Advertisement
E-Paper

‘রাজতন্ত্র’ ভাঙার নির্দেশ দলনেত্রীরই

ফল যা-ই হোক, রাজার বিরুদ্ধে রাজধর্ম পালনের ইঙ্গিত দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক’দিন আগেই হালিশহরের উপ-পুরপ্রধান, তৃণমূল নেতা রাজা দত্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দলের জেলা নেতৃত্ব। সোমবার ‘রাজতন্ত্র’ ভাঙার নির্দেশ এল খোদ দলনেত্রীর কাছ থেকেই! স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, দলনেত্রী রাজার বাড়বাড়ন্তে ইতি টানা এবং দলীয় স্তরে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকী, দল ভোটে জিতলেও রাজা যাতে কোনও বাড়াবাড়ি না করে, সে ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন।

বিতান ভট্টাচার্য ও সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০৩:৫৯
রাজা দত্তের (চিহ্নিত) সঙ্গে শুভ্রাংশু রায় (একেবারে বাঁ দিকে)। ছবি ফেসবুকের সৌজন্যে।

রাজা দত্তের (চিহ্নিত) সঙ্গে শুভ্রাংশু রায় (একেবারে বাঁ দিকে)। ছবি ফেসবুকের সৌজন্যে।

ফল যা-ই হোক, রাজার বিরুদ্ধে রাজধর্ম পালনের ইঙ্গিত দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ক’দিন আগেই হালিশহরের উপ-পুরপ্রধান, তৃণমূল নেতা রাজা দত্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দলের জেলা নেতৃত্ব। সোমবার ‘রাজতন্ত্র’ ভাঙার নির্দেশ এল খোদ দলনেত্রীর কাছ থেকেই! স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, দলনেত্রী রাজার বাড়বাড়ন্তে ইতি টানা এবং দলীয় স্তরে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকী, দল ভোটে জিতলেও রাজা যাতে কোনও বাড়াবাড়ি না করে, সে ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন।

গত ২৪ এপ্রিল, ভোটের আগের রাতে শহরের বারেন্দ্র গলির সমাজপতি পরিবারের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল রাজার দলবলের বিরুদ্ধে। ভোটের ফল প্রকাশের পরে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে রাজাকে যে দল আর ছেড়ে কথা বলবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘সব নজরে আছে। ফল প্রকাশের পরেই আমরা দলীয় তদন্ত করব। মানুষ আমাদের নির্বাচিত করেন দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন চালানোর জন্য। অভিযোগ উঠলে তা তো খতিয়ে দেখতেই হবে।’’

যে ‘রায়বাড়ি’ পাশে থাকার জন্য রাজার এত বাড়বাড়ন্ত বলে অভিযোগ, সেই ‘রায়বাড়ি’ এ দিনও এই প্রসঙ্গে চুপ থেকেছে। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের দাবি, মমতা রাজা দত্তের সঙ্গে ‘রায়বাড়ি’র ঘনিষ্ঠতা সুনজরে দেখেননি। এ নিয়ে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়ের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। তাঁর ছেলে, এলাকার বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়ও প্রসঙ্গটি সন্তর্পণে এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি শুধু বলেন, ‘‘হালিশহরে জলা ভরাট নিয়ে আমারই তো প্রথম প্রতিবাদ ছিল।’’ তবে, দলের এক নেতা বলেন, ‘‘আর কী বলবেন নবীন বিধায়ক? থুতু উপর দিকে ছুড়লে তো নিজের গায়েই এসে পড়বে। নিজের ঘনিষ্ঠ মহল নির্বাচনে আরও পরিণত হতে হবে ওঁকে।’’ মুকুলবাবুও ছেলের সঙ্গে রাজার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে।

জলা ভরাট থেকে বালি খাদানের ব্যবসা, সিন্ডিকেট, তোলাবাজি—সহ নানা বেআইনি কার্যকলাপে রাজা জড়িত বলে হালিশহরে
কান পাতলেই শোনা যায়। এমনকী, দু’বছর আগে নিজের অনুচর বান্টিকে খুনের ষড়যন্ত্রেও রাজা অভিযুক্ত। কিন্তু রাজ-বাহিনীর দাপটে এলাকার লোকজন এতদিন মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। সমাজপতি বাড়ির মেয়ে দেবশ্রী ও তাঁর শিশুকন্যা সায়ন্তিকা প্রহৃত হওয়ার পরেই প্রতিবাদের স্বর জোরালো হতে থাকে। মা-মেয়ে মুখ খোলেন। তার পরে একে একে আরও অনেকে। এমনকী, দু’বছর পরে বান্টির স্ত্রী পায়েল পুলিশ ও সিআইডি-র কাছে গিয়ে রাজার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আড়ালে থেকে রাজার নানা ‘কীর্তি’ ফাঁস করেছে তার চ্যালারাও। পথে নেমেছে ‘নাগরিক মঞ্চ’ও।

সব মিলিয়ে হালিশহর-কাঁচরাপাড়ায় গত কয়েক দিনে রাজার বিরুদ্ধে জনমত তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। রাজার জন্য দলের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়ায় অস্বস্তি লুকোতে পারেননি স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও। কিন্তু ‘রায়বাড়ি’ পাশে থাকায় রাজার বিরুদ্ধে তাঁরা সরাসরি দলের উপর মহলে নালিশ জানাতেও ভয় পাচ্ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ জানান, উপ-পুরপ্রধানের মতো দায়িত্বশীল পদে রাজাকে বসিয়েছিলেন খোদ বিধায়ক শুভ্রাংশু। বিধায়কের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি খুললেই তো রাজার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ছবি স্পষ্ট দেখা যায়। এর পরে রাজার বিরুদ্ধে উপর মহলে কী ভাবে নালিশ জানানো হবে?

কিন্তু আনন্দবাজারে ‘রাজ-কাহিনি’ সামনে আসায় যে ভাবে জনমত তৈরি হচ্ছিল, তাতে রাজার বিরুদ্ধে তৃণমূলের ব্যবস্থা না নিয়ে উপায় ছিল না বলেই মনে করছেন শহরবাসী। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজার ‘কীর্তি’ জানার পরেই মমতা দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। উপ-পুরপ্রধান হওয়ার আগে হালিশহরে তৃণমূলের যুব সংগঠনের দায়িত্ব ছিল রাজার। সেই সময় তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই পদ ছাড়তে হয়েছিল রাজাকে। সেই রিপোর্টও পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। ফল প্রকাশের পরেই রাজার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতারা।

রাজা কী বলছে?

দলের জেলা নেতৃত্ব যখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল, তখন রাজা কোনও মন্তব্য করেনি। দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে তার কিছু বলার নেই বলে জানিয়েছিল। এ দিন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত নিয়েও তার জবাব মেলেনি। ফোন বেজে গিয়েছে। এসএমএসের উত্তর দেয়নি। তবে, সে পুরসভায় গিয়েছে। বিকেলে তেঁতুলতলার দলীয় কার্যালয়েও বসেছে। তবে, আগের মতো হম্বিতম্বি শোনা যায়নি। কিন্তু সে যে একা ডুবতে রাজি নয়, সে আভাস নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে ইতিমধ্যেই দিয়ে রেখেছে রাজা।

রাজার খানখান হওয়া এখন কি তবে সময়ের অপেক্ষা! জল্পনা তুঙ্গে হালিশহরে।

Mamata Banerjee Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy