Advertisement
E-Paper

বড়জোড়ায় ভাঙচুর বিধায়কের গাড়ি

ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই জেলা জুড়ে একের পর এক সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠে আসতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার গণনা শেষ হয়েছে। তার পর থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বিরোধীদের উপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০২:২২
সুজিতবাবুর গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে বেলিয়াতোড় মোড়ে সিপিএম এবং কংগ্রেস কর্মীদের পথ অবরোধ। (ইনসেটে) রাইপুরে ভাঙচুর হওয়া মোটরবাইক। ছবি: অভিজিৎ সিংহ ও উমাকান্ত ধর।

সুজিতবাবুর গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে বেলিয়াতোড় মোড়ে সিপিএম এবং কংগ্রেস কর্মীদের পথ অবরোধ। (ইনসেটে) রাইপুরে ভাঙচুর হওয়া মোটরবাইক। ছবি: অভিজিৎ সিংহ ও উমাকান্ত ধর।

ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই জেলা জুড়ে একের পর এক সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠে আসতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার গণনা শেষ হয়েছে। তার পর থেকেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বিরোধীদের উপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠছে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে।

শুক্রবার মাঝ রাতে বড়জোড়া কেন্দ্র থেকে জয়ী সিপিএমের সুজিত চক্রবর্তীর গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। শনিবার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুজিতবাবুর নিজস্ব গাড়িটি রাতে বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে খোলা আকাশের নীচে রাখা থাকে। অভিযোগ, শুক্রবার রাতে গাড়িটির ভাঙচুর করে দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাশের দাবি, বোমা ফাটার মতো জোর শব্দ পেয়ে তাঁরা সুজিতবাবুকে খবর দেন। সুজিতবাবুর দাবি, ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি দেখতে পান, গাড়ির কাঁচ ভাঙা। নীচ থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। সুজিতবাবু বলেন, “ভাঙচুরের পরে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার জন্য গাড়ির নীচে বোমা ফাটানো হয়েছিল।’’ ঘটনায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ করছেন তিনি। বেলিয়াতোড় থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন সুদীপবাবু।

শনিবার এই ঘটনার প্রতিবাদে বড়জোড়ার সিপিএম এবং কংগ্রেস কর্মীরা বেলিয়াতোড় মোড়ে প্রতিবাদ মিছিল করে প্রতীকী পথ অবরোধও করেন। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী বলেন, “গণনার রাত থেকেই বড়জোড়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন গ্রামে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আমাদের কর্মীদের উপর আক্রমণ শুরু করেছে। এ বার খোদ প্রার্থীকেই নিশানা করা হল।’’ তিনি জানান, দলের পক্ষ থেকে এ দিন দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে বেলিয়াতোড় থানার সামনেও বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।

শুক্রবার রাতে রাইপুর এবং খাতড়াতেও সিপিএমের পার্টি অফিস ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। জেলার সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, শুক্রবার রাত আটটা নাগাদ রাইপুর সবুজবাজারের এলাকায় দলের জোনাল অফিসে হামলা চালায় শাসক দল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তাঁদের দাবি, সেই সময় দলের কয়েকজন কর্মী অফিসের ভিতরেই ছিলেন। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় দুষ্কৃতীরা ঢুকতে পারেনি। কিন্তু পার্টি অফিসের সামনে রাখা ৩টি মোটরবাইক এবং ৬টি সাইকেল ভেঙে চলে যায়। সামনে টাঙানো পতাকাও হামলাকারীরা খুলে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের রাইপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক রুবেন টুডুর অভিযোগ, “শুক্রবার রাতে যুব তৃণমূল নেতা তথা মেলেড়া পঞ্চায়েতের প্রধান রাজু সিংহ, তাঁর ভাই সনৎ সিংহ এবং তৃণমূল নেতা অনিল মাহাতোর অনুগত লোকজন এই হামলা চালিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভোটে জেতার পর থেকেই গোটা এলাকা জুড়ে শাসক দল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সিপিএমেরর কর্মী সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছে। পার্টি অফিস খুলতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।

যদিও রাইপুর ব্লক যুব সভাপতি রাজকুমার সিংহ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যায় আমাদের কর্মী সমর্থকেরা বাজি ফাটিয়ে আনন্দ করছিলেন। তা দেখে জোনাল অফিসের সামনে বসে থাকা সিপিএমের নেতারা ভয়ে ভিতরে ঢুকে যান। সেই সময় হুড়োহুড়িতে ওরাই মোটরবাইক আর সাইকেল ফেলেছে। এখন আসল ঘটনা চেপে গিয়ে আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।’’ বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, “জেলায় শান্তি বজায় রয়েছে। ভোট গণনার আগে সিপিএমের লোকেজন ক্ষমতায় আসছে’ প্রচার করে এলাকায় এলাকায় অশান্তি তৈরির চেষ্টা করেছে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে আমরা শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছি”। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সব ঘটনারই মৌখিক অভিযোগ পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। যে সব ঘটনার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে সেগুলির তদন্ত চলছে।

খাতড়ার আড়কামায় দলের লোকাল অফিসে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতি। তাঁর অভিযোগ, বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। অজিতবাবুর দাবি, শনিবার সকালে দলের কর্মীরা তালা ভেঙে ফের পার্টি অফিসে ঢুকেছেন।

জেলা জুড়ে চলতে থাকা রাজনৈতিক সন্ত্রাস রুখতে এ দিন দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে স্মারকলিপি দেন বাম কর্মীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রতীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের বহু কর্মীকে গ্রাম ছাড়া করা হয়েছে। যাঁরা এখনও গ্রামে রয়েছেন তাঁদের জরিমানা করা হচ্ছে। এই সব বন্ধ করতে পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার দাবি জানিয়েছি আমরা।” জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেন, “কোথাও অশান্তির খবর পেলেই আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। বিরোধীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে কাজ করায় এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিষ্ণুপুরেও। শুক্রবার বিষ্ণুপুর থানার কাশীচটা গ্রামের ঘটনা। আলাউদ্দিন খাঁ নামে ওই কংগ্রেস কর্মী বিষ্ণুপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর ছেলে আজমির আলি খাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনেছে বিজেপিও। বিজেপির রাজ্য নেতা সুভাষ সরকার বলেন, “ওন্দা বিধানসভার নাকাইজুড়িতে আমাদের কর্মীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। রানিবাঁধ কেন্দ্রের আখখুটার মোড়েও আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপি কর্মীরা। রাজ্যপালকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি।’’

assembly election 2016 MLA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy