Advertisement
E-Paper

‘আমি চাষিদের কাছ থেকে জোর করেই জমি নেব, রাজি না হলে মারধর’

কোথাও কাটমানি, কোথাও জমি দখল। কেউ আড়ালে, কেউ প্রকাশ্যে। সাধারণ মানুষকে মেজো-সেজো-ছোট নেতাদের চোখরাঙানি চলছেই।কোথাও কাটমানি, কোথাও জমি দখল। কেউ আড়ালে, কেউ প্রকাশ্যে। সাধারণ মানুষকে মেজো-সেজো-ছোট নেতাদের চোখরাঙানি চলছেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২০ ০৪:২৭
সারদাবসান মৌজায় চাষজমিতে গড়ে ওঠা ভেড়ি। (ইনসেটে জাইদুল ইসলাম)  নিজস্ব চিত্র

সারদাবসান মৌজায় চাষজমিতে গড়ে ওঠা ভেড়ি। (ইনসেটে জাইদুল ইসলাম) নিজস্ব চিত্র

করোনা-কালে কাজ-কারবার অনেকটাই থমকে। তবে শেখ জাইদুল ইসলাম নিজেই বলছেন, তাঁর দম ফেলার ফুরসত নেই। অনিচ্ছুক চাষিদের ‘বোঝাতে’ হবে। না বুঝলে হুমকি থেকে উত্তম-মধ্যম! তার পর জোর করে দলিলে সই করানো— হ্যাপা তো কম নয়! মোদ্দা কথা, দো-ফসলি জমি ভেড়ি মালিকের হাতে তুলে দিতে হবে।

পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট ব্লকের সাগরবাড় এলাকার সারদাবসান গ্রামে বাড়ি বছর বত্রিশের জাইদুলের। শাসক দলে কোনও পদই নেই তাঁর। তবে এলাকার লোক তাঁকে ‘ডাকাবুকো নেতা’ বলেই চেনে। এবং বলে, চাষির থেকে জমি কেড়ে ভেড়ি বানাতে জাইদুল-বাহিনীর জুড়ি নেই।

রাখঢাক নেই জাইদুলেরও। স্পষ্টই বলছেন, ‘‘আমি চাষিদের কাছ থেকে জোর করেই জমি নেব। কেউ না দিতে চাইলে জবরদখল হবে। তাতেও কেউ রাজি না হলে মারধর করা হবে। প্রয়োজনে গাছে বেঁধে দলিলে টিপসই করানো হবে।’’

যে জেলা জমি বাঁচাতে রক্ত ঝরতে দেখেছে, যে জেলার ভগবানপুরে জোর করে ভেড়ি তৈরি নিয়ে গোলমালের জেরেই গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রাণ গিয়েছে তৃণমূল নেতা নান্টু প্রধানের, সেখানে এত দাপট আসে কোথা থেকে? অকুতোভয় জাইদুল নাম করছেন তৃণমূলের জেলা স্তরের শীর্ষ নেতাদের। দাবি করছেন, ‘‘শাসক দল থেকে পুলিশ-প্রশাসন— সবই তো আমাদের হাতে। আমাদের কথা না শুনলে পুলিশের চাকরি চলে যাবে।’’ আর ঘটনা হল, ভেড়ির দাপট রুখতে বিভিন্ন সংগঠন প্রশাসনে দরবার করেছে, জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছে ‘কোলাঘাট ব্লক মাছের ঝিল বিরোধী কৃষক সংগ্রাম কমিটি’, অথচ জাইদুলের নাম করে কোথাও অভিযোগ হয়নি।

আরও পড়ুন: নেওয়ার লোক নেই? অ্যাম্বুল্যান্সে করোনা রোগী-মৃত্যুর অভিযোগ

আরও পড়ুন: ৬৪ সপ্তাহ চেয়েছিল টিকা সংস্থা, ব্যাখ্যা দিচ্ছে আইসিএমআর

নন্দীগ্রামের জেলা জুড়ে এখন কৃষিজমি কমছে, ভেড়ি বাড়ছে। প্রচুর টাকা ঘুরছে ভেড়ির কারবারে। আর দিকে দিকে জাইদুলের মতো লোকেদের হাতে সেই বেআইনি কারবারের রাশ। বাম আমলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন জাইদুল। কিছু দিন ঠিকাদারিও করেছেন। ২০১১-তে তৃণমূল সরকার গড়ার পরে জমির দালালি শুরু। তার পর মাটির এক চিলতে বাড়ির জায়গায় মাথা তুলেছে ঝাঁ চকচকে বাড়ি। দামি বাইক, সানগ্লাস, পরনে জিনস্‌ আর টি-শার্টের জাইদুল সব সময় জনা পাঁচেক সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে ঘুরছেন। আর যখন ‘অপারেশনে’ বেরোন, সঙ্গে ২০-২৫ জনের বাহিনী। ভোটের সময়ও জাইদুল-বাহিনী দাপিয়ে বেড়ায় বলে অভিযোগ।

আর এমন বাহিনীর জোরেই কোলাঘাট ব্লক জুড়ে লকডাউনেও বন্ধ ছিল না ভেড়ি তৈরি। দেড়িয়াচক, ভোগপুর, সাগরবাড়, বৃন্দাবনচক, খন্যাডিহি, কোলা ইত্যাদি এলাকায় চলছে জমি ‘লুট’। খাতায় কলমে চাষের জমির চরিত্র বদল না করেই তৈরি হচ্ছে ভেড়ি। জেলা কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর আশিস বেরার আশঙ্কা, ‘‘যে ভাবে চাষের জমিতে ভেড়ি হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে খাদ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ, চাইলেও আর এই জমি চাষযোগ্য হবে না।’’

এ দিকে, জাইদুল তৃণমূল নেতাদের নাম করে দাপট দেখালেও তৃণমূলের কোলাঘাট ব্লক সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেন, ‘‘এই নামে ওই এলাকায় দলের কেউ আছেন

বলে আমার জানা নেই। ওঁর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগও করেনি।’’ কিন্তু জাইদুল যে তৃণমূল নেতাদের নাম নিয়ে বলছেন, সবাই ওঁর হাতের মুঠোয়? অসিতের জবাব, ‘‘উনি যাঁদের নাম নিয়েছেন, তাঁদেরই জিজ্ঞাসা করুন।’’ তবে তৃণমূলের সারদাবসান বুথ সভাপতি সমিত বেরা মানছেন, ‘‘জাইদুল আমাদের দলের সমর্থক। তবে ও জোর করে চাষিদের থেকে জমি নেয় এটা ঠিক নয়। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অনিচ্ছুক চাষিদের বুঝিয়ে রাজি করায়। তার বিনিময়ে ভেড়ি মালিকের থেকে কিছু টাকা পায়।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর সাফ বক্তব্য, ‘‘দল জোর করে জমি নেওয়ার বিপক্ষে। জোর করে কেউ জমি নিতে চাইলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’’ অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাসও।

জাইদুল কিন্তু হেসেই বলছেন, ‘‘অভিযোগ করবে? কার ঘাড়ে কটা মাথা!’’

Kolaghat Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy