আমরা ২০০৯ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই। কোনও দিন ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি আমাকে বন্ধনমুক্ত করে উনি চলে যাবেন। এক নির্ভীক, বলশালী পুরুষের স্ত্রী হিসেবে আমি গর্ব অনুভব করতাম। জওয়ানের স্ত্রী হিসেবে প্রথম ধাক্কাটা খেয়েছিলাম, যখন ছত্তীসগঢ়ের দান্তেওয়াড়ায় একসঙ্গে ৭৬ জন সিআরপিএফ জওয়ানের প্রাণ নিয়েছিল মাওবাদীরা। সে দিন আমি এই চাকরির ভয়াবহতা উপলব্ধি করি। বুঝতে পারি, এটা সাধারণ চাকরি নয়। কিছু ছেলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে হয়তো এই চাকরি গ্রহণ করেন। কিন্তু তার আগে তাঁকে অনেক শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা দিতে হয়, যেটা সবার থাকে না।
এই চাকরির শর্তই হল— পরিবার পরে, দেশের প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য আগে। তাই জওয়ানরা তাঁদের সন্তানের জন্মদান বা পারিবারিক যে কোনও সুখের মুহূর্তে উপস্থিত থাকতে পারেন না। আর পাঁচটা সাধারণ চাকরির মতো বাড়ির খাবার খেয়ে বেরোতে পারেন না বা বাড়ি ফিরে রোজ মা, স্ত্রী-সন্তানের মুখও দেখতে পারেন না। অপর দিকে, তাঁদের পরিবারকেও অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। সব দায়িত্ব, কর্তব্য একা পালন করতে হয় এবং অপেক্ষা করতে হয় কবে আবার বাড়িটা প্রাণ ফিরে পাবে। কিন্তু এই অপেক্ষার অবসান যদি কফিনবন্দি দেহের মাধ্যমে হয়?
তাই আমি যুদ্ধ চাই না। আমি শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। যুদ্ধ মানে আর্থিক, সামাজিক এবং অবশ্যই মানবসম্পদের ক্ষতি। যুদ্ধ ধ্বংস ডেকে আনে। তাই যে কোনও বড় যুদ্ধের পরেই শান্তি-চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আমি চাইব, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তা বের করতে। আজ আমার সব অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। আর সময়ে-অসময়ে ফোন বেজে ওঠে না। আর আমাকে উনি বলেন না, ‘‘দেখো তো, অমুক তারিখে ছুটি পেলে ভাল হবে? নাকি আর একটু পরে যাব?’’ আর ভিডিয়ো কল করে মেয়ের সঙ্গে খুনসুটিও হয় না।