গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সিপিএম। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে দল পর্যুদস্ত হয়েছে। আশা দেখাচ্ছে না শহরও। গেল নভেম্বরে মেদিনীপুর পুরভোটে হার হয়েছিল বাম জোটের। লোকসভা ভোটের আগে সিপিএম নেতৃত্বের কপালে ফের চিন্তার ভাঁজ। দলীয় সূত্রে খবর, মেদিনীপুর শহরের বহু কর্মীই এ বার আর দলীয় সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করাননি। বন্ধ হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু দলীয় কার্যালয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে মেদিনীপুরে সিপিএমের সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ হয়েছে। কিন্তু প্রায় দু’শো কর্মী সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করাননি। সিপিএম সূত্রে খবর, এঁদের অধিকাংশই নিজে থেকে সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করানোর ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাননি। দলের তরফে তাঁদের জোরও করা হয়নি। আর একাংশ কর্মীর সদস্যপদ দল থেকেই পুনর্নবীকরণ করতে দেওয়া হয়নি। এঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছিল। সঙ্কটজনক এই পরিস্থিতিতে শহরে সিপিএমের একাধিক শাখা অফিসও তুলে দিতে হয়েছে। কোথাও দু’টি শাখা মিলে একটি শাখা হয়েছে। কোথাও তিনটি শাখা মিলে হয়েছে দু’টি শাখা।
এই অবস্থায় সিপিএমকে বিঁধতে ছাড়ছে না তৃণমূল। তৃণমূলের মেদিনীপুর শহর সভাপতি আশিস চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্যের সর্বত্র সিপিএমের থেকে মানুষ মুখ ফেরাচ্ছেন। মেদিনীপুরেও তাই। যত দিন যাবে, সিপিএমে তত ক্ষয় হবে।” সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য ক্ষয়ের তত্ত্ব মানতে নারাজ। দলের মেদিনীপুর শহর জোনাল সম্পাদক কীর্তি দে বক্সীর মতে, “দল দুর্বল হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ সাংগঠনিক ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলব না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমাদের দলে হাজার হাজার কর্মী আছেন। ২-৪ জন সরে গেলে কিছু হবে না। মনে রাখতে হবে, কয়েকজন যেমন সরে যাচ্ছেন, তেমন নতুন করেও অনেকে দলের সঙ্গে আসছেন।”
মেদিনীপুরে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী এ বার এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। ইতিমধ্যে শহরে এক কর্মিসভা করে গিয়েছেন সন্ধ্যাদেবী। অভিনেতা দেবের উপস্থিতিতে সেই কর্মিসভা ঘিরে উন্মাদনার অন্ত ছিল না। মেদিনীপুর কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ প্রবোধ পান্ডাও প্রচার শুরু করেছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, লোকসভা ভোটের মুখে শহর এলাকার বহু কর্মী সিপিএমের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় বাম শিবির চাপে পড়বে। মেদিনীপুর শহরে অবশ্য বরাবরই অ-বাম ভোট বেশি। বিভিন্ন নির্বাচনে এর প্রমাণ মিলেছে। গত বছর নভেম্বরে শহরে পুর-নির্বাচন হয়। ২৫টি আসনের মধ্যে বাম-জোটের দখলে আসে মাত্র ৫টি আসন। এর মধ্যে ৩টি সিপিএমের। বাকি দু’টি জোটসঙ্গী বিকাশ পরিষদের। ওই ভোটে পরাজিত হন সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক কীর্তিবাবুও। পুরভোটে বাম-জোট মোট ২৪.১১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আর তৃণমূল পেয়েছিল প্রদত্ত ভোটের ৪০.১৩ শতাংশ।
বামেরা কেন অন্তত ৩০ শতাংশ ভোট পেল না, পুরভোটের পরে তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরে কাঁটাছেঁড়া শুরু হয়। শহর জোনাল কমিটির এক নেতা মানছেন, “আমাদের অনেক দুর্বলতা থেকে গিয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওই দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করা জরুরি।” পুর-নির্বাচনের পরে দলের মধ্যে ত্রুটি সংশোধনও শুরু করে সিপিএম। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের মুখে দলের কর্মী সংখ্যায় যে ভাবে টান পড়ছে, তাতে ভাবনায় পড়েছেন সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ। সিপিএম সূত্রে খবর, মেদিনীপুর শহর জোনাল কমিটির অধীনে সদস্য ছিলেন প্রায় এগারোশো জন। গত ফেব্রুয়ারিতে শহরে দলের সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ হয়েছে। সেই সময় প্রায় ন’শো জনের সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ হয়েছে। বাকি দু’শো জনের হয়নি। পরিস্থিতি দেখে সিপিএমের একাধিক শাখা অফিস তুলে দেওয়া হয়েছে। যেমন, সিপাইবাজারে একটি শাখার অবলুপ্তি ঘটেছে।
সিপিএমের একাংশ নেতার অবশ্য অভিমত, আপাত ভাবে কর্মী সংখ্যা কমছে, দল দুর্বল হচ্ছে মনে হলেও আদতে এতে লাভ হচ্ছে। কারণ, এর ফলে যাঁরা দলের সঙ্গে থাকতে চান না এবং যাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে, সেই দুই অংশই দল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তাই পর্যালোচনা করেই সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে। শহর জোনাল কমিটির এক নেতা বলেন, “আগে দলের শাখা কমিটি, লোকাল কমিটি ধরে ধরে সদস্যদের কাজের পর্যালোচনা করা হয়েছে। কে বা কারা নিষ্ক্রিয়, কাউকে অব্যাহতি দেওয়া যায় কি না, তা দেখা হয়েছে। শাখা সম্পাদকদের ব্যক্তিগত কাজেরও মূল্যায়ন করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন নিজে থেকে সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করানোর ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাননি, এটা ঠিক। তবে, এঁদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তাই এঁরা সরে যাওয়ায় দলের তেমন ক্ষতি হবে না। বরং লাভই হবে!”
কিন্তু তাহলে তো দলে নতুন কর্মী আসা প্রয়োজন! সেটা কি হচ্ছে? শহর সিপিএমের অন্দরের খবর, নতুন করে যাঁরা আসছেন, তাঁদের সংখ্যাটা নামমাত্র। এটাই উদ্বেগের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy