Advertisement
E-Paper

ব্যাগ ভর্তি টাকা পেয়েও ফেরালেন কন্ডাক্টর-খালাসি

দিনে এক জনের রোজগার দু’শো টাকা, অন্য জনের আড়াইশো। ফাঁকা বাসে ব্যাগ ভর্তি টাকা দেখে তাই প্রথমে কিছুটা থতমতই খেয়ে গিয়েছিলেন ওঁরা। তার পর বোঝেন, কোনও যাত্রী ব্যাগ ফেলে নেমে গিয়েছেন। সেই ব্যাগ আগলে রেখে পরে গুনে-গুনে মেদিনীপুর পুলিশের হাতে ৭৭,৮০০ টাকা ফিরিয়ে দিলেন বাসের কন্ডাক্টর মুক্তিপদ মাহাতো ও খালাসি কালীপদ দোলই।

সৌমেশ্বর মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩৬
টাকা ফেরানোর পর। বাসের কন্ডাক্টর মুক্তিপদ (বাঁদিকে) ও খালাসি কালীপদ।  নিজস্ব চিত্র

টাকা ফেরানোর পর। বাসের কন্ডাক্টর মুক্তিপদ (বাঁদিকে) ও খালাসি কালীপদ। নিজস্ব চিত্র

দিনে এক জনের রোজগার দু’শো টাকা, অন্য জনের আড়াইশো।

ফাঁকা বাসে ব্যাগ ভর্তি টাকা দেখে তাই প্রথমে কিছুটা থতমতই খেয়ে গিয়েছিলেন ওঁরা। তার পর বোঝেন, কোনও যাত্রী ব্যাগ ফেলে নেমে গিয়েছেন। সেই ব্যাগ আগলে রেখে পরে গুনে-গুনে মেদিনীপুর পুলিশের হাতে ৭৭,৮০০ টাকা ফিরিয়ে দিলেন বাসের কন্ডাক্টর মুক্তিপদ মাহাতো ও খালাসি কালীপদ দোলই।

কী ভাবে বাসে এল ওই ব্যাগ?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ব্যাগটির মালিক বর্ধমানের মঙ্গলকোটের বাসিন্দা বুদ্ধদেব মণ্ডল। কুলটিকরির লাউদহ ভিএসটি বিদ্যাপীঠের শিক্ষক তিনি, আবার তাঁর স্ত্রী ও বন্ধুর নামে বাসও রয়েছে। শনিবার রোহিণী এলাকার একটি ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে যাবেন বলে মেদিনীপুরের জগন্নাথ মন্দির থেকে খড়্গপুরগামী বাসে চাপেন তিনি। কিন্তু বাস থেকে নামার সময়ে ব্যাগটা নিতেই ভুলে যান।

খড়্গপুর থেকে রোহিণীর বাসে চাপার সময়ে তাঁর ব্যাগের কথা মনে পড়ে। তৎক্ষণাৎ বাস থেকে নেমে অটো ধরে তিনি খড়্গপুর বাসস্ট্যান্ডে ফিরে আসেন।

কিন্তু ততক্ষণে স্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে গিয়েছে বাসটি। বেগতিক বুঝে বুদ্ধদেববাবু তাঁর বন্ধু, কোতোয়ালি থানার অফিসার শুভাশিস দত্তকে বিষয়টি জানান। শুভাশিসবাবু মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ওই বাসে খোঁজখবর করতে যেতেই কন্ডাক্টর এসে তাঁর হাতে টাকার ব্যাগ তুলে দেন।

শালবনির কুমিরগাঁথা গ্রামের বছর পঁয়ত্রিশের মুক্তিপদর কথায়, “আমাদের ঘরে অভাব রয়েছে। তাই বলে লোকের ফেলে যাওয়া টাকায় হাত দেওয়ার কথা ভাবতেও পারি না।”

বাসের খালাসি, বছর ছেচল্লিশের কালীপদবাবু মেদিনীপুর শহরের নতুনবাজার মিনি মার্কেট এলাকার বাসিন্দা। মা, স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার, অনটন নিত্যসঙ্গী। তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রাণী দোলই বলেন, “খুব কষ্টে সংসার চালায় আমার স্বামী। তবে অন্যের জিনিস ছুঁয়েও দেখে না। মাথা উঁচু করে বাঁচে।” দু’জনের কারও সঙ্গেই অবশ্য বুদ্ধদেববাবুর দেখা হয়নি। তবে দুই বাসকর্মীর সততায় যে তিনি মুগ্ধ, তা-ও তিনি জানাতে ভোলেননি। শিক্ষকের কথায়, “ওঁদের সততা সত্যিই শিক্ষণীয়।”

বুদ্ধদেববাবুর সঙ্গে দুই বাসকর্মিীর দেখা না হলেও তাঁর বন্ধু শুভাশিসবাবু কিন্তু ব্যাগ হাতে পেয়েই দু’জনকে মিষ্টি খেতে এক হাজার টাকা দিয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, “আমরা জানি, বাসে অনেক খারাপ ঘটনাও ঘটে। কিন্তু বাসে কাজ করা সবাই যে খারাপ নন, এই ঘটনা তারই প্রমাণ।”

muktipada mahato bag of money man returns bag of money midnapore soumeswar mondal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy