Advertisement
E-Paper

সরকারি মাদ্রাসায় নেই হস্টেল, ভোগান্তি

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সরকারি মাদ্রাসা রয়েছে ১৯টি। কিন্তু তার একটিতেও হস্টেল নেই। ফলে, হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করার সুযোগ পায় না মাদ্রাসার অনেক পড়ুয়াই। মাদ্রাসায় হস্টেল থাকা উচিত বলে মনে করেন শিক্ষকেরাও। মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতির জেলা সম্পাদক মির্জা আজিবুর রহমান বলেন, “অনেক সচেতন-শিক্ষিত অভিভাবকেরাই চাইছেন, তাঁদের ছেলেমেয়ে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করুক। কারণ, হস্টেলে ভাল পরিবেশ পাবে।”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৫

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সরকারি মাদ্রাসা রয়েছে ১৯টি। কিন্তু তার একটিতেও হস্টেল নেই। ফলে, হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করার সুযোগ পায় না মাদ্রাসার অনেক পড়ুয়াই।

মাদ্রাসায় হস্টেল থাকা উচিত বলে মনে করেন শিক্ষকেরাও। মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতির জেলা সম্পাদক মির্জা আজিবুর রহমান বলেন, “অনেক সচেতন-শিক্ষিত অভিভাবকেরাই চাইছেন, তাঁদের ছেলেমেয়ে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করুক। কারণ, হস্টেলে ভাল পরিবেশ পাবে।” আজিবুর রহমান এলাহিয়া হাইমাদ্রাসার সহ-শিক্ষক। তাঁর কথায়, “সরকারি মাদ্রাসায় হস্টেল থাকলে ভালই হবে। মাদ্রাসা শিক্ষারই উন্নতি হবে।”

পরিস্থিতি দেখে মাদ্রাসায় হস্টেল তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। জেলা সংখ্যালঘু দফতর সূত্রে খবর, আগামী দিনে জেলার চারটি মাদ্রাসায় হস্টেল গড়ে উঠতে চলেছে। হস্টেল তৈরির জন্য সরকারি অনুদান পেয়েছে এই মাদ্রাসাগুলো। গত আর্থিক বছরে এলাহিয়া হাইমাদ্রাসা এবং মহিষাগেড়িয়া হাইমাদ্রাসা এই অনুদান পেয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে বলরামগড় হাইমাদ্রাসা এবং দোগাছিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা এই অনুদান পেয়েছে। চারটি ক্ষেত্রেই বরাদ্দ হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা করে। সংখ্যালঘু দফতরের জেলা আধিকারিক বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, “মাদ্রাসায় হস্টেল তৈরি হলে ছাত্রছাত্রীরা উপকৃত হবে। মাদ্রাসা শিক্ষারও আরও প্রসার হবে।” একই মত জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্রর। তাঁর কথায়, “রাজ্য সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে সব রকম চেষ্টা করছে। হস্টেল তৈরির উদ্যোগ তারই একটি।”

জেলার সরকারি মাদ্রাসায় হস্টেল না থাকায় পড়ুয়াদের অনেক দূর থেকে এসে পড়াশোনা করতে হয়। ফলে সমস্যায় পড়ে তারা। মহম্মদ মিরাজউদ্দিন, ছাত্রী মেহেরনেগার খাতুনের মতো মাদ্রাসার পড়ুয়াদের বক্তব্য, “অনেকেই দূর থেকে যাতায়াত করে পড়াশোনা চালায়। ফলে সময় ও অর্থ দুইই ব্যয় হয়। মাদ্রাসাতেই হস্টেল গড়ে উঠলে এই সমস্যা অনেকটা সুরাহা হবে।”

হস্টেল তৈরির অনুমোদন মেলায় খুশি ঘাটালের বলরামগড় হাইমাদ্রাসার টিচার-ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম। তাঁর কথায়, “এই মাদ্রাসায় এখন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬০৫। অনেকেই হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতে চায়। অনেক সচেতন-শিক্ষিত অভিভাবকেরাই চাইছেন, তাঁদের ছেলেমেয়ে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করুক।” তাঁর কথায়, “অনুমোদন মিলেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হস্টেল তৈরির কাজ শুরুর চেষ্টা চলছে।” পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৯টি সরকারি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি হাইমাদ্রাসা। ৩টি সিনিয়র মাদ্রাসা এবং ৩টি জুনিয়র মাদ্রাসা। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কয়েক হাজার। চলতি বছর জেলার ৯৩৩ জন মাদ্রাসা পরীক্ষা দিয়েছিল। এর মধ্যে ৩৭৭ জন ছাত্র। ৫৫৬ জন ছাত্রী। গত বছর ৮২২ জন মাদ্রাসা পরীক্ষা দিয়েছিল। এরমধ্যে ৩১৫ জন ছাত্র। ৫০৭ জন ছাত্রী। অর্থাৎ, গত বছরের থেকে এ বছর পরীক্ষার্থী বেড়েছে। এক সময় মুসলিম গ্রামগুলোয় শিক্ষার হার ছিল কম। কেউ কৃষিকাজ করে সংসার সামলাতেন। কেউ শ্রমিকের কাজ করতেন। পরে অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। দরিদ্র-অশিক্ষিত মুসলিম গ্রামগুলোয় শিক্ষার আলো পৌঁছয়। সম্প্রতি কেশপুরে একটি ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসা তৈরিরও অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য সরকার।

মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী সমিতির জেলা সম্পাদক মির্জা আজিবুর সাহেব বলছিলেন, “বেসরকারি স্কুলে পড়তে হলে পড়ার খরচ বেশি পড়ে। অনেক পরিবারই ওই খরচ বহন করতে পারে না। হস্টেল ফি-ও বেশি পড়ে। সরকারি মাদ্রাসার হস্টেলে সামান্য খরচেই ছাত্রছাত্রীরা থাকতে পারবে। গরিব পরিবারের কেউ কেউ মাঝপথেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। হস্টেল গড়ে উঠলে তাদেরও সুবিধে হবে। সামান্য খরচে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতে পারবে। মাদ্রাসায় হস্টেল তৈরির রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগটা সত্যিই ভাল।” প্রয়োজনীয় অনুমোদন মিলেছে। অর্থও বরাদ্দ হয়েছে। এ বার কবে ওই মাদ্রাসাগুলোয় হস্টেল গড়ে ওঠে, সেটাই দেখার।

no hostel west midnapore government madrassas madrassas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy