Advertisement
E-Paper

ঘরে মা-মেয়ের দেহ, অচেতন পড়ে ছেলে

এক ঘরে বিছানায় পাশাপাশি পড়ে মা-মেয়ে। অন্য ঘরে টেবিলের উপরে অচেতন ছেলে। আর ছিল দু’টি ‘সুইসাইড নোট’ ও ইঞ্জেকশনের খোলা সিরিঞ্জ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মা-মেয়ে মৃত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৩

এক ঘরে বিছানায় পাশাপাশি পড়ে মা-মেয়ে। অন্য ঘরে টেবিলের উপরে অচেতন ছেলে। আর ছিল দু’টি ‘সুইসাইড নোট’ ও ইঞ্জেকশনের খোলা সিরিঞ্জ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মা-মেয়ে মৃত। ময়না-তদন্তে জানা গেল, মৃতদেহ দু’টিতে প্রচুর ইনসুলিন রয়েছে। যদিও পুলিশের দাবি, মা ও মেয়ে ডায়াবেটিসের রোগী নন। ‘সুইসাইড নোট’ অনুযায়ী, অনটনের জন্যই ‘আত্মহত্যা’র সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বর্ধমানের কুলটির ওই পরিবার।

মা আলো ঠাকুর (৬০) ও অবিবাহিতা দিদি কৃতাঞ্জলি ঠাকুরকে (৩৫) নিয়ে কুলটির নিউ রোডে ভাড়া থাকেন বছর তিরিশের ময়ূরেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রানিগঞ্জে তাঁর একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি রয়েছে। শনিবার সকালে পড়শিদের তৎপরতায় বৃদ্ধা ও তাঁর মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আসানসোল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ময়ূরেন্দ্র। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তাঁর শরীরেও ইনসুলিনের বিষক্রিয়া হয়েছে।

কুলটির বাসিন্দা আলোদেবীর বিয়ে হয়েছিল কলকাতার ব্যবসায়ী মৃত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে। বছর দশেক আগে ছেলেমেয়েকে নিয়ে পাকাপাকি ভাবে কুলটিতে চলে আসেন ওই দম্পতি। আগে নিউ রোডেই একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তাঁরা। বছর তিনেক আগে বর্তমান ভাড়াবাড়িতে আসেন। বছর দু’য়েক আগে ক্যানসারে মৃত্যু হয় মৃত্যেন্দ্রবাবুর। ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটি অর্থকষ্টে প়ড়ে বলে প্রতিবেশীদের ধারণা।

নিউ রোডের ওই বাড়ির সামনে এ দিন সকাল থেকেই পড়শিদের ভিড়। তাঁদের অনেকের দাবি, বছর চারেক আগে রানিগঞ্জে প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি খুলেছিলেন ময়ূরেন্দ্র। কিন্তু সম্প্রতি সেটি খুব একটা ভাল চলছিল না। তবে অর্থকষ্টে থাকলেও ময়ূরেন্দ্ররা পাড়ায় ভালই মেলামেশা করতেন। শুক্রবার সন্ধেবেলাও তাঁদের দেখা গিয়েছে। এ দিন সকালে এক পড়শি কোনও কাজে ময়ূরেন্দ্রর সঙ্গে দেখা করতে যান। দীর্ঘক্ষণ কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজায় ধাক্কাধাক্কি করেন। তাতেও সাড়া না মেলায় পড়শিরা পুলিশে খবর দেন।

পুলিশ জানায়, বাইরের যে ঘরে ময়ূরেন্দ্র পড়েছিলেন, সেখানে সিলিং ফ্যান থেকে একটি গামছা ঝুলছিল। মেঝেতে উল্টে পড়েছিল একটি চেয়ার। তবে কী ভাবে কী হয়েছে, তা বলার অবস্থায় ছিলেন না ময়ূরেন্দ্র। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আসানসোলের বিশিষ্ট চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘যে মানুষের ডায়াবেটিস নেই, তাঁর কাছে ইনসুলিন বিষের মতো। খুব অল্পমাত্রায় তা শরীরে ঢুকলেও মৃত্যু হতে পারে। ইনসুলিন দিলেই শরীরে গ্লুকোজ কমতে থাকে। প্রথমে জ্ঞান হারায়, তার পরে কোমায় চলে যায় মানুষ। সেই মুহূর্তে গ্লুকোজ না দেওয়া হলে মৃত্যু অবধারিত।’’ তিনি জানান, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া, ইনসুলিন সহজে মেলে না।

পুলিশের অনুমান, ল্যাবরেটরি চালানোর সূত্রে ময়ূরেন্দ্র কোনও ভাবে ইনসুলিন জোগাড় করে থাকতে পারেন। ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ বা সুঁচও তাঁর কাছে সহজলভ্য। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পশ্চিম) অনামিত্র দাস বলেন, ‘‘সুইসাইড নোটগুলি কার লেখা, তা দেখা হচ্ছে। ময়ূরেন্দ্র সুস্থ হলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে বলে আশা করছি।’’

suicide note
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy