বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদানের টাকা না পাওয়ায় সিপিএম পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের দরজায় তালা মেরে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল সমর্থকরা। বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ব্লক বিষ্ণুবাড়-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। এ দিন ওই গ্রামপঞ্চায়েতের অধীনস্থ দরজা গ্রামের প্রায় একশো জন তৃণমূল সমর্থক বেলা ১২ টা নাগাদ দলীয় পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত চলে বিক্ষোভ। পঞ্চায়েত অফিসের প্রবেশ পথের দরজায় তালা মারা ও বিক্ষোভের জেরে অফিসের ভিতরে পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান সহ অন্যান্য কর্মীরা আটকে পড়েন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে তমলুক থানার পুলিশ। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে বিক্ষোভ ওঠে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের অগস্ট মাসে পাঁশকুড়ার রানিহাটিতে কাঁসাই নদীর বাঁধ ভাঙার জেরে পাঁশকুড়া ও তমলুক ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা তিন দফায় বন্যার কবলে পড়েছিল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এলাকার অধিকাংশ বাড়ি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে ১৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় মোট ১০৩৪ টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে বাড়ি তৈরির জন্য তালিকা অনুমোদন হয়। এর মধ্যে অন্যান্য গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ৮৩০ টি পরিবারকে বাড়ি তৈরির জন্য টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র দরজা গ্রামের ২০৪ টি পরিবার ওই টাকা এখনও পায়নি। বৃহস্পতিবারের এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য আনোয়ারা বিবির স্বামী নূর ইসলাম মল্লিকের অভিযোগ, “বাড়ি তৈরির জন্য সরকারি অনুদানের টাকা পাওয়ার জন্য বারবার গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধানের কাছে দাবি জানানো সত্ত্বেও এখনও টাকা মেলেনি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী বিক্ষোভ দেখাতে এসেছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা সালেহা বিবি, গুলশন বিবি, আরতি ঘোড়ইরাও বলেন, “বন্যার পর প্রায় একবছর কেটে গেল। আমাদের আশপাশের গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তরা বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছে। কিন্তু আমরা পেলাম কই?” এ দিন গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে তালা মারার জেরে আটকে পড়েন উপ-প্রধান প্রাণকৃষ্ণ জানা। তিনি বলেন, “দরজা গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ব্লক প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ওই গ্রামেরই বেশ কিছু বাসিন্দা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় কারচুপির অভিযোগ তুলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল। তার জেরেই সরকারি অনুদানের টাকা বিলি বন্ধ রয়েছে জানি। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।”
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য অবশ্য বলেন, “বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পুনর্নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদানের টাকা যথাসময়ে বিলির জন্য ব্লক প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা বারবার বলা সত্ত্বেও ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছ থেকে দরজা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর ঠিক সময়ে পাওয়া যায়নি। তাই সরকারি অনুদানের টাকা দেওয়া যায়নি।” এমনকী ওই খাতে বরাদ্দ টাকা নির্দিষ্ট সময়ে খরচ না হওয়ায় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দ টাকা ফেরত চলে গিয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে তাঁর আশ্বাস, “ওই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা অনুযায়ী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর বুধবার আমাদের হাতে এসেছে। টাকা পেতে ফের ত্রাণ দফতরের কাছে চিঠি দেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy