Advertisement
E-Paper

ভোটদানেও ব্রাত্য ওঁরা

সংসারে আজ আর তাঁদের দরকার নেই। তাই ২৫ জন প্রবীণার ঠিকানা এখন কাঁথির ফরিদপুর বিবেকানন্দ লোকশিক্ষা নিকেতনের বৃদ্ধাশ্রম। প্রমীলা মণ্ডল, শান্তিলতা প্রধান, পাবর্তী বরদের অভিযোগ, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তাঁদের ভোটার কার্ড নেই। তাই ভোট দিতে পারছেন না।

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৪ ০২:১৩
বৃদ্ধাবাসের আবাসিকেরা।ছবি: সোহম গুহ।

বৃদ্ধাবাসের আবাসিকেরা।ছবি: সোহম গুহ।

সংসারে আজ আর তাঁদের দরকার নেই। তাই ২৫ জন প্রবীণার ঠিকানা এখন কাঁথির ফরিদপুর বিবেকানন্দ লোকশিক্ষা নিকেতনের বৃদ্ধাশ্রম। প্রমীলা মণ্ডল, শান্তিলতা প্রধান, পাবর্তী বরদের অভিযোগ, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তাঁদের ভোটার কার্ড নেই। তাই ভোট দিতে পারছেন না।

ওই বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা এখন ২৫ জন প্রবীণ নাগরিক। কাউকে বাড়ির লোক রেখে গিয়েছেন, আবার কেউ ছেলে-বৌমার অবহেলা, অত্যাচার সইতে না পেরে চলে এসেছেন। অবসরে মন ভার হয়ে আসে। তাই সময় পেলেই সকলে হাত লাগান ঠোঙা তৈরিতে। ঠোঙা বিক্রির টাকায় কেউ পান-দোক্তা কেনেন, কেউ কেনেন ওষুধ বা টুকিটাকি জিনিস। দু’বেলার খাওয়া, সকাল-বিকেলের জলখাবার মেলে বৃদ্ধাশ্রম থেকেই।

অনেকের বাড়ির লোকেরা যোগাযোগও করেন না পরিবারের এই প্রবীণ মানুষটির সঙ্গে। তা নিয়ে প্রথমে কষ্ট হলেও এখন তা গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু ভোটের আসরেও ব্রাত্য হয়ে পড়ার একরাশ ক্ষোভ রয়েছে বৃদ্ধাদের। এঁদের মধ্যে অনেকেরই ভোটার কার্ড পড়ে রয়েছে পুরনো ঠিকানায়। সংসারের মতই অনেকের হারিয়ে গিয়েছে ভোটার কার্ডও। মঞ্জু খাঁড়া, সুমিতা ভৌমিকের তাই অভিমান নিয়ে প্রশ্ন, “টিভিতে, রেডিওতে এমনকী খবরের কাগজে নাগরিক হিসেবে ভোট দেওয়ার কথা বলা হয়। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনও এ বিষয়ে নানা উদ্যোগ নেন। তাহলে আমরা বাদ কেন?”

সংসার ছেড়ে এই প্রবীণরা রয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমে। ফলে তাঁদের ভোটার কার্ড তৈরির ব্যাপারে ওই বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বর্তায়। প্রতি নির্বাচনের সময় যখন ভোটার কার্ডে নাম তোলা হয় তখন কেন তাঁদের নাম তোলা হয়নি? ফরিদপুর লোকশিক্ষা নিকেতনের প্রাক্তন সম্পাদক ও বতর্মান পরিচালন সমিতির অন্যতম সদস্য ব্রজগোপাল সাহু বলেন, “বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের নাম যাতে বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকানায় ভোটার তালিকায় সংযোজন করা যায়, তার জন্য স্থানীয় কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লক অফিসে বারবার লিখিত আবেদন করা হয়েছে। তারপরও কোনও কাজ হয়নি। প্রশাসনের উদাসীনতায় শুধু বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরাই নয়, আমরাও হতাশ।”

এই কারণেই ওই প্রবীণ মহিলারাও ক্ষুব্ধ নির্বাচন কমিশনের উপরে। দেশের গণতন্ত্রের মহান যজ্ঞে পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা থেকে লোকসভা একের পর এক ভোট আসে, যায়। কিন্তু এই ভোট উৎসবে যোগ দিতে পারেন না তাঁরা। প্রবীণ প্রমীলা মণ্ডল, শান্তিলতা প্রধানরা বলেন, “শুনেছি জেলে থাকলে ভোট দেওয়া যায় না। কিন্তু আমরা তো আর জেলে নয়, বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছি। তাহলে আমরা ভোট দিতে পারব না কেন?” এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব নির্বাচন কমিশন বা প্রশাসন কারও কাছেই পাওয়া যায় নি। কেন ওঁদের নাম ভোটার তালিকায় ওঠেনি তা নিয়ে অবাকই হয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা।

কাঁথির মহকুমাশাসক সরিৎ ভট্টাচার্য জানান, বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধারা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন- বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এমন কোনও অভিযোগ বা ভোট দেওয়ার জন্য কোনও আবেদনপত্র আমার কাছে আসেনি। ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য ভোটার তালিকায় নাম ও ভোটারের সচিত্র পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। শুনেছি, ফরিদপুর বৃদ্ধাশ্রমের মহিলা বৃদ্ধাদের আগের বাড়ির ঠিকানায় অনেকেরই ভোটার তালিকায় নাম নেই। আবার অনেকের সচিত্র পরিচয়পত্র নেই। অনেকের আবার দু’টোই নেই। তাই তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে জটিলতা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা হিসেবে তাঁদের নতুন ভাবে ভোটার তালিকায় নাম তোলা ও সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য বৃদ্ধাশ্রমের পক্ষ থেকে আগামীদিনে যথাযথভাবে আবেদন জানাতে হবে। আবেদন জমা পড়লে প্রবীণ বৃদ্ধারা যাতে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত না হন ও স্থানীয় এলাকার ভোটার তালিকায় নাম সংযোজন করে যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তার জন্য প্রশাসন উদ্যোগী হবে।

subrata guha kanthi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy