সময়ের এক চুল এ দিক-ও দিক। তারই মওকায় গোয়েন্দা-জাল কেটে বেরিয়ে গেল জেএমবি’র জঙ্গি চাঁই কওসর। তা-ও সীমান্ত ঘেঁষা অজ পাড়াগাঁয়ে নয়, খাস কলকাতার নাকের ডগায়! যদিও এনআইএ-র দাবি, খাস কলকাতা ও আশপাশে এমন কয়েক জন ধরা পড়েছে, জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ)-র তরফে কওসরই যাদের নিযুক্ত করেছিল বলে সন্দেহ।
কওসর ওরফে ‘বোমারু’ মিজান খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড।’ ওই বাংলাদেশিকে হাতে পাওয়ার তাগিদে এনআইএ দশ লক্ষ টাকা ইনাম ঘোষণা করেছে। গোপন সূত্রে তারা খবর পেয়েছিল, হাওড়া সাঁকরাইলের নাজিরগঞ্জে জেএমবি-র এক ডেরায় মিজান লুকিয়ে আছে। এনআইএ-র গোয়েন্দারা শনিবার সেখানে হানা দেন। কিন্তু গিয়ে দেখেন, পাখি হাওয়া!
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতেই কওসর ওখান থেকে চম্পট দিয়েছে।
গোয়েন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, কলকাতার মাত্র বাইশ কিলোমিটার দূরে হাওড়ার আস্তানাটিতে কওসরের সঙ্গে ঘাঁটি গেড়েছিল জেএমবি-র আর এক পাণ্ডা জহিরুল শেখ। নদিয়ার ছেলে জহিরুলের খোঁজ পাওয়ার জন্য এনআইএ ঘোষিত পুরস্কারের অঙ্ক হল তিন লাখ।
জঙ্গি-চক্রের এ হেন দুই মাথা ‘একটুর জন্য’ ফস্কে গেলেও জেএমবি-র নতুন গজিয়ে ওঠা একটি মডিউল (গোষ্ঠী)কে অঙ্কুরে বিনাশ করা গিয়েছে বলে জাতীয় তদন্তকারীদের দাবি। তাঁরা বলছেন, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতায় নতুন করে সংগঠনের ভিত তৈরির চেষ্টা করছিল জেএমবি। চক্রীদের বেশ ক’জনকে ধরা হয়েছে। এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, ‘‘এতে
ষড়যন্ত্রে বড় ধাক্কা দেওয়া গিয়েছে।’’
২০১৪-র অক্টোবরে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে সেই বিস্ফোরণের পরে এনআইএ-তদন্তে পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড
-অসমে জেএমবি নেটওয়ার্কের অস্তিত্ব ফাঁস হয়। খাগড়াগড়-কাণ্ডের সূত্রে জেএমবি-র যে চক্রটির হদিস মেলে, গোয়েন্দারা সেটির নাম দেন ‘বর্ধমান মডিউল।’ তাঁদের ধারণা হয়েছিল, ধরপাকড়, অভিযান ইত্যাদি চালিয়ে পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি’র কোমর একেবারে ভেঙে দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু এনআইএ-কর্তারাই এখন মেনে নিচ্ছেন যে, ধারণাটি ভুল ছিল। ‘‘খাগড়াগড়ের প্রাথমিক ধাক্কা সামলে জেএমবি ছোট ছোট নতুন
ম়ডিউল বানাচ্ছিল কওসরের নেতৃত্বে।’’ — পর্যবেক্ষণ এক অফিসারের।
এবং তারই অন্যতম হল হাওড়া মডিউল।
এনআইএ-র অভিযোগ: জেএমবি-র হাওড়া মডিউলের দায়িত্বে বহাল হয়েছিল আলতাফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি, শনিবার সাঁকরাইলের পাঁচপাড়ায় যে ধরা পড়েছে। স্নাতকস্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করা বছর পঁয়তাল্লিশের আলতাফ সেলাই মেশিনের হোলসেলার। কারবারের আড়ালে জঙ্গি-জাল ছড়ানোর ভার বর্তেছিল তার উপরে। বর্ধমানে যেমন ইউসুফ গাজিকে সামনে রেখে জেএমবি সংগঠন বিস্তার করেছিল, তেমনই হাওড়ার ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয় আলতাফকে।
কিন্তু সে জেএমবি’র খপ্পরে পড়ল কী করে? এনআই-সূত্রের খবর: মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় জেএমবি-র ডেরা ‘বোরখা ঘর’-এ সেলাই মেশিন সরবরাহের সূত্রে আলতাফ প্রথম জেএমবি-চাঁইদের নেকনজরে পড়ে। বছরখানেক আগে তাকে সংগঠনে ‘নিয়োগ’ করা হয়। ইতিমধ্যে আলতাফকে বাংলাদেশে জেএমবি-র ঘাঁটিতে পাঠানো হয়েছে। এমনকী, অসমের জেএমবি-সদস্যদের সঙ্গেও সে মোলাকাত করে এসেছে আলিপুরদুয়ারে গিয়ে। আলতাফের সঙ্গে পাঁচপাড়ার আস্তানা থেকে ধরা পড়েছে শেখ আরিফ। যে কিনা দর্জির ভেক ধরে হাওড়ায় জেএমবি’র সাংগঠনিক কাজকর্ম চালাত বলে তদন্তকারীদের দাবি।
এনআইএ জানিয়েছে, কওসর-জহিরুল জুটি গত বছরখানেকের মধ্যে অন্তত চার বার আলতাফের ডেরায় গিয়েছিল সেলাই মেশিনের খদ্দের সেজে, যাতে স্থানীয় মানুষের সন্দেহ না হয়। আলতাফ-আরিফের মাধ্যমে হাওড়ায় জঙ্গি তালিমের ঘাঁটি গড়ে তোলা ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।
‘‘তবে মনে হচ্ছে, তার আগেই আমরা জেএমবি-র মডিউলটা ভেঙে দিতে পারলাম।’’— প্রত্যয়ী মন্তব্য এক এনআইএ-কর্তার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy