Advertisement
E-Paper

ছ’বছর পরে হোম থেকে ঘরের পথে কিশোর

এ দিক-ও দিক ঘুরতে ঘুরতে সে মাহিষাদলে চলে যায়। সেখানের পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। সে দিন নাম ঠিকানা বলতে পারেনি সুমন। তাই  জেলার শিশুকল্যাণ কমিটির মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত তার ঠাঁই হয় ‘বোধোদয়ে’। সেখানেই জানা যায়, সুমনের মানসিক সমস্যাও রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:২৭
দাদার সঙ্গে সুমন (ডানদিকে)। নিজস্ব চিত্র।

দাদার সঙ্গে সুমন (ডানদিকে)। নিজস্ব চিত্র।

ভাইয়ের সঙ্গে কাজে বেরিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল মধ্যপ্রদেশের ছোট্ট সারু। এক বিদেশি দম্পতি তাকে দত্তক নেন। সেই দম্পতির সঙ্গেই সারু চলে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। প্রায় ২৫ বছর পরে গুগলের সাহায্যে মধ্যপ্রদেশের বাড়িতে ফিরতে পেরেছিল সারু। নিজের মা’য়ের কাছে।

দেব পটেল অভিনীত ‘লায়ন’ সিনেমার দৌলতে সারুর গল্পের সঙ্গে বর্তমানে অনেকেই পরিচিত। ১২ বছরের সুমন বিশ্বাসের গল্পটাও খানিকটা সারুর মতো। হারিয়ে যাওয়া প্রায় ছ’বছর পরে বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরছে সে। তবে গুগলের সাহায্যে নয়, কাঁথির ফরিদপুরের ‘বোধোদয়’ আবাসিকের অধ্যক্ষ তাপস জানার সহায়তায়।

আবাসিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সুমনের বাবা-মা আসানসোলের অন্ডালে থাকতেন। ছোট বেলায় তার বাবা গোপাল বিশ্বাসের মৃত্যু হয়। মা অঞ্জনাদেবী রানিগঞ্জে কয়লাখনিতে কাজ করতেন। অভাবের সংসারে ছয় বছর বয়সেই সুমনকে স্থানীয় মিষ্টির দোকানে কাজ করতে পাঠান তার মা। সেখান মালিকের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ২০১২ সালে ট্রেনে চেপে পালিয়ে যায় সুমন। এ দিক-ও দিক ঘুরতে ঘুরতে সে মাহিষাদলে চলে যায়। সেখানের পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। সে দিন নাম ঠিকানা বলতে পারেনি সুমন। তাই জেলার শিশুকল্যাণ কমিটির মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত তার ঠাঁই হয় ‘বোধোদয়ে’। সেখানেই জানা যায়, সুমনের মানসিক সমস্যাও রয়েছে।

২০১৭ সালের গোড়ায় ওই আবাসিকের অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দেন তাপসবাবু। তিনি আবাসিকের সব শিশুদের গুরুত্ব দিয়ে কাউন্সেলিং করান। সেই সময়ই সুমনকে লক্ষ করেন তিনি। তাপসবাবুর বলেন, “সুমন সব সময় অন্ডাল স্টেশন, রেললাইন, বাড়ি, পুকুর, সোনামুখী, এই সব কথাগুলি বলত। ওই শব্দগুলিকে সম্বল করেই ওকে বাড়ি ফেরানো লড়াই শুরু করি।’’

কেমন ছিল সেই লড়াই? তাপসবাবু জানান, আবাসিকের পক্ষ থেকে প্রথমে আসানসোল, রানিগঞ্জ এবং সোনামুখী থানায় যোগাযোগ করা হয়। ২০১২ সালের নথি খুঁজে দেখেন পুলিশ আধিকারিকেরা। এর মধ্যে একদিন সুমনকে নিয়ে সোনামুখী যান তাপসবাবু। পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে শুরু হয় পাড়ায় পাড়ায় খোঁজা। শেষ পর্যন্ত সোনামুখী থানার রাধামোহনপুরের নিত্যানন্দপুরে গিয়ে খোঁজার পর্ব শেষ হয়।

বর্তমানে বাঁকুড়ার নিত্যানন্দপুরেই থাকেন সুমনের দাদা সঞ্জীব বিশ্বাস। তিনিও সেখানের এক মিষ্টির দোকানে কাজ করেন। ভাইকে দেখে চিনতে পারেন সঞ্জীববাবু। ইতিমধ্যে সুমনের মা অঞ্জনাদেবীর মৃত্যু হয়েছে। ভাইকে ফিরে পেতে হোমের কাছে আবেদন করেন তার দাদা। এর পরে এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের শিশুকল্যাণ কমিটি’র মাধ্যমে সুমনকে সঞ্জীববাবুর হাতে তুলে দেন ‘বোধোদয়’ আবাসিক কর্তৃপক্ষ।

সঞ্জীববাবু বলেন, “তাপসবাবু না থাকলে ভাইকে হয়তো আর ফিরে পেতাম না। তিনি যেভাবে চেষ্টা করেছেন, তা অতুলনীয়। এ বার ভাইকে পড়াশোনা শেখাব। ভালভাবে মানুষ করার চেষ্টা করব। আর এতদিন পরে নিজের চেষ্টায় সাফল্য পেয়ে তাপসবাবুর বক্তব্য, ‘‘সুমনকে ওর বাড়ির লোকেদের হাতে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’’

Missing Return
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy