সাহায্যের নাম করে এক ব্যক্তির সাড়ে সাত হাজার টাকা হাতিয়ে নিল দুষ্কৃতীরা। সোমবার ঘটনাটি ঘটল মেদিনীপুর শহরের রাজাবাজারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায়। প্রতারিত হয়েছেন মুর্শিদাবাদের শেখ পিয়ারু। থানায় অভিযোগের পর তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
কিভাবেই প্রতারণার ঘটনা ঘটল? পিয়ারু পেশায় রাজমিস্ত্রী। মেদিনীপুর শহরের সিপাইবাজার এলাকায় একটি বাড়ি নির্মাণের কাজে দীর্ঘদিন তিনি এই শহরেই রয়েছেন। কিন্তু উপার্জনের টাকা তো বাড়িতে পাঠাতে হবে। না হলে সংসার চলবে কিভাবে। তাই বাড়িতে টাকা পাঠানোর জন্য তিনি একটি ব্যাঙ্কে যান। তিনি পড়াশোনা না জানায় লিখতে পারেন না। তাই ব্যাঙ্কের টাকা পাঠানোর ফর্ম নিয়ে তিনি ঘোরাফেরা করছিলেন। কার কাছে সাহায্য চাইবেন এমন ব্যক্তির তিনি সন্ধান করছিলেন। এমন সময় স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে আবির্ভাব ঘটে এক যুবকের। ফর্ম ভরে দেবেন বলে তিনি ফর্মটি নিয়েও নেন। শেখ পিয়ারুর সঙ্গে থাকা সাড়ে ৭ হাজার টাকাও তিনি নিয়ে নেন বলে অভিযোগ।
পাল্টা নিজের হাতে থাকা একটি রুমাল পিয়ারুর হাতে ধরিয়ে দেয় ওই প্রতারক। তারই সঙ্গে জানিয়ে দেয়, রুমালে ঢাকা রয়েছে ৫০ হাজার টাকার একটি বাণ্ডিল। যে ৫০ হাজার টাকার বাণ্ডিল ধরিয়ে দিয়েছে সে সাড়ে ৭ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যাবে তা কারও পক্ষেই ভাবা সম্ভব নয়। এমন সময় হঠাত্ আর এক যুবকের আবির্ভাব ঘটে দোতলায় থাকা ব্যাঙ্কের ওই শাখায়। ওই যুবক এসে প্রতারককে জানায়, নিচে একজন জরুরি কাজে তাঁকে ডাকছে। এক্ষুনি যেতে হবে। প্রতারক সঙ্গে সঙ্গেই নীচে নেমে যায়। যে যুবক প্রতারককে নীচে নামার কথা জানায় সে পিয়ারুর হাতে থাকা রুমালের একটি অংশ তুলে একটা ৫০০ টাকার নোটও বের করে নেয়। পিয়ারু তখন আরও নিশ্চিত হয় যে, ৫০০ টাকার নোটের বাণ্ডিল এটি। ফলে পালানোর প্রশ্নই নেই। নিশ্চয় কোনও জরুরি কাজে নিচে নেমেছে।
এ ভাবেই রুমাল চাপা নোটের বাণ্ডিল ধরে পিয়ারু দাঁড়িয়ে অপেক্ষ করতে থাকে। তারই মাঝে কোনও এক সময় দ্বিতীয়জনও কখন গা ঢাকা দিয়েছে বুঝতেই পারেনি পিয়ারু। ঘন্টাখানেক পর পিয়ারুর মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। তিনি নিচে নেমে দেখেন, কোথায় কে? কারও দেখা নেই। তখন রুমাল খুলে দেখেন, নোট কোথায়? সবই তো কাগজের টুকরো। টাকার মতো করে কাটা! মাথায় হাত পড়ে যায়। পিয়ারুর কথায়, “দুই যুবক এমন নিখুঁত অভিনয় করবে কী করে ভাবব! সত্যিই টাকা রয়েছে নিশ্চিত করতে একটি ৫০০ টাকার নোট পর্যন্ত বের করল। তখন কী করে ভাবতে পারি যে টাকা নেই। ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কেউ সাড়ে ৭ হাজার টাকা নিয়ে পালাতে পারে, এমনটা কী ভাবা যায়!” পরে কোতয়ালি থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগও জানান তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, আগে মাঝে-মধ্যে শহরের বিভিন্ন জায়গায় এমন দু’একটি ঘটনা ঘটলেও বেশ কিছুদিন এই ধরনের প্রতারণা বন্ধ ছিল। ফের তা শুরু হওয়ায় উদ্বেগে পুলিশও। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে। বর্তমানে সব ব্যাঙ্কেই সিসিটিভি থাকে। ব্যাঙ্কের ওই শাখা থেকে সিসিটিভি-র ফুটেজও সংগ্রহ করা হবে। পুলিশের আশা, দুষ্কৃতীদের ধরা সম্ভব হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy