ক্লাস বয়কট শিক্ষকদের। নিজস্ব চিত্র।
পরিচালন সমিতিতে গোলমালের জের গড়াল শুক্রবারও। এ দিন স্কুলের দুই শিক্ষককে হেনস্থার অভিযোগে ক্লাস বয়কট করলেন অধিকাংশ শিক্ষক। একইসঙ্গে, পড়ুয়ারাও স্কুলে অশান্তির প্রতিবাদ জানিয়ে ক্লাস না করেই স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে গেল। ডেবরার চকবাজিত জ্যোতগেড়িয়া বিবেকানন্দ বিদ্যাভবনের ঘটনা। এ দিন সকালে স্কুলে এলেও ক্লাসে যাননি অধিকাংশ শিক্ষক। বৃহস্পতিবার স্কুল পরিচালন সমিতি ও স্কুল শিক্ষা কমিটির বৈঠক চলাকালীন সমিতির সম্পাদক স্বপন চক্রবর্তী ও দুই শিক্ষকের মধ্যে বচসা বাধে। অভিযোগ, সেই সময় এক শিক্ষককে ধাক্কা মারেন স্বপনবাবু। যদিও ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে স্বপনবাবু পাল্টা অভিযোগ করেন, “বৈঠক চলাকালীন এক জন শিক্ষক আমাকে মারতে এসেছিল। তা নিয়ে বচসার জেরে বৈঠকে ভেস্তে গিয়েছে।”
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী এপ্রিলে স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের অনুষ্ঠান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার স্কুলের পরিচালন সমিতি বৈঠকে বসেছিল। সেই বৈঠকেই স্কুলের পঠনপাঠন, মিড-ডে মিল, নিয়মশৃঙ্খলা সংক্রান্ত আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন স্কুল শিক্ষকেরা। বৈঠক চলাকালীন প্রধান শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির সম্পাদকের সঙ্গে বচসা বাধে স্কুলের একাংশ শিক্ষকের। সেই সময় পদার্থবিদ্যার শিক্ষক শঙ্করকুমার ভুঁইয়া ও ইতিহাসের শিক্ষক সদানন্দ জানাকে হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে। স্কুলের একাংশ শিক্ষকের দাবি, সদানন্দবাবুকে ঠেলে ফেলেও দেওয়া হয়। যদিও ওই ঘটনায় পুলিশে কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।
শুক্রবার সকাল থেকে ফের অশান্তি ছড়ায় স্কুলে। স্কুলের একাংশ শিক্ষক স্কুলে এসে রেজিস্টারে সই না করে ক্লাস বয়কটের ডাক দেন। পড়ুয়ারা স্কুলে এলে তাদেরও ক্লাস না নেওয়ার কথা জানিয়ে নেওয়া হয়। পড়ুয়ারাও স্কুলের সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরানোর দাবিতে সরব হয়। এক স্কুল পড়ুয়ার কথায়, “আমরা ক্লাস করতেই স্কুলে এসেছিলাম। কিন্তু স্যাররা তো নিজেরাই লড়াই করে ক্লাস বন্ধ করেছেন। তাই চলে যাচ্ছি। যখন স্কুলের অশান্তি মিটে যাবে, তখন আসব।”
এ দিন স্কুলের একাংশ শিক্ষক বিডিও-র কাছে গিয়ে পরিচালন সমিতির সম্পাদক স্বপন চক্রবর্তীর পদত্যাগের দাবি জানান। তাঁদের দাবি, প্রধান শিক্ষককেও ওই বৈঠকে শিক্ষক হেনস্থার ঘটনা সমর্থনের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। অভিযোগকারী পদার্থবিদ্যার শিক্ষক শঙ্করকুমার ভুঁইয়ার কথায়, “প্রধান শিক্ষকের সমর্থন নিয়ে স্কুলের সম্পাদক স্কুলে দুর্নীতি করে চলেছেন। বৈঠকে সেই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানানোয় আমাদের মারধর ও অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন সম্পাদক। এই ঘটনায় প্রতিটি শিক্ষক অপমানিত হওয়ায় ক্লাস নেননি। আমরা সমস্ত স্তরে সম্পাদকের ইস্তফা চেয়ে চিঠি দিচ্ছি।”
স্কুলের সম্পাদক স্বপন চক্রবর্তী এ দিনও একইভাবে বলেন, “আমি প্রতিবেদন পাঠ করার সময় কিছু শিক্ষক অশান্তি করছিল। দু’জন শিক্ষক আমাকে মারতে আসেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও আমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু কারও গায়ে হাত দিইনি। ওঁরা রাজনীতি করে এ সব করছে।” প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত ভিয়াসীও একই সুরে বলেছেন, “কোনও শিক্ষককে মারধর করা হয়নি। বরং সম্পাদকের প্রতিবেদন পাঠ করার সময় দুই শিক্ষক গোলমাল করছিল। তাই ওঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওঁরা স্কুলে যে অচলাবস্থা তৈরির চেষ্টা করেছে, সেই বিষয়ে শিক্ষা দফতরে জানিয়েছি।” ঘটনার বিষয়ে ডেবরার বিডিও জয়ন্ত দাস বলেন, “আমার কাছে কিছু শিক্ষক এসে অভিযোগ জানিয়েছেন। বিষয়টি স্কুল পরিদর্শককে জানাতে বলেছি। আমিও বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy