পরীক্ষার ফল প্রকাশে সময় লাগে ৩ মাস। কিন্তু এই নিয়মটা শুনলেই পড়ুয়ারা কিছুক্ষণ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন। ঘোর কাটতেও বেশ কিছুটা সময় লাগে। কেননা, দ্রুত ফল প্রকাশের সময়সীমা যে এক বছর! তাতেও শেষ নয়। শংসাপত্র পেতে আরও দেড়-দু’বছর সময় লাগে! কিন্তু, এতেও হেলদোল নেই কর্তৃপক্ষের।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই ফল প্রকাশে এত গড়িমসি। পরিকাঠামো তৈরি না করেই, কর্তৃপক্ষ কথায় কথায় একাধিক স্টাডি সেন্টারও তৈরির অনুমোদন দিয়েছে রাজ্যের নানা সরকারি ও বেসরকারি কলেজকে। কিন্তু তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনও পরিকল্পনা ছিল না। এমনকি পরীক্ষা বিভাগের কর্মীরাও দিনের পর দিন নানা কাজে উদাসীনতা দেখালেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হত না।
দূরশিক্ষার এই ‘হাল’ যে কাঙ্খিত নয়, তা মানছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি বদলাতে পরীক্ষা বিভাগের কর্মীদের অন্য বিভাগে বদলি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনও রকম ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না।” এ বার নিয়ম মেনে তিন মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন। দূরশিক্ষা বিভাগের কর্তা জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, “আগে কিছু সমস্যা ছিল। তাই ফল প্রকাশে খুবই দেরি হত। যে সব বিষয়ের ফল এত দিন প্রকাশ হচ্ছিল না, তা প্রকাশ করে দিয়েছি। এ বার তিন মাসের মধ্যে ফল প্রকাশ করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” ফল প্রকাশের পরপরই শংসাপত্র দিয়ে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরশিক্ষা বিভাগে বিজ্ঞান ও কলা বিভাগ মিলিয়ে ১১টি বিষয়ে এমএ, এমএসসি করার সুযোগ রয়েছে। আগে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুযোগ না থাকায় রাজ্যের বহু পড়ুয়া এখান থেকেই উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিতেন। তা দেখে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরশিক্ষা বিভাগে ছাত্রভর্তির অনুমতিও চায়। অভিযোগ, বিশেষ ভাবে খতিয়ে না দেখেই বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময়ে ২৬টি স্টাডি সেন্টার খোলার অনুমতি দিয়েছে। এখন অবশ্য অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ধরনের সুযোগ চালু হয়েছে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভর্তিতে ভাটা পড়েছে এমন নয়। গত বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এই পাঠ্যক্রমে ছাত্রভর্তি হয়েছিল ৮,২৭৫ জন।
কিন্তু, ফল প্রকাশ ও শংসাপত্র পেতে দেরি হওয়ায় অবশ্য অনেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এক ছাত্রের কথায়, “পরীক্ষা দিয়ে ফল জানতে এক বছর দুশ্চিন্তার মধ্যে কাটাতে হয়। শংসাপত্র পেতে আরও দেড় দু’বছর লাগেই। কখনও তিন বছরও সময় লেগে যায়।” ওই ছাত্রটি পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে এমএসসিতে ভর্তি হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে পরীক্ষা হয়। এক বছর পর ২০১০ সালে ফল প্রকাশিত হয়। হাতে শংসাপত্র পান ২০১৩ সালের শেষে। অর্থাত্ তিন বছর পর! তবু কেন এখানে পড়া? পড়ুয়াদের কথায়, অন্য কাজ করতে করতেও ডিগ্রি বাড়ানো যায়। তা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে রেগুলার কোর্সে আসন সংখ্যা কম থাকায় সব সময় মেধা তালিকায় ভর্তির সুযোগও মেলে না। অথচ, ডিগ্রির মর্যাদা একই। তাই ভর্তি হওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, সব সময় তাঁদের ত্রুটি থাকে এমন নয়। অনেক সময় স্টাডি সেন্টারগুলি নির্দিষ্ট সময়ে পাঠ্যক্রম শেষ করতে পারে না। ফলে পরীক্ষা কিছুটা পিছিয়ে দিতে বলে। তা ছাড়া খাতা দেখার ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের খাতা দেখতেই অনেক সময় লাগে। তারপর শিক্ষকরা সহজে এই খাতা দেখতে চান না। এ সব কারণে কিছুটা দেরি হয়।
কিন্তু, এ সব তো কর্তৃপক্ষেরই দেখার কথা। কেন উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করে ছাত্র ভর্তি নেওয়া হয় না? কেন বেশি লাভের আশায় একাধিক স্টাডি সেন্টারেরও অনুমোদন দেওয়া হয়? পরিস্থিতি দেখে, এ বার অবশ্য কর্তৃপক্ষ সব কিছুই কড়া অনুশাসনে রেখে সময়ে পরীক্ষা, ফল প্রকাশ ও শংসাপত্র দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এমনকী কোনও স্টাডি সেন্টার এক্ষেত্রে নিয়ম না মানলে তার অনুমোদনও বাতিল করে দেওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
এমনটা বাস্তবায়িত হলে দূরশিক্ষার পড়ুয়ারা যে উপকৃত হবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy