মেদিনীপুর মেডিক্যালে সিপিএম কর্মী জাহাঙ্গির আলি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
ভোট-পরবর্তী সংঘর্ষে তেতে উঠল কেশপুর। বুধবার সকালে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে মারা গেলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ ফিরোজ আলি (৫১)। গুরুতর জখম হয়েছেন চার সিপিএম কর্মীও। তাঁরা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তৃণমূলের তরফে পুলিশে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এখনও অবধি ১৪ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ফিরোজ স্থানীয় আমড়াকুচি অঞ্চলে তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। এ দিনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তাঁর অভিযোগ, “এখনও সিপিএম বাংলাকে অশান্ত করার পরিকল্পনা করছে।” তবে এই খুনের ঘটনা নিয়ে যাতে কোনও অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি না হয়, সে জন্য দলীয় কর্মী-সমর্থকদের শান্ত থাকার আবেদন জানিয়েছেন মুকুলবাবু। নিহতের পরিবারকে সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
কেশপুর এক সময়ে সিপিএমের ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর অবশ্য পরিস্থিতি বদলে যায়। একের পর এক এলাকায় তৃণমূলের প্রভাব বেড়ে চলে, যার ফলে কেশপুর কার্যত তৃণমূলের ‘সবুজগড়’ হয়ে ওঠে। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পর চরকা থেকে বহু গ্রামবাসী ঘরছাড়া হয়ে যান। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমড়াকুচি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী দিতে পারেনি সিপিএম। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের আগে পুলিশি নিরাপত্তায় বেশ কিছু ঘরছাড়া আবার গ্রামে ফিরে আসে। ফলে কেশপুরের কয়েকটি এলাকায় সিপিএম আবার শক্তিশালী হয়ে উঠছে। কলাগ্রাম, মহিষদার মতো, চরকাতেও সিপিএমের নিয়ন্ত্রণ বাড়ছে। তৃণমূল চেষ্টা করেও এই এলাকাগুলিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। লোকসভা নির্বাচনের আগেও বেশ কয়েকবার চরকাতে গণ্ডগোল হয়েছে। এই এলাকাতেই বাড়ি কেশপুরের এক সময়ের ‘দাপুটে’ সিপিএম নেতা এন্তাজ আলির।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ভোরে কেশপুরের চরকায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা জমায়েত করে। তারা হামলা চালায় সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের উপর। সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ লাঠি-রড নিয়ে মারামারি শুরু হয়। সংঘর্ষে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তৃণমূল নেতা ফিরোজ আলি। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে জানান ডাক্তাররা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্যই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। সিরাজুল মির্জা, সইফুল মির্জা, জাহাঙ্গির আলি আর মনিফুল মির্জা নামে চার সিপিএম সমর্থকও গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন মেডিক্যালে।
সিপিএমের অভিযোগ, গ্রাম আক্রমণেরই পরিকল্পনা ছিল তৃণমূলের। সেই মতো বিভিন্ন এলাকার লোকজনকে চরকায় এনে জড়ো করা হয়। পরে স্থানীয় গ্রামবাসীরা ‘প্রতিরোধ’ করার ফলেই তা সংঘর্ষের আকার নেয়। মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন সিরাজুলের কথায়, “বাড়ি থেকে বেরিয়ে চায়ের দোকানে যাচ্ছিলাম। তখনই তৃণমূলের লোকেরা আক্রমণ করে। ওদের হাতে টাঙিও ছিল।” ফিরোজ আলিকেও তৃণমূলের জমায়েতের মধ্যেই দেখেছেন বলে দাবি করেন সিরাজুল। তবে কখন, কী করে জখম হয়েছেন ফিরোজ, তা বলতে পারেননি সিরাজুল।
হাসপাতালে আসেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ, প্রমুখ। দীনেনবাবুর দাবি, সংঘর্ষের অভিযোগ মিথ্যা। “পরিকল্পনা করেই ফিরোজকে খুন করা হয়েছে,” বলেন তিনি। সে অভিযোগ মানেনি সিপিএম। কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই বলেন, “তৃণমূলের লোকেরা আচমকা গ্রাম আক্রমণ করেছিল। মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।”
গত দেড়-দু’মাসে রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে বেশ কয়েকবার উত্তেজনা ছড়িয়েছে চরকায়। বুধবারের গোলমালের পর ডেপুটি পুলিশ সুপার মনোরঞ্জন ঘোষের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১৪ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থককে আটক করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “চরকায় একটা গোলমালের ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy