Advertisement
E-Paper

মোদীর শপথের দিনেই বিজেপি কর্মী খুন

পেশায় খেতমজুর সুশীলবাবু কেতুগ্রাম ১-এর পাণ্ডুগ্রামের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার কেতুগ্রাম থানায় সুশীলবাবুর স্ত্রী অপর্ণা মণ্ডল অভিযোগ করে জানান, বেলা ১১টা নাগাদ তাঁর স্বামী বাড়ির অদূরে গলির সামনে একাই বিজেপির পতাকা বাঁধছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০২:২২
কান্নায় ভেঙে পড়েছে নিহতের পরিবার। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

কান্নায় ভেঙে পড়েছে নিহতের পরিবার। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লিতে শপথগ্রহণ করবেন নরেন্দ্র মোদী। তা উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে এলাকায় চলছিল মিছিলের প্রস্তুতি। তার আগেই বৃহস্পতিবার সকালে খুন হলেন সুশীল মণ্ডল (৫২) নামে কেতুগ্রামের এক বিজেপি কর্মী। অভিযোগের তির, তৃণমূলের দিকে। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পেশায় খেতমজুর সুশীলবাবু কেতুগ্রাম ১-এর পাণ্ডুগ্রামের পূর্বপাড়ার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার কেতুগ্রাম থানায় সুশীলবাবুর স্ত্রী অপর্ণা মণ্ডল অভিযোগ করে জানান, বেলা ১১টা নাগাদ তাঁর স্বামী বাড়ির অদূরে গলির সামনে একাই বিজেপির পতাকা বাঁধছিলেন। অভিযোগ, আচমকা লাগোয়া গ্রাম মালুনের বাসিন্দা লক্ষ্মণ মণ্ডল, পাণ্ডুগ্রামের জগন্নাথ ঘোষ ও রাজকুমার ঘোষ ছুরি হাতে সুশীলবাবুর বুকে কোপাতে থাকে। নিহতের স্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘রাজকুমার আমার স্বামীকে ‘বিজেপির বড় নেতা হয়েছিস। তোকে শেষ করে দেব’ বলতে বলতে কোপাতে থাকে।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময়ে এলাকায় তেমন লোকজন ছিল না। গলির সামনে একটি দোকান থাকলেও, তা তখন বন্ধ ছিল।

সুশীলবাবুর চিৎকারে জড়ো হন গ্রামবাসীর একাংশ ও তাঁর স্ত্রী। ততক্ষণে ছুটে চম্পট দেয় অভিযুক্তেরা, জানান অপর্ণাদেবী। সুশীলবাবুকে কেতুগ্রাম ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানান।

এই ঘটনার পরেই তৃণমূল-বিজেপি চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিজেপির পূর্ব বর্ধমানের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা দলের তরফে কেতুগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অনিল দত্তের দাবি, ‘‘সুশীলবাবু প্রায় ১৫ বছর ধরে আমাদের কর্মী। অতীতেও তাঁকে তৃণমূল নানা ভাবে হেনস্থা করেছে।’’ নিহতের স্ত্রী জানান, ভোটের আগে স্বামীর বিরুদ্ধে তৃণমূল তাদের দলীয় পতাকা ছেঁড়ার ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করে। এলাকার রাজনৈতিক মহল সূত্রে জানা যায়, সুশীলবাবুর গ্রামে চারটি বুথ রয়েছে। তার দু’টিতে তৃণমূল ও দু’টিতে বিজেপি লিড পেয়েছে। আর পাণ্ডুগ্রাম পঞ্চায়েত থেকে তৃণমূলের মোট লিড মাত্র ৬৯ ভোটের। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, এলাকায় দলের এই ভাল ফলের অন্যতম কারিগর ছিলেন সুশীলবাবু। সেই ‘রোষে’ই তৃণমূলের হাতে খুন হতে হল তাঁকে। ঘটনার পরে বিজেপির নেতৃত্ব সম্প্রতি বাংলায় ‘রাজনৈতিক হিংসায় ৫৪ জন খুন’ নিয়ে যে চাপানউতোর চলছে সেটিকেও উস্কে দিয়েছেন। দলের কেতুগ্রাম ১ মণ্ডল সভাপতি বুদ্ধদেব রায়ের কথায়, ‘‘এটা যে রাজনৈতিক খুন, সেটা আশা করি এ বার স্বীকার করবে পুলিশ-প্রশাসন।’’ যদিও, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈকত ঘোষের দাবি, ‘‘প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, জমির ফসল নষ্টের জেরে বিবাদ হয়। তার জেরে এই ঘটনা।’’

স্থানীয় বাসিন্দা সুদীপ মিত্র, রাজেশ ঘোষ-সহ গ্রামবাসীর একাংশ জানান, লক্ষ্মণ তৃণমূলের পাণ্ডুগ্রাম অঞ্চল সভাপতি। জগন্নাথ ও রাজকুমার কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। যদিও বিধায়কের দাবি, ‘‘অভিযুক্তদের সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। এটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়। সুশীলবাবু পাণ্ডুগ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান অনুপ ঘোষের জামাইবাবু। তিনি বিজেপি করতেন বলে জানি না।’’ বিধায়ক ও প্রধানের দাবি, সুশীলবাবু একটি তিলের জমিতে ভাগচাষ করতেন। সেখানে রাজকুমারের ভেড়ার পাল জমিতে ঢুকে ফসল খাচ্ছিল। তা নিয়ে গোলমাল বাধে। যদিও এই দাবি অস্বীকার করেছেন নিহতের স্ত্রী।

যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তেরা পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

BJP Political Murder Oath Taking Ceremony
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy