Advertisement
E-Paper

বিভ্রান্তি নিয়ে রেশনের বিজ্ঞপ্তি, মোদী-পথেই কি সুরাহার দিশা

ভর্তুকির চাল-গম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো বুধবার সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হল বটে, কিন্তু সমস্যা সুরাহার কোনও দিশা প্রশাসন এখনও খুঁজে পাচ্ছে না। বস্তুত সঙ্কট এতটাই যে, চাহিদা-জোগানের ফারাক ঘোচানোর তাগিদে মোদী সরকারের দেখানো পথেও পথে চলার কথাও মাথায় আসছে নবান্নের একাংশের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৫৫
আধার কার্ডের পর রেশন কার্ড। গ্রাহকের নামের জায়গায় একাধিক পশুর নাম, রীতিমতো ইংরাজি হরফে। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। প্রশাসন সূত্রে খবর, সংশোধন করে ওই কার্ড গ্রাহকদের দেওয়া হবে।–নিজস্ব চিত্র

আধার কার্ডের পর রেশন কার্ড। গ্রাহকের নামের জায়গায় একাধিক পশুর নাম, রীতিমতো ইংরাজি হরফে। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। প্রশাসন সূত্রে খবর, সংশোধন করে ওই কার্ড গ্রাহকদের দেওয়া হবে।–নিজস্ব চিত্র

ভর্তুকির চাল-গম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো বুধবার সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হল বটে, কিন্তু সমস্যা সুরাহার কোনও দিশা প্রশাসন এখনও খুঁজে পাচ্ছে না। বস্তুত সঙ্কট এতটাই যে, চাহিদা-জোগানের ফারাক ঘোচানোর তাগিদে মোদী সরকারের দেখানো পথেও পথে চলার কথাও মাথায় আসছে নবান্নের একাংশের।

রান্নার গ্যাসে ভর্তুকির সুবিধা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিতে সম্পন্নদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই ‘লেট্‌স গিভ ইট আপ’ স্লোগানে সাড়াও মিলেছে ভাল। আমলাদের একাংশ চাইছেন, দু’টাকার চাল-গমের চাহিদা কমাতে এ রাজ্যেও সরকার একই রকম আহ্বান করুক। তাতে কিছুটা হলেও কাজ হতে পারে।

তবে নবান্নের ওই অংশ বিলক্ষণ জানে যে, এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত মেলা কার্যত অসম্ভব। বিশেষত বিধানসভা ভোটের মুখে এ হেন সিদ্ধান্তের পথে তৃণমূলনেত্রী কদাপি হাঁটবেন না। এক আমলা বলেন, ‘‘ভাবনাচিন্তায় থাকলেও ব্যবস্থাটি এখনই কার্যকর করা হচ্ছে না। ভোটের পরে এ সব ভাবা যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছানুসারে এখন কেউ চাইলেই দু’টাকার চাল-গম পাবেন।’’

এবং সেই ইচ্ছে পূরণ করতে গিয়ে খাদ্য দফতরের কালঘাম ছোটার জোগাড়। ডিজিটাল রেশন কার্ডের পাশাপাশি পুরনো কার্ডেও সস্তার চাল-গম মিলবে— সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে এই আকস্মিক ঘোষণা ইস্তক কর্তারা রীতিমতো আতান্তরে পড়ে গিয়েছেন। এ দিন এই মর্মে দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। আর আড়ালে প্রমাদ গুনেছেন আধিকারিকেরা। ওঁদের হিসেবে, মুখ্যমন্ত্রীর কথা রাখতে হলে সস্তার চাল-গমের গ্রাহকসংখ্যা এক লাফে অন্তত এক কোটি বাড়বে। যা পরিস্থিতি, তাতে সকলের চাহিদা পূরণের কোনও নিশ্চয়তা তাঁরা দিতে পারছেন না।

উপরন্তু এ দিন বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও রেশন দোকানে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে দু’টাকার চাল-গম মেলার আশা নেই। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, সেটা আগামী শনিবার শুরু হবে। পুরনো কার্ডে সস্তার চাল-গম যেমন পাওয়া যাবে, তেমন শুধু ওই কার্ড দেখিয়েই মিলবে কেরোসিন।

পাশাপাশি চলবে কার্ডের ভুল সংশোধনের পর্ব। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আবেদন পেলে তিন মাসের মধ্যে নতুন রেশন কার্ডের ভুল শোধরানো হবে। জাতীয় বা রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনার বাইরে থাকা যে সব মানুষ সস্তার চাল-গম পেতে আগ্রহী, তাঁদের আবেদন করতে হবে রেশন ডিলারের কাছে। অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা, এপিএল কিংবা বিপিএল— যে কোনও গোত্রের কার্ডধারী আপাতত এই সুবিধা পাবেন। পরে রেশনিং অফিসার তাঁর আর্থিক অবস্থা যাচাই করবেন। ডিলার কোনও কারণে চাল-গম দিতে না-পারলে ‘ডিউ স্লিপ’ মিলবে, যা দেখিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে দু’টাকা কিলোর চাল-গম তোলা যাবে।

খাদ্য-কর্তাদের দাবি: এত দিন ৭ কোটি ২০ লক্ষ মানুষকে দু’টাকায় চাল-গম দিতে রাজ্যকে বছরে ৪৩০০ কোটি টাকা ভর্তুকি গুনতে হতো। মুখ্যমন্ত্রী এ বার পুরনো কার্ডধারীদেরও প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসায় ভর্তুকির বহর অন্তত হাজার কোটি টাকা বাড়বে তো বটেই, সকলে সুবিধে নিতে চাইলে চাল-গম জোগানোও দস্তুরমতো কঠিন হবে। কী রকম?

দফতরের হিসেবে, মে মাসের ভোট পর্যন্ত প্রকল্পটি চালাতেই অন্তত ১৮-২০ লক্ষ টন চাল-গম লাগবে। এখন গুদামে মজুত সাড়ে ১০ লক্ষ টন। আরও ৬ লক্ষ টন সংগ্রহ হওয়ার কথা। তার পরেও অন্তত ২ লক্ষ টনের ঘাটতি থাকছে। সংগ্রহ যদি কম হয়, ঘাটতি আরও বাড়বে। যদিও এ দিন খাদ্যমন্ত্রী দাবি, ‘‘এখনই বোঝা যাচ্ছে না, ঠিক কত চাল-গম লাগবে। তবে অভাব নেই। সংগ্রহের কাজ চলছে। তা রেশন দোকানে পৌঁছাতেও সমস্যা হবে না।’’ মন্ত্রীর কথায়, ‘‘সরকারি আদেশনামা বেরিয়ে গিয়েছে। এ বার বিলিবণ্টন শুরু হবে।’’

খাদ্যমন্ত্রী জানান, ডিস্ট্রিবিউটরেরা রেশন দোকানে মাল পৌঁছে দেবে। তার খরচ মিটিয়ে দেবে সরকার। পরিস্থিতি যাচাই করতে খাদ্য-কর্তারা এ দিনও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জেলায় জেলায় কী ভাবে দ্রুত চাল-গম পৌঁছে দেওয়া যায়, কী ভাবে বাড়তি টাকার সংস্থান করা যায়, সে সব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

একই সঙ্গে জেলায় জেলায় রেশন-বিক্ষোভও চলছে। যার প্রেক্ষাপটে আক্রমণ জারি রেখেছে বিরোধীরা। এ দিন বারাসতে সিপিএম নেতা গৌতম দেবের অভিযোগ, ‘‘বরাহনগরে ২ লক্ষ ৫৪ হাজার মানুষের মধ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ড পেয়েছেন মাত্র ৭২ জন!’’ সরকারপক্ষের দাবি: সরকারি নির্দেশনামা জারির আগে রেশন ডিলারেরা বুঝতে পারেননি, কী ভাবে খাদ্যশস্য বিলি হবে। শনিবার থেকে জটিলতা কেটে যাবে বলে তাদের আশা। ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গোলমাল পাকানো হচ্ছে। — মন্তব্য পুর-নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy