Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বৈঠকে অখিল-শিশির, বার্তা ঐক্যের

বিজেপি-র ভরা সময়ে দলে বড় ভাঙনের আশঙ্কা, অন্য দিকে সারদা-কাণ্ডে নাজেহাল দশা! এই পরিস্থিতিতে কোনঠাসা হয়ে দলের নীচু তলায় কর্মীদের মনোবল ফেরাতে পূর্ব মেদিনীপুরে দলের কোর কমিটির সভায় তৃণমূলের ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরার চেষ্টা করলেন জেলার যুযুধান দুই শিবিরের দুই নেতা শিশির অধিকারী এবং অখিল গিরি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:১৪
Share: Save:

বিজেপি-র ভরা সময়ে দলে বড় ভাঙনের আশঙ্কা, অন্য দিকে সারদা-কাণ্ডে নাজেহাল দশা! এই পরিস্থিতিতে কোনঠাসা হয়ে দলের নীচু তলায় কর্মীদের মনোবল ফেরাতে পূর্ব মেদিনীপুরে দলের কোর কমিটির সভায় তৃণমূলের ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরার চেষ্টা করলেন জেলার যুযুধান দুই শিবিরের দুই নেতা শিশির অধিকারী এবং অখিল গিরি।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশিরবাবুই এ দিনের বৈঠক ডেকেছিলেন। হঠাৎ কেন সভা? শিশিরবাবু বলেন, “দলকে আরও শক্তিশালী করার জন্যই এই বৈঠক। বৈঠকে অখিলবাবু-সহ সকলেই ছিলেন। সবাই মতামত দিয়েছেন। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি। দলের বৈঠকের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে কিছু বলব না।” শিশিরবাবু কিছু বলতে না চাইলেও তৃণমূলের অন্দরের খবর, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, আর নয় এ বার পূর্বে দলের কোন্দলে দাঁড়ি টানার সময় এসেছে। তারপরই বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয় বলে তৃণমূলের একটি সূত্রে দাবি।

দলীয় অফিসের বাইরে তমলুক শহর সংলগ্ন একটি বেসরকারি অতিথিশালায় এ দিনের বৈঠক হয়। তাতে শিশিরবাবুর সঙ্গেই দেখা গেল অখিল গিরি-সহ দুই শিবিরের নেতাদের। ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, বিধায়ক শিউলি সাহা, বিপ্লব রায়চৌধুরী, অমিয় ভট্টাচার্য। যাঁরা জেলায় শিশিরবাবুর বিরোধী শিবিরের বলেই পরিচিত। একই ভাবে উপস্থিত ছিলেন অর্ধেন্দু মাইতি, ফিরোজা বিবি, বনশ্রী মাইতি, সুকুমার দে, জেলা সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল। যাঁরা শিশিরবাবু অনুগামী বলেই পরিচিত। তবে ছিলেন না তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। কেন? শিশিরবাবুর উত্তর, “উনি অন্য কাজে ব্যস্ত আছেন।”

প্রায় আট মাস আগে কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলীয় সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদে শিশির অধিকারীর পাশাপাশি জেলা কার্যকরী সভাপতি পদে বসিয়েছিলেন অখিল গিরিকে। অধিকারী পরিবারের বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত অখিলবাবুকে ওই দায়িত্ব দেওয়ার পরেই জেলা তৃণমূলের শিবিরের দ্বন্দ্ব আরও প্রকাশ্যে আসে। গত জুলাইয়ে তমলুকের নিমতৌড়িতে দলের কর্মিসভায় অখিলবাবুকে বক্তব্য রাখতে বাধা দেওয়ায় তিনি সভা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। দলেরই একাংশ কর্মীর বিরুদ্ধে অখিলের অনুগামী হলদিয়ার বিধায়ক শিউলি সাহার উদ্দেশে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগও ওঠে।

এরপর থেকেই দলের জেলা সভাপতির ডাকা একাধিক কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থেকেছেন অখিলবাবু-সহ তাঁর অনুগামীরা। দলের সভার আয়োজন নিয়েও তৃণমূলের দুই শিবিরের ঠান্ডা লড়াই অব্যাহত থেকেছে। এ দিন বৈঠকের পরে অখিলবাবু দাবি করেন, “আমাদের মধ্যে কখনও তিক্ততা ছিল না। দলগত ভাবে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা সবাই এক, আজকের বৈঠকে আমরা সেটা প্রমাণ করলাম।”

শুভেন্দুবাবু ও শিশিরবাবুদের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা নিয়ে অখিলবাবু বলেন, “এটা নিছক অপপ্রচার। আমরা নিশ্চিত এই জেলায় কেউ তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাবেন না।” সিবিআইকে সামনে রেখে দলের বিরুদ্ধে যে অপ্রপচার চলছে তাঁর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলনের ডাক দেন পূর্ব মেদিনীপুরের দুই নেতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE