Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বরাদ্দ কম, খুঁড়িয়ে চলছে পূর্বের শিশু শ্রমিক স্কুল

টালির চাল দেওয়া এক কামরার একটা ক্লাব ঘর। সেখানে গাদাগাদি করে বসে দু’টি শ্রেণির ৩৫ জন ছাত্রছাত্রী। দুই ক্লাসের দুই শিক্ষক একসঙ্গেই পড়াচ্ছেন তাদের। এমন ছবিই চোখে পড়ল তমলুকের উত্তর সাউতানচক গ্রামের সরকারি শিশু শ্রমিক স্কুলে।

তমলুকের উত্তর সাউতানচক জাতীয় শিশু শ্রমিক শিক্ষানিকেতনে একই ঘরে চলছে একাধিক শ্রেণির ক্লাস।  —নিজস্ব চিত্র।

তমলুকের উত্তর সাউতানচক জাতীয় শিশু শ্রমিক শিক্ষানিকেতনে একই ঘরে চলছে একাধিক শ্রেণির ক্লাস। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০১:০২
Share: Save:

টালির চাল দেওয়া এক কামরার একটা ক্লাব ঘর। সেখানে গাদাগাদি করে বসে দু’টি শ্রেণির ৩৫ জন ছাত্রছাত্রী। দুই ক্লাসের দুই শিক্ষক একসঙ্গেই পড়াচ্ছেন তাদের। এমন ছবিই চোখে পড়ল তমলুকের উত্তর সাউতানচক গ্রামের সরকারি শিশু শ্রমিক স্কুলে। এই সমস্যা এক বা দু’বছরের নয়। ক্লাব ঘরে এ ভাবে ঠেসাঠেসি করে ক্লাস করার রীতি চলছে গত ১৮ বছর ধরে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন ব্লকে মোট ৩০টি শিশু শ্রমিক বিদ্যালয় রয়েছে। অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে যে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা দিয়ে খরচ মেটানো প্রায় অসম্ভব। সেই কারণেই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা ক্লাস, প্রয়োজনীয় পোশাক-সহ অনেক ব্যবস্থাই অমিল। দরিদ্র পরিবারের পড়ুয়াদের পড়াশোনার স্বার্থে বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি তুলেছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ইটভাটা, টালিভাটা, বিড়ি শ্রমিক, গাড়ির গ্যারাজ-সহ নানা কাজে যুক্ত শিশু ও শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করা ও হাতের কাজ শিখিয়ে পুনর্বাসনের জন্য প্রতিটি ব্লকেই এক বা একাধিক শিশু শ্রমিক স্কুল চালু রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম দফতরের অর্থ সাহায্যে শিশু শ্রমিক প্রকল্পে (ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার প্রজেক্ট বা সংক্ষেপে এনসিএলপি) এই স্কুলগুলি চলে। শিশু শ্রমিক স্কুলের জন্য স্থায়ীভাবে বিদ্যালয় গড়ার নিয়ম নেই। তবে ক্লাস চালানোর জন্য ঘরভাড়া ও বিদ্যুৎ খরচ বাবদ মাসিক এক হাজার টাকা বরাদ্দ থাকে। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়াশোনার জন্য তিনজন শিক্ষক (ইনস্ট্রাক্টর) ও একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থাকার নিয়ম রয়েছে। এদের মধ্যে একজন শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ শেখানোর জন্য নিযুক্ত। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা মাসিক ৪ হাজার ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী মাসিক ২৪০০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। প্রতিটি স্কুলে ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করতে পারবে। ওই ছাত্র-ছাত্রীরা ১৫০ টাকা করে মাসিক ভাতা পেয়ে থাকে। স্কুলের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর এককালীনভাবে ওই জমা টাকা দেওয়া হয়।

তমলুক ব্লকের উত্তর সাউতানচক গ্রামে নেতাজি মিলন সঙ্ঘের ঘর ভাড়া নিয়ে গত ১৯৯৬ সাল থেকে চলছে উত্তর সাউতানচক জীবনকৃষ্ণ জাতীয় শিশু শ্রমিক শিক্ষানিকেতন। স্কুলে গিয়ে দেখা যায় ইটের দেওয়াল ও টালির চালার পুরনো ঘরে একটি ঘরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস চলছে। পাশেই সদ্য নির্মিত একটি পাকা ঘরে চলছে দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস। ওই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৪৭ জন ছাত্র-ছাত্রী। বিদ্যালয়ের সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর উত্তমকুমার সামন্ত বলেন, “বিদ্যালয়ের তিনটি ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের গতবছর পর্যন্ত একটি ঘরে বসতে হত। এ বছরই ক্লাবের উদ্যোগে আলাদা ঘর তৈরি হওয়ায় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদাভাবে বসার ব্যবস্থা করা গিয়েছে।” কিন্তু মাত্র হাজার টাকায় ঘর ভাড়া পাওয়া ও তার মধ্যেই বিদ্যুতের বিল মেটানো সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে এক ঘরেই গাদাগাদি করে বসতে হয় পড়ুয়াদের।

পড়াশোনার পরিকাঠামোর সমস্যার পাশপাশি হাতের কাজ শেখার শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য অর্থ দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, দু’বছর যাবৎ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পোশাক দেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। তমলুক ব্লকের উত্তর সাউতানচকের ক্লাবঘর নিয়ে স্কুল চললেও পাশের নন্দকুমার ব্লকের দুটি শিশুশ্রমিক স্কুল চলছে ব্যক্তিগত বাড়ি ভাড়া নিয়ে। পাঁশকুড়া ব্লকেও স্কুল চলছে বাড়িভাড়া নিয়ে। এগরা পৌর শিশু শ্রমিক স্কুল চলছে পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি হলে। ওই শিশু শ্রমিক স্কুলের সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর বনানী দাসমহাপাত্র বলেন, “জেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি শিশু শ্রমিক স্কুলে কিছু সমস্যা রয়েছে। জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। আশা করি প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।” পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, “আর্থিক বরাদ্দ মেলা নিয়ে সমস্যার কথা শুনেছি। জেলার শিশুশ্রমিক বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোগত কোনও অসুবিধার বিষয় নজরে এলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ananda mondal tamluk childlabour school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE