্নাতক হয়ে ১৯৯৫ সালে এক বছরের ইলেকট্রিক মোটর বাইন্ডিং কোর্স করেন। কিন্তু, কোনও কাজ না পেয়ে দোকানে দোকানে প্লাস্টিক ব্যাগ ফেরি করা শুরু করেন তিনি। অতি সামান্য আয় হলেও নিরুপায় হয়ে সেই কাজ করেন আজও।

এ ভাবে আর কত দিন? স্থায়ী চাকরির আশায় ২০০৯ সালে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের ফর্ম পূরণ করেন শঙ্করবাবু। কিন্তু অভিযোগ, সরকারি শংসাপত্র অনুযায়ী একশো ভাগ দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও সংসদের অ্যাডমিট কার্ড ও অন্যত্র তাঁকে অস্থি প্রতিবন্ধী হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়। অভিযোগ জানানোর পরে সংসদ শুধুমাত্র অ্যাডমিট কার্ডের ত্রুটি সংশোধন করে। সহায়ক লেখকের সাহায্যে লিখিত পরীক্ষায় সফল হওয়ার পরে মৌখিক পরীক্ষার চিঠিতেও একই ভুল করে সংসদ। যার জেরে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পরেও তাঁর ফল প্রকাশ করা হয়নি।

ফলাফল জানতে চেয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করা সত্ত্বেও, তা না জানানোয় ২০১২ সালে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন শঙ্করবাবু। আদালত ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সংসদের ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য সংসদকে নির্দেশ দেয়। ১৬ এপ্রিল জেলা সংসদের সভাপতি গোপাল সাউ রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের (আইন) কমিশনারকে লিখিত ভাবে জানান, পরীক্ষাগুলিতে অন্য দৃষ্টিহীন প্রার্থীরা ২২.০৯ নম্বর পেতেই তাঁদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। সেখানে শঙ্কর ধাড়া পেয়েছেন ২৬.২৯। সংসদেরই ভুলেই তাকে অন্য বিভাগে নথিভুক্ত করা হয়েছিল। তাই শঙ্করবাবুকে প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হোক।

এর কিছু পরে জেলা প্রাথমিক সংসদে চলে আসে শঙ্করবাবুর অনুমোদন পত্র। অভিযোগ, এরপরেও সংসদের তরফে তাঁকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি। উল্টে অযথা হয়রান করা হচ্ছে। কেমন? নিয়োগপত্র আসার পরে গোপালবাবু হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপারের কাছে জানতে চান শঙ্করবাবুর প্রতিবন্ধী শংসাপত্র ঠিক কি না। দু’দিনের মাথায় সুপার তা সঠিক বলে লিখিত জবাব দেন। অভিযোগ, এরপরে সংসদ সভাপতি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে ফের ওই শংসাপত্র যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। শঙ্করবাবুর অভিযোগ, “১৯৯০ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে আমার দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শংসাপত্র পুনর্নবীকরণ করেছে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড। শংসাপত্রের মেয়াদও রয়েছে ২০২১ সাল পর্যন্ত। কিন্তু সংসদ চাকরি দিতে চায় না বলেই নানা ভাবে হেনস্থা করছে।”

হাইকোর্টের নির্দেশ এবং প্রতিবন্ধী শংসাপত্র থাকা সত্ত্বেও কেন নিয়োগপত্র দেওয়া হচ্ছে না? গোপালবাবু বলেন, “ওঁর শংসাপত্র দেখে আমাদের সন্দেহ হয়েছে। তাই মেদিনীপুর মেডিক্যালে যাচাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানকার রিপোর্ট ইতিবাচক হলেই নিয়োগপত্র দেওয়া হবে।”

সংসদের এমন ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সুতাহাটা এলাকা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রণজিৎ দাস। গত কয়েক মাস ধরে শাসক দলের এই সংসদ সদস্য শংকরবাবুর পাশে থেকে লড়াই চালাচ্ছেন। রণজিৎবাবু বলেন, “একজন প্রতিবন্ধীকে অন্যায় ভাবে বারবার এ ভাবে বিপদে ফেলা অমানবিক। তা ছাড়া, সরকারি শংসাপত্র একবার যাচাই করার পর, ফের তা অন্যত্র যাচাই করতে বলার এক্তিয়ার নেই সংসদের।” পাশে রয়েছেন মিশন আশ্রমের এক সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকাত্মানন্দ। তাঁর প্রশ্ন, “সরকারই যদি প্রতিবন্ধীদের লড়াই এ ভাবে কঠিন করে দেয়, তা হলে তাঁরা সাহায্য পাবেন কোথায়!”

এপ্রিলেই ৪৫ বছর পেরিয়েছেন শঙ্করবাবু। এখন মাঝে মধ্যে হতাশা গ্রাস করে তাঁকে। তবুও লড়াই শেষে একদিন শিক্ষক হবেন, এই আশায় যুঝে চলেছেন সুতাহাটার শঙ্কর ধারা।

amit kar mahapatra haldia sankar roy admission for teacher
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy