Advertisement
E-Paper

সিপিআই-তৃণমূল সংঘর্ষে তপ্ত কলাইকুণ্ডা, হত তৃণমূল কর্মী

এলাকায় শাসক দলের প্রবল উপস্থিতি। পঞ্চায়েতেও তাদেরই দখলে। কিন্তু বুধবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুণ্ডা পঞ্চায়েতের বুঁদড়া গ্রামে সিপিআইয়ের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ গেল এক তৃণমূল কর্মীর। জখম হন দু’পক্ষের আট জন। পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষের পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান প্রবোধ পাত্র (৬৫)। বৃহস্পতিবার সকালে খড়্গপুর গ্রামীণ থানায় তৃণমূলের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬ জন গ্রেফতার হন। স্থানীয় সূত্রের খবর, ধৃতেরা এলাকায় বাম কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত। মেদিনীপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ছ’জনকে ছ’দিন পুলিশ-হেফাজতে এবং বাকিদের ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৫ ০১:০২
খড়্গপুরে আহত তৃণমূল কর্মীরা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

খড়্গপুরে আহত তৃণমূল কর্মীরা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

এলাকায় শাসক দলের প্রবল উপস্থিতি। পঞ্চায়েতেও তাদেরই দখলে। কিন্তু বুধবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের কলাইকুণ্ডা পঞ্চায়েতের বুঁদড়া গ্রামে সিপিআইয়ের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ গেল এক তৃণমূল কর্মীর। জখম হন দু’পক্ষের আট জন।

পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষের পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান প্রবোধ পাত্র (৬৫)। বৃহস্পতিবার সকালে খড়্গপুর গ্রামীণ থানায় তৃণমূলের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬ জন গ্রেফতার হন। স্থানীয় সূত্রের খবর, ধৃতেরা এলাকায় বাম কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত। মেদিনীপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ছ’জনকে ছ’দিন পুলিশ-হেফাজতে এবং বাকিদের ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

কলাইকুণ্ডা পঞ্চায়েতের খুব কাছেই নিমপুরা-কলাইকুণ্ডা শিল্পতালুক। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে সিপিআই প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র প্রভাব রয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে এবং পরে বেশ কিছু সিপিআই সমর্থক কলাইকুণ্ডা পঞ্চায়েত এলাকা ছেড়েছিলেন। পরে এলাকায় ফিরলেও তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের সঙ্গে তাঁদের ছোটখাটো মতবিরোধ লেগেইছিল। মাস তিনেক ধরে এলাকায় সরকারি জমিতে বাম-আমলের পাট্টাদারদের জোর করে দখল ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগ উঠছিল তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। বামেরা তা নিয়ে মাস তিনেক আগে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জমা দেন। মহকুমাশাসক (খড়্গপুর) সঞ্জয় ভট্টাচার্য জানান, ভূমি সংস্কার দফতর অভিযোগটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

ইতিমধ্যে বুঁদরা গ্রামের একটি পুকুর কাটা নিয়ে গোলমাল শুরু হয় দু’পক্ষের। ১০০ দিনের প্রকল্পে ওই পুকুরের মাটি কাটতে গিয়ে বিধি না মেনে যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বুধবারই বামেরা অভিযোগ জানান কলাইকুণ্ডা পঞ্চায়েতের কাছে।

অভিযোগ মানেননি তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। তাঁদের পাল্টা দাবি, বুধবার রাত ৯টা নাগাদ মোটরবাইকে চেপে বাড়ি ফেরার সময় বুঁদড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে অরূপ কারক নামে এক তৃণমূল কর্মীর পথ আটকান সিপিআই কর্মী-সমর্থকেরা। পুকুর কাটার বিষয় নিয়ে দু’পক্ষে বচসা শুরু হয়। অরূপবাবুর অভিযোগ, “সিপিআই কর্মী বলে পরিচিত তিন ভাইপ্রকাশ, প্রসাদ ও বিকাশ চাউলিয়া আমাকে মারধর করে।” সেই সময় কোনওমতে সেখান থেকে পালিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন বলে অরূপবাবুর দাবি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনা চাউর হতেই রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একাংশ চাউলিয়া পরিবারের বাড়ি ঘিরে ফেলে। কিন্তু সেই সময়ে ওই বাড়ি এবং আশপাশের বাড়ি থেকে বাম সমর্থক পরিবারের বাসিন্দারা বেরিয়ে আসেন। সংঘর্ষ বাধে। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিআইয়ের লোকেরা টাঙ্গির কোপ মারে প্রবোধবাবুর গলায়। নিহত বৃদ্ধের ছেলে কচি পাত্র বলেন, “গণ্ডগোল হয়েছে শুনে বাবা গ্রামের অন্যদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন। তার পরে শুনি, এই কাণ্ড!”

রাতেই পুলিশ এলাকায় যায়। রাতভর তল্লাশি চলে। এ দিনও গ্রামে পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বিকাশ, প্রসাদ ও প্রকাশ চাউলিয়া পলাতক। তবে তাঁদের বাবা মাধাই চাউলিয়াকে আটক করা হয়েছে। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রানা বলেন, “যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। তবে কালকে শাসক দলের লোকেরাই আমাদের লোকেদের উপরে হামলা করার মতলবে জড়ো হয়েছিল। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের দুর্নীতি নিয়ে মুখ খোলাটাই ওদের রাগের কারণ।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ। এ দিন বুঁদরা গ্রামে নিহতের বাড়িতে গিয়ে তিনি বলেন, “এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণে বামেরা ফের খুনের রাজনীতির পথ বেছে নিয়েছে। সে জন্য আমাদের এক কর্মীর প্রাণ গেল!”

clash cpi bjp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy