Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মঞ্চে দেব, কর্মিসভার উচ্ছ্বাস হার মানাল জনসভাকে

দেব বলে কথা! মঞ্চ থেকে হাত নাড়তেই স্টেডিয়ামের একটা ব্লক চিৎকার জুড়ল ‘পাগলু, পাগলু’। একটু হাসলেন। উদ্বেল আর একটা ব্লক চেঁচাল ‘খোকাবাবু, খোকাবাবু’।মঙ্গলবারের বিকেল। সুপারস্টার দেবকে ঘিরে তৃণমূল কর্মীদের পাগলপারা উন্মাদনায় মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়াম তখন ফুটছে। ফেডেড জিন্স আর গাঢ় নীল গোল গলা টি-শার্ট পরা মানুষটাকে আরও কাছ থেকে দেখার চেষ্টায় মঞ্চের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে পড়ার উপক্রম।

এক বার ছোঁয়ার আর্তি। মঙ্গলবার মেদিনীপুরের সভায় দেবকে ঘিরে উন্মাদনা।  ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

এক বার ছোঁয়ার আর্তি। মঙ্গলবার মেদিনীপুরের সভায় দেবকে ঘিরে উন্মাদনা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

বরুণ দে ও অভিজিৎ চক্রবর্তী
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০২:২৯
Share: Save:

দেব বলে কথা! মঞ্চ থেকে হাত নাড়তেই স্টেডিয়ামের একটা ব্লক চিৎকার জুড়ল ‘পাগলু, পাগলু’। একটু হাসলেন। উদ্বেল আর একটা ব্লক চেঁচাল ‘খোকাবাবু, খোকাবাবু’।

মঙ্গলবারের বিকেল। সুপারস্টার দেবকে ঘিরে তৃণমূল কর্মীদের পাগলপারা উন্মাদনায় মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়াম তখন ফুটছে। ফেডেড জিন্স আর গাঢ় নীল গোল গলা টি-শার্ট পরা মানুষটাকে আরও কাছ থেকে দেখার চেষ্টায় মঞ্চের সামনের ব্যারিকেড ভেঙে পড়ার উপক্রম। নির্বাচনী প্রস্তুতি সভায় অবাঞ্ছিত ভিড় ঠেকাতে প্রবেশপত্রের বন্দোবস্ত করেছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু উচ্ছ্বাস আর উন্মাদনার কাছে বিধি-নিষেধ হার মানল। বিকেল ৩টে নাগাদ স্টেডিয়ামের বাইরে উপচে পড়া ভিড় দেখে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় মঞ্চ থেকে ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন, “স্টেডিয়ামের চারটে গেটই খুলে দেওয়া হচ্ছে। সকলে ধীরে ধীরে ঢুকবেন। যাঁরা এসেছেন, কেউই ফিরে যাবেন না।”

দেবকে নিয়ে উন্মাদনার চোটে কর্মিসভাও আর চেনা চেহারায় থাকেনি। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় সবে বিভিন্ন বিধানসভা এলাকার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন। কিন্তু মঞ্চে দেব। ফলে কাজ এগলো না। মুকুলবাবু বলেই ফেললেন, “এত উচ্ছ্বাস। এত আবেগ। সাংগঠনিক কাজ করা গেল না। এটা কর্মিসভা নয়, জনসভায় পরিণত হয়েছে।” মেদিনীপুর কেন্দ্রের তারকা-প্রার্থী সন্ধ্যা রায়কেও বলতে শোনা গেল, “আমিও দেবের কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করছি।” আর মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বললেন, “এটা শুধু কর্মিসভা নয়, মেগা-কর্মিসভা!”

যাঁকে ঘিরে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, নিরাশ করেননি তিনিও। বলতে উঠেই হাজার পনেরোর ভিড়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেলেন সুপারস্টার। মাইক হাতে জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন আছেন আপনারা? সবাই ভাল আছেন তো? আজ প্রচণ্ড গরম ছিল। তার মধ্যেও আপনারা এসেছেন। আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।” মঞ্চে উপস্থিত তৃণমূল নেতাদেরও বারবার ধন্যবাদ জানিয়েছেন দেব। আর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দেবের কথায়, “এই যে আজ আপনাদের সামনে এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছি, এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য।”

তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর কারণও এ দিন ব্যাখ্যা করেছেন রাজনীতির ময়দানের নতুন যোদ্ধা। দেব বলেন, “প্রার্থী হিসেবে যে দিন আমার নাম ঘোষণা হয়েছিল, সে দিন ভয়ে মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পর দিন ভাবলাম, কেন আমি প্রার্থী হতে পারি না? নতুন প্রজন্মকে তো এগিয়ে আসতেই হবে। দেশ গড়ার সময় হয়ে গিয়েছে। আমরাই যুবশক্তি। সকলকে বলব, প্লিজ ভোটটা দাও। এটা আমাদের দেশ। আমাদেরই চালাতে হবে।”

জেলার তিন লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী, ঘাটালে দেব, মেদিনীপুরে সন্ধ্যা রায় এবং ঝাড়গ্রামে উমা সরেনকে নিয়ে এ দিন নির্বাচনী প্রস্তুতিসভার আয়োজন করা হয়েছিল মেদিনীপুর অরবিন্দ স্টেডিয়ামে। উপলক্ষ, জেলার বিভিন্ন প্রান্তের তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। সাড়ে ৩টে নাগাদ সভা শুরুর পরপরই পৌঁছে যান চিকিৎসক উমা সরেন। দুই তারকা প্রার্থী দেব এবং সন্ধ্যা রায়কে নিয়ে মুকুলবাবু আসেন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ। প্রার্থী হওয়ার পর দুই তারকার এই প্রথম মেদিনীপুরে আসা। মঞ্চে উঠে মুকুলবাবু বলেন, “দেব ও সন্ধ্যা রায় প্রার্থী হয়ে দলকে সম্মানিত করেছেন। এঁরা আপনাদের কথা সংসদে পৌঁছে দিতে চান।”

কর্মিসভায় সন্ধ্যাদেবীর বক্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে আপনারা সামিল হচ্ছেন। আমিও সামিল হতে চাই। আপনাদের সেবা করার জন্য এখানে এসেছি। মনে হয়, আপনাদের মন ভরাতে পারব।” ঝাড়গ্রামের প্রার্থী উমাদেবী বলেন, “দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) জঙ্গলমহলের জন্য যে স্বপ্ন দেখেন, তা পূরণ করাই আমার লক্ষ্য।”

দেব এ দিনই জেলায় পৌঁছে যান। চন্দ্রকোনা রোডের ফিল্মসিটিতে একটি শু্যটিং ছিল তাঁর। সেখান থেকেই সোজা মেদিনীপুর। তার আগে ফিল্মসিটির মধ্যে সাংবাদিক সম্মেলনও সেরে নেন। সেখানেও টলিউডের সুপারস্টার জানান, নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিমুুখী করাই তাঁর লক্ষ্য। কিন্তু জেঠা-কাকারা যেখানে সিপিএম করেন, আপনি কেন তৃণমূলে? দেবের জবাব, “অনেক সময় কারও কথা ফেলা যায় না। দিদিকে (মমতা) আমি ভালবাসি। তাই দিদির প্রস্তাব উপেক্ষা করতে পারিনি।”

তিনি ‘ঘরের ছেলে’, মেদিনীপুরে এসে তা বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন দেব। বলেছেন কেশপুরে তাঁর দেশের বাড়ি, আর মামাবাড়ি জেলারই চন্দ্রকোনায়। অরবিন্দ স্টেডিয়ামের সভায় কথা বলতে বলতে দেব ফিরে যান ছোটবেলায়। বলতে থাকেন, “এখনও মনে আছে, জেঠু, মামার হাত ধরে মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ডে আসতাম। সেখান থেকে বাসে খড়্গপুর। তার পর গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে চেপে মুম্বই যেতাম।” পরক্ষণেই তারকা-প্রার্থীর আর্জি, “আমি এই মাটির ছেলে। বড় হতে চাই। শিখতে চাই। আপনারা দোয়া করবেন। আশীর্বাদ করবেন।”

বিকেল সওয়া ৫টা নাগাদ দেব যখন স্টেডিয়াম ছাড়লেন, গোটা চত্বর তখনও উত্তেজনায় কাঁপছে। কে, কত কাছ থেকে দেবকে দেখল, কত কাছ থেকে ‘রংবাজ’-এর রঙিন ছবি মোবাইল-বন্দি করতে পারল, তা নিয়ে ছেলেছোকরাদের মধ্যে কথার লড়াই চলছে। আশি ছুঁইছুঁই বীণাপাণি দাসও ভিড়ের মধ্যে ছিলেন। কেমন দেখলেন দেবকে? হাসিমুখে বৃদ্ধার জবাব, “ও তো হাসি দিয়েই মন জিতে নেবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE