আগামী ১৯ মে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার আগে তিন দিনের রাজ্য সফরে আসছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)- প্রধান মোহনরাও ভাগবত। খড়্গপুরে আরএসএসের প্রশিক্ষণ শিবির চলছে। সেই শিবিরেই আজ, ১৪ মে পৌঁছবেন তিনি। থাকবেন ১৬ তারিখ পর্যন্ত। এই খড়্গপুর সদর কেন্দ্র থেকেই বিধানসভা ভোটে লড়েছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি তথা সঙ্ঘ প্রচারক দিলীপ ঘোষ। সংগঠন সূত্রের খবর, ১৭ মে সকালে মুম্বই যাওয়ার আগে ১৬ তারিখ রাতে কলকাতার কেশব ভবনে কাটাতে পারেন আরএসএস প্রধান। জেড প্লাস নিরাপত্তার অধিকারী সঙ্ঘ প্রধানের জন্য খড়্গপুরে বিশেষ সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) সঙ্গে বামপন্থী ছাত্রছাত্রীদের সংঘর্ষের দিন কয়েকের মধ্যেই আরএসএস প্রধানের রাজ্য সফরকে ঘিরে রাজনৈতিক শিবিরে চর্চা শুরু হয়েছে। সংগঠন সূত্রের দাবি, বিধানসভা ভোটে বিজেপি-র ফলাফল বিশ্লেষণ বা পরবর্তী রণনীতি নিয়ে সঙ্ঘ প্রধান কিছু সূত্র বেঁধে দিয়ে যেতে পারেন। পাশাপাশি, সিপিএম নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এলে আরএসএসের পরবর্তী নীতি কী হবে, তা নিয়েও চর্চা হতে পারে।
সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গের প্রান্ত প্রচারক বিদ্যুৎ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘সঙ্ঘ প্রধান কেবল মাত্র প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিতে আসছেন। সঙ্ঘের কাজের পরিধি বাড়াতে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করবেন। মোহনজির সফরের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’ প্রান্ত প্রচারক জানান, এ বার হাওড়ার তাঁতিবেড়িয়া, রায়গঞ্জ, খড়্গপুর, বহরমপুর এবং মুঙ্গেরে বিভিন্ন স্তরের প্রশিক্ষণ চলছে। বছরভর কয়েক হাজার ছাত্র-যুব সঙ্ঘের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। তাদের থেকেই হাজার জনকে বাছাই করে তিনটি স্তরে ভাগ করে কুড়ি দিনের প্রশিক্ষণ
দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নাগপুরে এ রাজ্য থেকে ২৫ জন প্রতিনিধি যাচ্ছেন সর্বোচ্চ স্তরের প্রশিক্ষণ নিতে।
সম্প্রতি রাজ্য গোয়েন্দা দফতরও পর পর কয়েকটি রিপোর্টে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে আরএসএসের সক্রিয়তা বাড়ছে। বিশেষত সীমান্ত এলাকা, সুন্দরবন এবং উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে আরএসএস তাদের শাখা বাড়িয়েছে। এর প্রভাব বিধানসভা ভোটের ফলাফলে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এ বারের ভোটে আরএসএস কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজেপি-র হয়ে প্রচার করেছেন। শুধু ভোটের জন্যই কয়েকশো যুবক-যুবতী মাস তিনেকের জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে কাজ করেছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘বিজেপি-র প্রচারের
বাইরেও আরএসএস কর্মীরা শুধু ভবানীপুর কেন্দ্রেই ২৪ হাজার বাড়িতে পৌঁেছছেন এবং পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।’’
ভবিষ্যতে এ রাজ্যে প্রভাব বাড়াতে সঙ্ঘের আরও এক গুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে নামার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংগঠন সূত্রের খবর। বিদ্যুৎবাবু জানান, আগামী তিন বছরের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত ব্লকে এবং পুর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে সঙ্ঘের শাখা খোলা হবে। নিয়মিত কর্মসূচি চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কেশব ভবন সূত্রের খবর, এখন এ রাজ্যে আরএসএসের দেড় হাজার শাখা রয়েছে। এক বছরে বেড়েছে ৪০০ শাখা। যেখানে সারা দেশে এক বছরে পাঁচ হাজার শাখা বেড়েছে, সেখানে এ রাজ্যে প্রায় ৪০০ শাখা বৃদ্ধি রীতিমতো উৎসাহের ব্যাপার বলে মনে করছেন আরএসএস নেতারা। এ ছাড়া এক হাজারের বেশি সাপ্তাহিক মিলন কেন্দ্রও চালাচ্ছে আরএসএস।
সঙ্ঘের সর্বভারতীয় সহ প্রচারক প্রমুখ অদ্বৈত দত্তর কথায়, ‘‘গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গের যুব সমাজে সঙ্ঘে যোগদানের প্রবণতা বেড়েছে। তাঁদের মাধ্যমে সঙ্ঘ-কাজ বিস্তারের জন্যই প্রশিক্ষণ চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy