Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

সিপিএম কর্মী খুনে অভিযুক্ত তৃণমূলের ১৬

সকালের দিকে অসহযোগিতা করেছিল পুলিশ। বেলা গড়াতে পরিস্থিতি বদলে যায়। অভিযোগ করতে আসা গড়বেতার নিহত সিপিএম কর্মী হন সইদুল ভুঁইয়ার স্ত্রীর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় পুলিশই। এমনকী, পুলিশি প্রহরায় আরামবাগে যান তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০২:০৫
Share: Save:

সকালের দিকে অসহযোগিতা করেছিল পুলিশ। বেলা গড়াতে পরিস্থিতি বদলে যায়। অভিযোগ করতে আসা গড়বেতার নিহত সিপিএম কর্মী হন সইদুল ভুঁইয়ার স্ত্রীর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় পুলিশই। এমনকী, পুলিশি প্রহরায় আরামবাগে যান তিনি। স্বামীর দেহ নিয়ে পুলিশি প্রহরাতেই ফের এলাকায় ফেরেন। তারপর দেহ সমাহিত করা হয়। যদিও পুলিশের দাবি, যাতায়াতের বন্দোবস্ত নিহতের পরিজনেরা নিজেরাই করেছিলেন। তবে দেহ সমাহিত করার সময় সইদুলের পরিবারের তরফে পুলিশ পাহারা চাওয়া হয়েছিল। তাই সেই বন্দোবস্ত করা হয়।

বেলা গড়াতে যে পুলিশের ভোলবদল হয়, তা মানছেন মৃতের বাবা দিলওয়ার ভুঁইয়াও। তিনি বলেন, “সকালের দিকে পুলিশ অভিযোগই নিতে চায়নি। পরের দিকে পুলিশ একটু নরম হয়। শুনেছি, তৃণমূলের কয়েকজন লোক গড়বেতা থানার সামনে এসে ঝামেলা করার চেষ্টা করেছিল। পুলিশ তাদেরও হটিয়ে দেয়।”

ঘটনায় সব মিলিয়ে ১৬ জন তৃণমূল নেতা-কর্মীর নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী হালিমা বিবি। তালিকায় নাম রয়েছে তৃণমূলের গড়বেতা ব্লক সভাপতি দিলীপ পালেরও। যা নিয়েও আবার রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের অভিযোগ, “সিপিএম নোংরা কাজ করল! আমাদের কর্মীদের মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে দিল!” তাঁর দাবি, “এ ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্কই নেই। ভাগ-বাঁটোয়ারার ব্যাপার! কে কবে কোথায় কাঠ কেটেছে। কে কার কাছ থেকে কে কত টাকা পায়, এ সব! এটা দুষ্কৃতীদের কাজ।” কেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতির নামে অভিযোগ দায়ের হল? সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার বলেন, “কার কার নামে অভিযোগ হয়েছে, আমি ঠিক জানি না। তবে ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, অভিযোগপত্র তো তাদেরই নাম থাকবে।”

পুলিশি হেনস্থার প্রসঙ্গও সামনে এনেছেন তিনি। সিপিএমের জেলা সম্পাদকের কথায়, “আমাদের যে কর্মী খুন হয়েছেন, তাঁর স্ত্রী অভিযোগ জানাতে এ দিন সকাল সাতটায় থানায় গিয়েছিলেন। দীর্ঘক্ষণ তাঁকে বসিয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা পর অভিযোগ নেওয়া হয়। একে অমানবিকতা ছাড়া আর কী বলবো!” সিপিএমের অভিযোগ, আগের দিন তৃণমূলের লোকজনও পুলিশে অভিযোগ করতে বাধা দিয়েছিল। নানা ভাবে তারা মৃতের পরিবারের লোকেদের হুমকি দেয়। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেনবাবু অবশ্য বলেন, “আমাদের কর্মীরা যদি বাধাই দেন, তা হলে থানায় এসে অভিযোগ করা হল কী ভাবে? শুধু মিথ্যাচার!”

কেন অভিযোগ করতে এসে মৃতের স্ত্রীকে সমস্যায় পড়তে হল? পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “কারো সঙ্গেই অসহযোগিতা করা হয়নি। এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ গড়বেতা থানায় এসে উনি (হালিমা) যে অভিযোগপত্র জমা দিতে চেয়েছিলেন, সেখানে ৯ তারিখের কথা লেখা ছিল। অথচ, অভিযোগ করা হচ্ছে ১০ তারিখ। ৯ তারিখের অভিযোগপত্র ১০ তারিখ থানা জমা নিতে পারে না। ওঁকে শুরুতেই বলা হয়, এটি সংশোধন করতে। ৯ তারিখের বদলে ১০ তারিখ লিখতে। উনি রাজি হচ্ছিলেন না। যখন রাজি হন, তখন সঙ্গে সঙ্গেই অভিযোগপত্র জমা নেওয়া হয়।”

গত রবিবার খুন হন সিপিএম কর্মী সইদুল ভুঁইয়া। বাড়ি গড়বেতার তিলডাঙ্গায়। সইফুলকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের লোকেদের বিরুদ্ধে। রাজ্যে পালাবদলের পরপরই এই সিপিএম কর্মী সপরিবার ঘরছাড়া হন। তারপর থেকে মেদিনীপুরে থাকতেন। এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রবিবার গড়বেতার শ্যামনগরে যান। সেখানে দেখতে পেয়েই তৃণমূলের একদল লোক তাঁকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পরে মারধর করে। হুগলির আরামবাগ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

সিপিএমের দাবি, ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের ব্লক সভাপতিও জড়িত। ঘটনাস্থল এবং ব্লক সভাপতির বাড়িও একই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। সেটি বড়মুড়া। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saidul bhuiyan murder tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE