প্রস্তুতি: শ্যামবাজারে মন্ত্রীর ফ্রি কোচিং সেন্টার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
সুপারিশের পাঁচ জমা পড়ে গিয়েছে আগেই। তারা না হয় খাস! কিন্তু আম পাঁচশোও তো আছে। রাজনীতিকের কাছে তারাও তো ফেলনা নয়!
সপ্তাহে দু’দিন করে সন্ধ্যার পরে শ্যামবাজার পাঁচমাথা ছাড়িয়ে দেশবন্ধু পার্কের পিছন দিকে বাসস্ট্যান্ডে এখন ভিড় বাড়ছে বিনা পয়সার কোচিং সেন্টারে! পরিচিতদের মুখে মুখে শুনেই বাসস্ট্যান্ডের ওই নামহীন কোচিং সেন্টারে চলে আসছেন গ্রুপ-ডি পরীক্ষার আবেদনকারীরা। শ্যামবাজারের আশপাশের এলাকা তো বটেই। ব্যান্ডেল, শেওড়াফুলি, সাঁকরাইল থেকেও চলে আসছেন তরুণ-তরুণীরা। মক টেস্ট হচ্ছে। প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার একবারই যে সুযোগ পাওয়া যাবে, বারবার ঘুরে ঘুরে মনে করিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষক। কী ভাবে উত্তর লিখতে হবে, বোর্ডে লিখে দেখিয়ে দিচ্ছেন তা-ও।
মে মাসে গ্রুপ-ডি-র পরীক্ষা। ওই চাকরির জন্য লক্ষ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে শুনে বেকার যুবক-যুবতীদের চাকরির জন্য বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ দিতে মাসখানেক আগে এই কোচিং সেন্টার খুলেছেন ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী ও মানিকতলার তৃণমূল বিধায়ক সাধন পাণ্ডে। তাঁর দলের বিধায়কদের প্রত্যেকের কাছে পাঁচটি করে নাম চাওয়া হয়েছিল গ্রুপ-ডি-র নির্দিষ্ট কিছু নিয়োগের জন্য। সে সব নাম জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে আগেই। তার বাইরে সাধারণ ভাবে আবেদনকারীদের তিনটি ব্যাচে ভাগ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কোচিং সেন্টারে। সাধনবাবুর কথায়, ‘‘সবাই চাকরি পাবেনই, এমন তো নয়। কিন্তু সরকারি চাকরির জন্য কী ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, তার আন্দাজ তো দিতে পারছি। বেকারদের সামনে চাকরির দরজাটা খুলে দেওয়ার একটা পথ দেখাতে পেরেছি।’’
জনসংযোগ বাড়াতেই সাধনবাবুর এমন প্রয়াস। আর তাঁর প্রয়াসের অঙ্গ হিসাবে চাকরির পরীক্ষার প্রশিক্ষণে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন দুই শিক্ষক— বিদীপ্ত চক্রবর্তী ও অভিষেক সরকার। বিভিন্ন চাকরির প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজেই তাঁরা যুক্ত। কোনও নেতার উদ্যোগে এই ধরনের নিখরচার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আগে তাঁরা দেখেননি বলে জানাচ্ছেন। শিক্ষকদের বেতনের খরচ সাধনবাবুরই।
আরও পড়ুন:দক্ষিণে কে দ্বিতীয়, নজর উপনির্বাচনে
সেন্টারের বেশির ভাগ পড়ুয়া এ বারই প্রথম সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসছেন। কেউ বেসরকারি সংস্থার চাকরি করতে করতেই চেষ্টা করছেন সরকারি চাকরির। কেউ আবার সন্তান সামলে ঝালিয়ে নিচ্ছেন চাকরির প্রস্তুতি। ব্যান্ডেলের সুমনা মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কয়েক মাস পরেই আমার চল্লিশ বছর বয়স হবে। আগে ঝাড়খণ্ডে সরকারি চাকরি করতাম। কিন্তু স্বামীর চাকরির বদলি হওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিই। এ বার গ্রুপ ডি-তে লোক নেওয়া হবে শুনে কপাল ঠুকে আবেদন করছি। এই কোচিং সেন্টারে যেমন শেখাচ্ছে, আদা-জল খেয়ে পড়ছি!’’ উচ্চ মাধ্যমিকের পরে আর পড়া হয়নি মুনমুন দত্তের।
ছেলে এখন অষ্টম শ্রেণি। এ বারই প্রথম বার গ্রুপ-ডি পদে চাকরির পরীক্ষায় বসছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy