Advertisement
E-Paper

বাড়ি ঢুকতে বাধা নেতাই অভিযুক্তকে

বাবার মৃত্যুতেও ‘গণহত্যা’-য় অভিযুক্ত সিপিএম কর্মীকে ছাড় দিলেন না নেতাইবাসী। তাই প্যারোলে ছাড়া পেয়েও মঙ্গলবার রাতে বাবার শেষকৃত্যে যোগ দেওয়া হল না নেতাই গ্রামের মণ্ডল পাড়ার বাসিন্দা শুভেন্দু মণ্ডল ওরফে শুভেনের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:১৪

বাবার মৃত্যুতেও ‘গণহত্যা’-য় অভিযুক্ত সিপিএম কর্মীকে ছাড় দিলেন না নেতাইবাসী। তাই প্যারোলে ছাড়া পেয়েও মঙ্গলবার রাতে বাবার শেষকৃত্যে যোগ দেওয়া হল না নেতাই গ্রামের মণ্ডল পাড়ার বাসিন্দা শুভেন্দু মণ্ডল ওরফে শুভেনের।

মঙ্গলবার রাতে নেতাই গ্রামে ঢোকার মুখে শুভেনকে নিয়ে আসা পুলিশের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভে সামিল হন নেতাই-কাণ্ডে নিহতদের পরিজন ও আহতেরাও। ‘খুনি শুভেন দূর হঠো’ বলে শ্লোগানও দেওয়া হয়। গ্রামবাসীদের বাধায় শেষ পর্যন্ত শুভেনকে লালগড় থানায় ফিরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাঁকে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে এই ঘটনার পিছনে শাসক দলের রাজনীতি রয়েছে বলে মনে করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএমের বিনপুর জোনাল কমিটির ভারপ্রাপ্ত নেতা সুশান্ত কুণ্ডু বলেন, “অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা। বিচারে এখনও শুভেন দোষী সাব্যস্ত হননি। আদালতের নির্দেশেই তিনি গ্রামে এসেছিলেন। শাসক দলের মদতেই কিছু লোক শুভেনকে ঢুকতে দেননি।”

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের মার্চে যৌথ বাহিনীর গুলিতে নিহত হন মাওবাদী নেতা শশধর মাহাতো। ওই সময় ভাইয়ের শেষকৃত্যে ও পরে পারলৌলিক ক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার জন্য দু’বার প্যারোলে ছাড়া পেয়ে লালগড়ের আমলিয়া গ্রামে গিয়েছিলেন জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতো। সুশান্তবাবুর প্রশ্ন, “শশধর তো প্রশাসনের চোখে রাষ্ট্রদ্রোহী ছিলেন। ছত্রধরের বিরুদ্ধেও একাধিক রাষ্ট্রদ্রোহ ও হামলা-নাশকতার অভিযোগ রয়েছে। বিচারাধীন বন্দি ছত্রধর যদি প্যারোলে ছাড়া পেয়ে ভাইয়ের শেষকৃত্যে যোগ দিতে পারেন, তাহলে শুভেন কেন পারবেন না?” শুভেনকে গ্রামে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়ে নেতাই গ্রামের বাসিন্দা তথা লালগড় ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি তন্ময় রায়ের সাফাই, “মঙ্গলবার রাতে আমি গ্রামে ছিলাম না। নেতাই গণহত্যার বীভত্‌সতা এখনও বাসিন্দারা ভুলতে পারেন নি। গ্রামবাসীদের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভের কারণ এটাই। এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই।” নেতাই শহিদ স্মৃতি রক্ষা কমিটির সভাপতি দ্বারকানাথ পণ্ডা বলেন, “আমি গ্রামে নেই। বারাণসীতে বেড়াতে এসেছি। মঙ্গলবার রাতের ঘটনা শুনেছি। এমন ঘটনা না ঘটলেই ভাল হত।”

নেতাইয়ের ঘটনার পর থেকেই গ্রামের সিপিএম কর্মী-সমর্থক পরিবারগুলি কার্যত একঘরে।

মঙ্গলবার সকালে গ্রামের বাড়িতে শুভেনের বাবা অজিত মণ্ডলের বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয়। বাবার শেষকৃত্যে যোগ দিতে চেয়ে এ দিনই আইনজীবীর মাধ্যমে মেদিনীপুরের বিশেষ জেলা ও দায়রা আদালতে আবেদন করেন শুভেন। বাবার শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার জন্য শুভেনকে চার ঘণ্টার জন্য প্যারোলে ছাড়ার নির্দেশ দেন বিচারক। কিন্তু শুভেনকে কিছু গ্রামবাসী ঢুকতে বাধা দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত রাতে গ্রামের লাগোয়া কংসাবতীর চরে অজিতবাবুর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন তাঁর বড় ছেলে তরুণ মণ্ডল। শুভেনের স্ত্রী পেশায় আশাকর্মী তনুশ্রী মণ্ডল বলেন, “শ্বশুরমশাইয়ের শেষকৃত্যে আমার স্বামী যোগ দিতে পারেন নি।”

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে সিপিএমের সশস্ত্র শিবির থেকে গুলি চালনার ঘটনায় নিহত হন চার মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসী। ওই বছরেই শুভেন-সহ লালগড়ের ১২জন সিপিএম নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে সিবিআই। পরে চলতি বছরে গ্রেফতার হন ঘটনার মূল অভিযুক্ত সিপিএমের বিনপুর জোনাল সম্পাদক অনুজ পাণ্ডে-সহ আরও সাত সিপিএম নেতা-কর্মী। আরও এক অভিযুক্ত সিপিএম নেত্রী ফুল্লরা মণ্ডল মেদিনীপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এই মামলার বিচার চলছে মেদিনীপুরের বিশেষ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে।

netai mass murder cpm leader subhen mondal objection to enter jhargram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy