Advertisement
E-Paper

মিছিলের পরেই সিডি পাঠাতে হবে কমিশনে, প্রশ্ন

এ বার সব রাজনৈতিক দলকে তাঁদের মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশের ভিডিও ফুটেজ সিডিতে করে নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছে কমিশন।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০১:১২

এ বার সব রাজনৈতিক দলকে তাঁদের মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশের ভিডিও ফুটেজ সিডিতে করে নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছে কমিশন।

নির্দেশিকায় বলা রয়েছে, রাজনৈতিক দল সভা, সমাবেশ বা মিছিল করলে নিজেদের উদ্যোগে গোটা প্রক্রিয়াটির ভিডিও করে রাখতে হবে। তারপর কমিশনের যে আধিকারিকের কাছ থেকে কর্মসূচির অনুমতি নেওয়া হয়েছিল, মিটিং শেষ হওয়ার ৬ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর কাছেই সিডি করে জমা দিতে হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলেন, “এই নির্দেশিকা এসেছে। সব রাজনৈতিক দলগুলিকেও তা জানিয়ে দিয়েছি।”

এত দিন আদর্শ নির্বাচনী আচরণ বিধি মানা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরাই ছবি তুলতেন। এ বার তার সঙ্গে যোগ হল সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের ক্যামেরাও। এমন নির্দেশিকায় তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কেননা, এত ক্যামেরা মিলবে কোথায়? ক্যামেরা পাওয়া গেলেও তা সিডিতে স্থানান্তরিত করার পরিকাঠামো গ্রামেগঞ্জে নেই। তা করতে ৬ ঘণ্টার অনেক বেশি সময় লাগবে বলে রাজনৈতিক দলগুলির দাবি।

এই ক্যামেরা ব্যবহার রাজনৈতিক দলগুলিকে কিছুটা হলেও যে সহনশীল করবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যা পরোক্ষে মানছে রাজনৈতিক দলগুলিও। তবে, উঠছে অন্য প্রশ্নও। যেমন, ঘাটালের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া বলেন, “প্রার্থীপিছু খরচ বাড়িয়ে কমিশন নিজেদের উদ্যোগে এই ব্যবস্থা করলে, আমরা তার খরচ দিয়ে দিতে রাজি। নতুবা প্রত্যন্ত এলাকায় ক্যামেরা পাওয়া, তা সিডিতে স্থানান্তর করা-সহ কয়েক’টি বিষয়ে সমস্যা হবে।” সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক তথা ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের বামপ্রার্থী সন্তোষ রাণার কথায়, “হঠাত্‌ এমন নির্দেশিকায় সমস্যা বাড়বেই।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দীনেন রায়ের কটাক্ষ, “কমিশনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই বলছি, বর্তমানে কমিশনে এমন কিছু কর্তা আছেন যাঁদের নির্বাচন সম্বন্ধে বাস্তব কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। ঠাণ্ডা ঘরে বসে বসে মাথায় যা আসছে, তাই বলছেন। এতে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে!”

ক্যামেরার সঙ্কট যে তীব্র তা আগেই বোঝা গিয়েছিল। কারণ, ভোট প্রচার শুধু শহরে হয় এমন নয়। প্রত্যন্ত গ্রামের কোথাও নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য ছবি তুলতে গিয়েই অধিকাংশ সময় ক্যামেরা পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থতি দেখে, প্রয়োজনে মোবাইল ক্যামেরাতেও ছবি তোলার কথা জানিয়ে রেখেছে প্রশাসন। বিশেষত, যে সব ব্লকে একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত সেখানে দিনে একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়। ভোট যত এগিয়ে আসছে কর্মসূচিও ততই বাড়ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসনিক এক কর্তার কথায়, “আগে ব্লক প্রতি দিনে গড়ে ৫-৬টি রাজনৈতিক কর্মসূচি হত। এখন ন্যুনতম ১০টি তো রয়েছেই, কোনও কোনও দিন ২০-২২টিও হচ্ছে।”

অর্থাত্‌, জেলার ২৯টি ব্লকে গড়ে ২০টি করে কর্মসূচি হলে সংখ্যাটা হয় ৫৮০টি, আবার কমিশন ও রাজনৈতিক দল মিলিয়ে মোট হচ্ছে ১১৬০টি। অর্থাত্‌, শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেই কমিশন ও রাজনৈতিক দল মিলিয়ে দিনে ১১৬০টি ক্যামেরার প্রয়োজন। ওই পরিমাণ ক্যামেরা পাওয়া এক কথায় অসম্ভব। তা ছাড়া, এই সুযোগে ক্যামেরা ভাড়াও কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে ভোটের মুখে এই নির্দেশিকা ঘুম কেড়েছে নেতাদের।

কোনও রাজনৈতিক দল নির্দেশ না মানলে কী হবে? নির্দেশিকায় তার কোনও উল্লেখ নেই। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দেশ না মানলে পরবর্তী সময়ে তাঁদের রাজনৈতিক কর্মসূচি করার অনুমতিও না-ও মিলতে পারে। সোমবার সকালেই এই নির্দেশিকা ব্লক স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমে তা পৌঁছে গিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও। এখন দেখার, নতুন নির্দেশ কতটা কার্যকরী হয়।

election commission fake cd
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy