Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বহুতল গলার ফাঁস হবে না তো, প্রশ্ন

বহুতল নির্মাণে নানা সুবিধে দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। স্বাভাবিক কারণেই বহুতল নির্মাণে আরও জোয়ার আসবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বহুতল নির্মাণে বাড়বাড়ন্ত হলে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুর-এলাকাগুলির গলায় ফাঁস পড়ে যাবে না তো?

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৪ ০০:৫৫
Share: Save:

বহুতল নির্মাণে নানা সুবিধে দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। স্বাভাবিক কারণেই বহুতল নির্মাণে আরও জোয়ার আসবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বহুতল নির্মাণে বাড়বাড়ন্ত হলে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুর-এলাকাগুলির গলায় ফাঁস পড়ে যাবে না তো?

এত দিন বহুতল নির্মাণে নানা বিধি-নিষেধ ছিল। বর্তমানে রাজ্য সরকার বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিতে চলেছে। যা বাস্তবায়িত হলে, ভাড়াটিয়া-বাড়ি মালিকের সমস্যা দ্রুত মেটার আশা রয়েছে, পুরনো বাড়িতে যে সব শরিকি বিবাদ ছিল তারও সুরাহার ইঙ্গিত মিলেছে। এর প্রধান কারণ, বহু প্রোমোটারই লোভনীয় টাকার বিনিময়ে পুরনো বাড়ি কেনার চেষ্টা করবেন। আর ভাঙাচোরা পুরনো বাড়ি ছেড়ে নতুন ফ্ল্যাট বাড়ি, সঙ্গে আবার নগদ টাকা পাওয়ার আশায় অনেকেই শরিকি বিবাদ মিটিয়ে নেবেন। আবার যে সব ক্ষেত্রে এক ভাই অন্যের মুখ দেখতেন না বা ভাড়াটিয়া-বাড়ি মালিক কেউ কারও ছায়া মাড়াতেন না, প্রয়োজনে টাকা খরচ করে আদালতের দোরে ঘুরতেন বছরের পর বছর, তাঁদের নিজেদের মীমাংসা করতে হবে না। মধ্যস্থতা করবেন প্রোমোটাররাই। ফলে হু হু করে নতুন নতুন বহুতল গজিয়ে উঠবে তা বলাইবাহুল্য।

কিন্তু এর সুফল-কুফল রয়েছে। সুফলের মধ্যে হল, জমি সঙ্কট থেকে মুক্তি। কিন্তু কুফল বেশি। মেদিনীপুর পুরনো শহর। বিশেষত, বড় বাজার, বাসন্তীতলা, মানিকপুর, জগন্নাথমন্দির, স্কুলবাজার, পুরাতনবাজার, পাটনাবাজার প্রভৃতি এলাকা ভীষণ ঘিঞ্জি। গলি ঘুঁজি পেরিয়ে যাতায়াত করা এমনিতেই কঠিন। তার উপর একটি ছোট্ট জায়গায় একাধিক পরিবার বসবাস করলে বা বহুতলে কোনও শপিং মল হলে সমস্যা আরও বাড়বে। কী কী সেই সমস্যা?

প্রথমেই ধরা যাক, পার্কিংয়ের কথা। মেদিনীপুর শহরের দু’টি জায়গায় দু’টি শপিং মল রয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন মানুষ সেখানে যান। কিন্তু তাঁর দু’চাকার বা চার চাকার যানটি রাখবেন কোথায়? এর ফলে নানা সমস্যা হয়। সব জেনেও এই বিষয়টিতে কেউ নজর দেন না। সমস্যা রয়েছে জরুরি পরিষেবা বিষয়েও। বিশেষত, একটি এলাকায় যাতায়াতের জন্য অন্তত একটি বড় রাস্তা প্রয়োজন। হঠাত্‌ করে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বা কেউ অসুস্থ হলে দমকল ও অ্যাম্বুল্যান্স জরুরি। কিন্তু পুরনো এলাকাগুলির রাস্তা এতই সঙ্কীর্ণ যে, একটি গাড়ি কোনও রকমে ঢুকবে। উল্টো দিক দিয়ে গাড়ি এলে বিপদ! তৈরি হবে যানজট। তেমন এলাকাতেও তৈরি হচ্ছে বহুতল!

বহুতল নির্মাণের রমরমা শুরু হলে বাড়তে পারে ইঁট, বালি, সিমেন্টের দামও। সিণ্ডিকেটের দাপটও বাড়বে। বাড়বে মজুরিও। যাঁরা একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে অল্প জমিতে বাড়ি বানাতে চান তাঁদেরও বেশি দামেই নিতে হবে সব কিছু। বর্তমানে অতি ক্ষুদ্র পরিসরে তৈরি হচ্ছে বহুতল। পাশাপাশি একাধিক বহুতল হলে একটু হাওয়া-বাতাসও ঢোকার উপায় থাকবে না। এক্ষেত্রে পুর-প্রশাসনের নজরদারিও কম। ফলে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ, বহুতল হলেও কোথাও গাছ লাগানোর ঘটনা নজরে পড়ে না। একটি বহুতল নির্মাণ করতে হলে নিজস্ব পার্কিং, নির্দিষ্ট খোলা জায়গা, সবুজায়নের ব্যবস্থা করার বিষয়েও নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

highrise buildings construction medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE