Advertisement
E-Paper

বেশি দামে জমি কিনে সোহরাবের মুনাফা চার গুণ

কাঠা-প্রতি জমির বাজারদর ছিল ৩০ হাজার টাকা। তিনি কিনে নেন দ্বিগুণেরও বেশি দিয়ে, ৭০ হাজার টাকা দরে। দু’-পাঁচ কাঠা নয়, তিনি কিনে নিয়েছিলেন এক লপ্তে ২৬০০ কাঠা জমি! এখন সেই জমির দর তিন লক্ষ টাকা কাঠা। মুনাফা চার গুণ!!

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২০
মহম্মদ সোহরাব

মহম্মদ সোহরাব

কাঠা-প্রতি জমির বাজারদর ছিল ৩০ হাজার টাকা। তিনি কিনে নেন দ্বিগুণেরও বেশি দিয়ে, ৭০ হাজার টাকা দরে। দু’-পাঁচ কাঠা নয়, তিনি কিনে নিয়েছিলেন এক লপ্তে ২৬০০ কাঠা জমি! এখন সেই জমির দর তিন লক্ষ টাকা কাঠা। মুনাফা চার গুণ!!

বেশি দিন নয়, বছর পাঁচেক আগেকার ঘটনা। দক্ষিণ শহরতলির বাসন্তী হাইওয়ে লাগোয়া হাতিশালা এলাকায় যত জমি আছে, সব তাঁর চাই। শুধু এই জন্যই তখনকার বাজারদরের দ্বিগুণেরও বেশি দাম দিয়ে ওই ২৬০০ কাঠা জমি কিনে নিয়েছিলেন মেছুয়ার ফল-মাফিয়া মহম্মদ সোহরাব। এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, তাঁকে এক দিন সাতসকালে ফোন করেন সোহরাব। তত দিনে শহরের একাধিক ব্যবসায়ী ওই জমি কেনার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন। সম্ভবত সেই খবর পেয়েই ফোনে বললেন, অন্য কাউকে যেন জমি বিক্রি করা না-হয়। তিনি দ্বিগুণ দাম দিয়ে একাই সব কিনে নেবেন।

ওই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘প্রথমটা অবাক হয়েছিলাম! এত জমি, তার দ্বিগুণ দাম, এক জনই কিনবেন? তা, সত্যি সত্যি কিনেও নিলেন। কোনও দরাদরি করেননি। আমরা সাত-আট জন মিলে সব বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলাম।’’ তার জন্য তিনি এক কোটিরও বেশি টাকা ‘দালালি’ পেয়েছেন বলে জানান ওই ব্যবসায়ী। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সোহরাব সাহেব খুব ভাল খরিদ্দার। রইস আদমি।’’

সোহরাবের কেনা ওই জমির দাম এখন কাঠা-পিছু তিন লক্ষ টাকা ছুঁয়েছে। দালালি পাওয়া সেই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘সোহরাব সাহেবের মুনাফার অঙ্কটা একটু ভাবুন! প্রতি কাঠায় অন্তত দু’লক্ষ ২০ হাজার টাকা লাভ।’’ মুচকি হেসে ওই জমি-ব্যবসায়ীর মন্তব্য, শুধু ফল ব্যবসা নয়, জমির ব্যবসাটাও ভালই বোঝেন সোহরাব। ভাল যে বোঝেন, দাম বাড়িয়ে ওই ২৬০০ কাঠা জমি কিনে নেওয়ার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে সেটা ব্যাখ্যা করলেন ওই ব্যবসায়ী। তিনি জানান, কলকাতার বাইরে সোহরাবের তেমন প্রভাব নেই। সেখানে দাপট দেখিয়ে কম দামে বেশি জমি কিনতে পারেন না। সেই জন্য দাম বাড়িয়ে দিয়ে জমি কিনে নেন। ‘‘এখন একাই জমির দাম ঠিক করছেন। তাঁকে বলার মতো কেউ নেই,’’ বলছেন ওই ব্যবসায়ী।

মেছুয়া ফলপট্টি সোহরাবের আদি সাম্রাজ্য। ইদানীং জমি-বাড়িরও একচেটিয়া কারবারি হয়ে উঠতে চাইছিলেন তিনি। ফলপট্টির অনেকের মতে, সোহরাব এমনই। বরাবর লক্ষ্যে অবিচল। তাই সামান্য ফল বিক্রেতা থেকে হয়েছেন ফল-মাফিয়া। তাতে সন্তুষ্ট না-থেকে জমি-বাড়ির ব্যবসায় হাত দিলেন এবং মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে তাতেও রমরমা। শুধু নিজের এলাকা বা হাতিশালায় ২৬০০ কাঠা জমিই নয়। সোহরাবের হাত পৌঁছেছে হাইড রোড, বোম্বে ও দিল্লি রোডের পাশের এলাকার জমিতে। এমনকী নিউ টাউনেও। শত শত কাঠা জমি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। পুলিশের খবর, ফল আর বেআইনি নির্মাণ ব্যবসার কালো টাকা দিয়ে সোহরাব পরপর জমি কিনে রেখেছেন, যার মূল্য এখন ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

আর আছে অতিথিশালা। পার্ক স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, জাকারিয়া স্ট্রিট, দরগা রোড ও পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে অন্তত সাতটি অতিথিশালা আছে সোহরাবের। উত্তর কলকাতায় তাঁর ভাইয়ের নার্সিংহোম। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘গুন্ডাবাহিনীর জোরে আর মূলত শাসক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে দাপটের দিক থেকে তাঁর এক সময়ের সুহৃদ সাট্টা ডন রশিদ খানকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন ঠান্ডা মাথার সোহরাব। রেড রোডে গাড়ির ধাক্কায় জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় ছেলে ফেঁসে যাওয়ায় এবং সোহরাব নিজে ফেরার থাকায় জল শেষমেশ কোন দিকে, কত দূর গড়াবে— বলা যাচ্ছে না।

মেছুয়ার হাতি কাদায় পড়েছে।

mohammed sohrab subhasis ghatak
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy