Advertisement
E-Paper

বাজারে তোলাবাজদের গুলিতে জখম ব্যবসায়ী

গুলিতে জখম হলেন এক ব্যবসায়ী। অভিযোগ, তোলাবাজদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদ করাতেই তাঁকে বাজারে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুনের চেষ্টা করা হয়। বুধবার রাতে কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের মুকুন্দপুর বাজারের এই ঘটনায় জখম শেখ সাদ্দাম নামে বছর চব্বিশের ওই যুবককে প্রথমে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০০:১৮
সাদ্দামের পরিজনেরা

সাদ্দামের পরিজনেরা

গুলিতে জখম হলেন এক ব্যবসায়ী। অভিযোগ, তোলাবাজদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদ করাতেই তাঁকে বাজারে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুনের চেষ্টা করা হয়। বুধবার রাতে কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের মুকুন্দপুর বাজারের এই ঘটনায় জখম শেখ সাদ্দাম নামে বছর চব্বিশের ওই যুবককে প্রথমে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

ঘটনার পরই সাদ্দামের বাবা শেখ রুকুদ্দিন পুলিশের কাছে দশজনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন। কাঁথি থানার আইসি সুবীর রায় জানান, “পুলিশ ইতিমধ্যেই তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুষ্কৃতীরা তৃণমূল আশ্রিত। তৃণমূলের জেলা সম্পাদক মামুদ হোসেন বলেন, “মুকুন্দপুর বাজারে বুধবার রাতের গুলি চালনার ঘটনায় জড়িতরা সকলেই সমাজবিরোধী।” তবে তৃণমূলের সঙ্গে ওই দুষ্কৃতীদের কী সম্পর্ক? এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাদ্দামের বাবা প্রতিবন্ধী শেখ রুকুদ্দিনের মুকুন্দপুর বাজারে মাংসের দোকান রয়েছে। আর সাদ্দাম নিজে একটি গাড়ি কিনে তা ভাড়া খাটায়। রুকুদ্দিন জানান, বুধবার রাত নটা নাগাদ মুকুন্দপুর বাজার থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে চৌধুরীবাড়ের বাড়ি থেকে নমাজ পড়ার জন্য বেরোচ্ছিলেন সাদ্দাম। সেই সময় মুকুন্দপুর বাজারের বাবলা দে, মিঠু দাস, চন্দন মাইতি নামে কয়েকজন যুবক তাঁকে ডেকে নিয়ে যায়। ওই যুবকেরা এলাকায় তোলাবাজ হিসেবেই পরিচিত। জানা গিয়েছে, সাদ্দামকে তারা নিজেদের ডেরা যাত্রাদলের বুকিং অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ তর্কাতর্কি চলার পর রাত দেড়টা নাগাদ তারা সাদ্দামকে গুলি করে। গুলির শব্দ পেয়ে ছুটে আসেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে খবর পৌঁছায় সাদ্দামের বাড়িতেও। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় সাদ্দাম রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে রয়েছে।

কিন্তু হঠাৎ গুলি কেন? এ নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও নানা মত রয়েছে। চৌধুরীবাড় গ্রামের সিপিএমের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য শেখ দানিশের অভিযোগ, “মুকুন্দপুর বাজারে যাত্রা দলের বুকিং অফিসে বাবলা দে, মানা নায়ক, মিঠু দাস-সহ কয়েকজন দুষ্কৃতী সন্ধ্যার পর থেকে মদের আসর বসায়, বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করে। তারই প্রতিবাদ করেছিল সাদ্দাম। সাদ্দামের পরিবার থেকে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রুকুদ্দিনের দোকান থেকে মাংস কিনে টাকা না দেওয়ার জন্য সাদ্দামের সঙ্গে ওই দলের কয়েকজন যুবকের গোলমাল হয়েছিল। এছাড়াও মুকুন্দপুর বাজারে সম্প্রতি একটি দোকানে চুরির ঘটনায় একজনকে দোষী সাব্যস্ত করে মারধর করে জোর করে টাকা আদায়ের ঘটনারও প্রতিবাদ করেছিল সাদ্দাম। এলাকায় দুষ্কৃতীদের অসামাজিক কাজে বাধা দিয়ে খুন হতে হয়েছিল দত্তপুকুরের সৌরভ চৌধুরীকে। সাদ্দামের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, এলাকায় তোলাবাজদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদ করায় সেই আক্রোশেই সাদ্দামের উপর এমন হামলা হয়েছে।

বনধে সুনসান মুকুন্দপুর বাজার।

দিন কয়েক আগে দেশপ্রাণ ব্লকের বাড়চণ্ডীভেটি গ্রামে তৃণমুলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গুলি চলেছিল রথের মেলায়। জখম হয়েছিল মেলায় ঘুরতে আসা দীপক সাউ নামে এক কিশোর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুকুন্দপুর বাজারে গুলিচালনার ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের সঙ্গেও যোগ রয়েছে তৃণমূলের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুষ্কৃতীরা এক সময় এক কংগ্রেস নেতার আশ্রয়ে ছিল। তবে গত লোকসভা ভোটের আগে ওই নেতা তৃণমূল যোগ দিলে ওই দুষ্কৃতীরাও তৃণমূলে নাম লেখায়। এমনকী মুকুন্দপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক ও তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য অঞ্জন দে-র প্রচ্ছন মদত থাকায় ওই দুষ্কৃতীরা নিজেদের ডেরায় তৃণমূলের পতাকা টাঙিয়ে মুকুন্দপুর বাজারে অসামাজিক কাজ করে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক অঞ্জন দে বলেন, “সাদ্দামের সঙ্গে ওইসব দুষ্কৃতীদের কী নিয়ে বিরোধ তা আমি জানি না।” এমনকী দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেছেন। দেশপ্রাণ পঞ্চায়ের সমিতির সভাপতি তরুণ জানা বলেন, “দুষ্কৃতীরা যে দলেরই আশ্রয়ে থাকুক না কেন পুলিশ যেন নিরপেক্ষ তদন্ত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে।” সাদ্দাম গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে মুকুন্দপুর বাজার ব্যবসায়ীরা বৃহস্পতিবার বাজারে বনধ্ পালন করেছেন।

ছবি: সোহম গুহ।

subrataguha kanthi extortion bisinessmanshot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy