বহরমপুরে টোটো। অপেক্ষায় মেদিনীপুর। নিজস্ব চিত্র।
দূষণহীন পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শহর মেদিনীপুরে ব্যাটারি চালিত রিকশা (টুকটুক বা টোটো) চালুর সিদ্ধান্ত নিল পুরসভা। এ জন্য তিন সদস্যের কমিটিও গড়া হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে আগামী সপ্তাহে কমিটি রিপোর্ট দিলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন পুর-কর্তৃপক্ষ। ঠিক হবে, শহরের কোন কোন রুটে টোটো চলবে, লাইসেন্স ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি কী হবে। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “শহরে ব্যাটারি চালিত রিকশা চালুর জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই রিপোর্ট খতিয়ে দেখেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
পুরসভা সূত্রে খবর, তিন সদস্যের এই কমিটিতে আছেন কংগ্রেস কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তী এবং নির্দল কাউন্সিলর অসিত মহাপাত্র। আগামী সপ্তাহের গোড়ায় কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। সপ্তাহের শেষে রিপোর্ট জমা পড়বে পুরসভায়। রাজ্যের বেশ কয়েকটি শহরে চালু হলেও মেদিনীপুরে এখনও টোটো চালু হয়নি। পুরসভা সূত্রে খবর, মাস খানেক আগে পুর- দফতর থেকে চিঠিতে জানানো হয়, টোটো চালুর ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন অর্থাত্ পুরসভাকে পদক্ষেপ করতে হবে। তারপর পুরবোর্ডের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়।
মেদিনীপুর জেলার সদর শহর। শহরের জনসংখ্যা প্রায় পৌনে দু’লক্ষ। তা ছাড়া, নানা কাজে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ মেদিনীপুরে আসেন। এমনিতে শহরের মধ্যে রিকশা চলে। কিন্তু একাংশ রিকশা চালক বাড়তি ভাড়া হাঁকায় ভোগান্তি বাড়ে। এক সময় পুরসভা উদ্যোগী হয়ে শহরে রিকশা ভাড়া বেঁধে দিয়েছিল। রিকশা স্ট্যান্ডগুলোয় নির্ধারিত ভাড়ার সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছিল। এখন অবশ্য ভাড়ার কোনও তালিকা নেই। সাইনবোর্ডগুলোও উধাও হয়ে গিয়েছে! সুযোগ বুঝে অনেক রিকশা চালক তিন-চারগুণ ভাড়াও হাঁকছেন। বচসা বাঁধছে। একাংশ রিকশা চালক যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ। রিকশা চালকদের অবশ্য দাবি, মুষ্টিমেয় কিছু যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া হাঁকেন। সকলে নয়। অনেক সময় ভাড়া নিয়ে দরাদরি করতে গিয়ে যাত্রীরাই গোলমাল করেন। এই পরিস্থিতি দেখেই শহর মেদিনীপুরে পরিবেশ বান্ধব টুকটুক বা টোটো চালুতে উদ্যোগী হয় পুরসভা।
পুরসভার এক সূত্রে খবর, শহরে এখন লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশার সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। লাইসেন্সবিহীন রিকশা রয়েছে দেড় হাজারের কাছাকাছি। প্রথম পর্যায়ে কতগুলো টোটো চালুর অনুমতি দেওয়া হবে, এ নিয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা কমিটির। এ ছাড়া, তাদের প্রস্তাবে থাকবে কোন কোন রুটে টোটো চলবে, টোটোর লাইসেন্স ফি কী হবে, রেজিস্ট্রেশন ফি কী হবে প্রভৃতিও। শহরবাসী মনে করেন, ব্যাটারি চালিত রিকশায় সাইকেল রিকশার থেকে অনেক কম ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছনো যাবে। শহরে এটা চালু করা জরুরি। কারণ, রাতের শহরে অনেক সময় রিকশাও মেলে না। তখন সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় যাত্রীদের। টোটোর লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশা চালকদেরই অগ্রাধিকার দিতে পারে পুরসভা। কমিটির অন্যতম সদস্য তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তী বলেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শহরে টোটো চালু করার চেষ্টা চলছে। আগামী সপ্তাহেই আমরা বৈঠকে বসব। তারপর রিপোর্ট জমা দেবো। রুট ভেঙে একাংশ অটো চলাচলের ফলে এমনিতেই রিকশা চালকদের অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই টোটোর লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশা চালকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি আমরা ভেবে দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy