চলছে ভুগর্ভস্থ জসস্তরের উচ্চতা মাপার প্রশিক্ষণ।
ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহারে এগিয়ে ভারতবর্ষ। অথচ, সে দেশেই ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উচ্চতা মাপার কোনও আধুনিক প্রযুক্তি নেই! প্রাচীন পদ্ধতিতেই এখনও নলকূপ বসানোর কাজ চলে। ফলে জলস্তর নেমে গিয়ে গ্রীষ্মের মুখে হঠাত্ একের পর এক নলকূপে জল বেরনো বন্ধ হয়ে যায়। পানীয় জল না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।
এই সমস্যা দূর করতে উদ্যোগী হল বিশ্বব্যাঙ্ক। বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থানুকূল্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে খড়্গপুর আইআইটিতে এক প্রশিক্ষণ শিবির হল। নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কশপ অন বোর হোল জিওফিজিক্স অব গ্রাউন্ড ওয়াটার’। প্রশিক্ষণ দিলেন জন লেন-সহ ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের ৪ প্রশিক্ষক। কী হল শিবিরে?
জলস্তর মাপতে নলকূপ তৈরির জন্য গর্ত খোঁড়ার পরই একটি যন্ত্র ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটি জলস্তরের গভীরতা জানাবে গ্রাফের মাধ্যমে। ওই স্তরের জল স্বচ্ছ না ঘোলা তা-ও জানা যাবে। বোর হোল লগার ও অ্যাকোয়াস্টিক টেলি ভিউয়ার এই দু’টি যন্ত্রের মাধ্যমে মাটির গভীরে জলস্তর সম্পর্কে এই তথ্য মিলবে। প্রশিক্ষণ নিতে হাজির হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জনস্বাস্থ্য ও কারগরি বিভাগ, জল অনুসন্ধান-সহ জলস্তর নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা। আইআইটি-র জিওলজি ও জিওফিজিক্স বিভাগের দুই শিক্ষক অভিজিত্ মুখোপাধ্যায় ও প্রবাল সেনগুপ্তের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ হয়। অভিজিত্বাবুর কথায়, “নলকূপ বসাতে অনেক টাকা খরচ হয়। তার থেকেও জরুরি বছরভর স্বচ্ছ ও পরিষ্কার জল পাওয়া। কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় প্রায়ই নলকূপ বসে যায়, জল বেরোয় না। ভারতবর্ষেই বিশ্বের সব থেকে বেশি ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার হয়। যার পরিমাণ বছরে প্রায় ২৪০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার (১ কিউবিক মিটার অর্থাত্ ১ হাজার লিটার)। তাই এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার দেশে খুবই জরুরি।” গত ১১ নভেম্বর থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। শেষ হবে আজ, ২১ নভেম্বর।
গ্রামে গ্রামে নল বাহিত পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছতে নানা সময়ে বিভিন্ন প্রকল্প চালু হয়েছে। কখনও সাধারণ নলকূপ, কখনও মার্ক ২ নলকূপ প্রভৃতি। চার দিকে গভীর নলকূপ বসানোর কাজও চলছে। তা থেকে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়া হয় পাড়ায় পাড়ায়, বাড়িতে বাড়িতে। এ সব নলকূপ চালানো হয় বিদ্যুতের মাধ্যমে। কিছু ক্ষেত্রে সৌরশক্তির মাধ্যমে জল তোলার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কিন্তু এ সবের আগে বর্তমানে নলকূপ খননের সময় দেখা হয় ভূগর্ভে কোন স্তরে কাদামাটি রয়েছে, তারপর বালি এল কি না, ইত্যাদি নানা বিষয়।
প্রশিক্ষণ নিতে আসা জল অনুসন্ধান বিভাগের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মলয় ঘোষের কথায়, “মূলত অভিজ্ঞতার নিরিখে এত দিন এটা বোঝা হত। অভিজ্ঞতায় এটাও দেখা গিয়েছে যে, জলস্তর শুকিয়ে গিয়েছে এমন জায়গা থেকেও ওই ধরনের বালি উঠেছে। তা উপর থেকে বোঝা কঠিন। কিন্তু এই ধরনের প্রযুক্তি থাকলে সমস্যা হবে না।”প্রশিক্ষণ তো হল, যন্ত্র মিলবে কোথায়? তা না হলে তো কাজই হবে না। রাজ্যের জল অনুসন্ধান দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের কথায়, “ভূগর্ভস্থ জলের উপরেই বেশির ভাগ মানুষ নির্ভরশীল। এ ধরনের প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে আবেদন জানাব, প্রশিক্ষণের পর যন্ত্র দেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করতে।” প্রশিক্ষণের পর এই পদ্ধতি কার্যকরী করা গেলে নিশ্চিত ও স্বচ্ছ পানীয় জল মিলবে। এমনকি প্রখর গ্রীষ্মেও।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, প্রশিক্ষণেই সব শেষ হয়ে যাবে না তো। এই পদ্ধতি কার্যকরী না হওয়া পর্যন্ত সে প্রশ্নের উত্তর মিলবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy