Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বৃথা যায়নি আবেদন, বিয়ের প্রীতিভোজে রক্তদান অতিথিদের

প্রীতিভোজে এসে রক্তদান! শুক্রবার ছেলের বিয়ের প্রীতিভোজে আমন্ত্রিত অতিথিদের গড়বেতার সুনীল পাড়ুই কর জোড়ে আবেদন জানান, আগে রক্ত দিন। পরে ভোজে অংশ নিন। সেই আবেদন বৃথা যায়নি। প্রায় ৩০০ জন আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে ৫১ জন রক্ত দিয়েছেন। যা দেখে অবাক বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে রক্ত নিতে আসা নার্স ও চিকিৎসকেরাও।

বিয়ে বাড়িতেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন। —নিজস্ব চিত্র।

বিয়ে বাড়িতেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন। —নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০১:৩৩
Share: Save:

প্রীতিভোজে এসে রক্তদান!

শুক্রবার ছেলের বিয়ের প্রীতিভোজে আমন্ত্রিত অতিথিদের গড়বেতার সুনীল পাড়ুই কর জোড়ে আবেদন জানান, আগে রক্ত দিন। পরে ভোজে অংশ নিন। সেই আবেদন বৃথা যায়নি। প্রায় ৩০০ জন আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে ৫১ জন রক্ত দিয়েছেন। যা দেখে অবাক বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে রক্ত নিতে আসা নার্স ও চিকিৎসকেরাও।

থ্যালাসেমিয়া নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সুনীলবাবুর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা শহর ঘেঁষা মোলডাঙাতে। যাঁকে সকলে থ্যালাসেমিয়া প্রচার পাগল লোক বলেই জানেন। সুনীলবাবু ট্রেনে যাচ্ছেন। সহযাত্রীর সঙ্গে একথা, সে কথা-র মাঝে ঠিক থ্যালাসেমিয়া প্রসঙ্গ টেনে আনবেন। থ্যালাসেমিয়া নিয়ে বুঝিয়ে তবে ছাড়বেন। কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণ ফুরসৎ মিলেছে। ঠিক লোক খুঁজে নিয়ে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে দু’চার কথা বলে ছাড়বেন। এ যেন তাঁর রক্তে ঢুকে গিয়ছে। ছেলে তন্ময়ের জন্মের পর তিনি জানতে পেরেছিলেন, ছেলের থ্যালাসেমিয়া কেরিয়ার। সন্তান যাতে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত না হয়, সে জন্য বিয়ে দেওয়ার আগে মেয়ের রক্ত পরীক্ষা করাতেই হবে। পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তারপর থেকে তিনি নিজেই সেই প্রচার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। তৈরি করে ফেলেন মোলডাঙা শ্যামা সেবায়তন। চারিদিকে নানা অনুষ্ঠানে ঘুরে ফিরে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে প্রচার চালান। মানুষকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। শুধু ক্লাব বা সংগঠন কেন, প্রতিটি মানুষেরও আনন্দ অনুষ্ঠানে রক্তদান করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেন। আর পাঁচটা সুখাদ্যের মতো এটাকে অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসাবে জুড়তে পারেননি তিনি। এবার সুযোগ এসেছে নিজের ক্ষেত্রে। ছেলে তন্ময়ের বিয়ে। বিয়ের কার্ডেও রক্তদানের গুরুত্বের কথা লেখা রয়েছে। শনিবার ছিল প্রীতিভোজ। প্রীতিভোজে আমন্ত্রিতদেরও রক্তদানের আবেদন করা হয়েছিল। খড়্গপুর আআইআইটি-র একটি প্রকল্পে কাজ করেন বিষ্ণুপুরের বসিন্দা দীপেন্দু মণ্ডল। ট্রেনে যাতায়াতের সময় থ্যালাসেমিয়া নিয়ে আলোচনার সূত্রেই যোগাযোগ। দীপেন্দুবাবু বলেন, “আমি ৩৯ বছরে বহু বিয়ে বাড়িতে গিয়েছি। কিন্তু এমনটা দেখিনি। আনন্দে নিজেও রক্ত দিয়েছি। ভাবতেও অবাক লাগে, প্রত্যন্ত এলাকার একজন সাধারণ কৃষক কিভাবে উনি এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।” এক বেসরকার সংস্থার কর্মী সুজিত মণ্ডল বলেন, “সুনীলবাবুর সঙ্গে ট্রেনে যাতায়াতের পথেই আমার পরিচয়। ওঁনার কাছ থেকেই থ্যালাসেমিয়া নিয়ে অনেক কিছু শুনেছি। কিন্তু প্রীতিভোজে এমনটা করতে পারেন ভাবতে পারিনি। তাই আমিও রক্ত দিয়েছি।”

নব দম্পতি অবশ্য রক্ত দেননি। নববধূ ওড়িশার ভদ্রকের বাসিন্দা গৌরীদেবী রক্ত দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সকলেই তাঁকে রক্ত দিতে বারণ করেন। কারণ, নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে হয়। তাতে শরীরে ধকল যায়। সেক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তবে নব দম্পতি সকল রক্তদাতাকে চন্দনের টিপ দিয়ে বরণ করেছেন। প্রীতিভোজে নব দম্পতি সেজেগুজে বসে রয়েছেন, আমন্ত্রিতরা তাঁদের হাতে উপহার তুলে দিচ্ছেন, সকলে এটাই দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রক্তদানটাই বড় উপহার বলে মনে করেন সুনীলবাবু। তাঁর কথায়, “আমার এই কাজ দেখে যদি একজনও অনুষ্ঠানবাড়িতে রক্তদানের আয়োজন করেন তাহলেই উদ্যোগ সফল।”

প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন জেলা হিমঘর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সুনীল রাণাও। তাঁর কথায়, “বিয়ের অনুষ্ঠানে রক্তদানের দৃশ্য এই প্রথম দেখলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE