Advertisement
E-Paper

মুক্তির রায়ে শর্ত! সুপ্রিম-নির্দেশে মৌসুমীরা খুশি, তবে কামদুনি মোড়ে বিক্ষোভ ডাক ষষ্ঠীতে

কামদুনিকাণ্ডে চার জনকে ফাঁসি ও যাবজ্জীবনের শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট সেই ‘মুক্তি’র নির্দেশে কিছু শর্ত আরোপ করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:২৬
টুম্পা ও মৌসুমী কয়াল।

টুম্পা ও মৌসুমী কয়াল। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

কামদুনিকাণ্ডে চার জনকে ফাঁসি ও যাবজ্জীবনের শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট সেই ‘মুক্তি’র নির্দেশে কিছু শর্ত আরোপ করল। শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশে ‘খুশি’ কামদুনির সেই প্রতিবাদী মুখ মৌসুমী কয়াল এবং টুম্পা কয়ালেরা। তবে তাঁদের বক্তব্য, বিধিনিষেধ আরোপ করে ‘অপরাধী’দের সতর্ক করা গিয়েছে। কিন্তু পুজোর সময় তাঁরা যে এলাকায় ঘুরে বেড়াবেন, সেটা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। মৌসুমীরা জানান, শুক্রবার ষষ্ঠীতে কামদুনি মোড়ে তাঁরা প্রতিবাদ সভারও ডাক দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার কামদুনি মামলায় শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, হাই কোর্টের নির্দেশে যাঁরা মুক্তি পেয়েছেন, তাঁদের প্রতি মাসে সোম এবং শুক্রবার থানায় হাজিরা দিতে হবে। যদি তাঁদের কারও কাছে পাসপোর্ট থেকে থাকে, তবে সেই পাসপোর্ট জমা দিতে হবে পুলিশের কাছে। প্রত্যেকের মোবাইল নম্বর থানায় জমা দিতে হবে। মোবাইল তথ্যও থানায় জানাতে হবে। আবার ফিরে এসে রিপোর্ট করতে হবে থানায়। বিচারপতি বিআর গভাই এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, চার জনই নিজেদের ঠিকানা পুলিশকে জানাবেন। থাকার জায়গার কোনও রকম বদল হলে, সেটাও জানাতে হবে পুলিশকে। কোনও ভাবেই বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের রাজারহাট থানার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা ছাড়তে পারবেন না তাঁরা। অভিযুক্ত চার জন কোথাও যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে পুলিশকে জানাবেন। কোথায় যাচ্ছেন তাঁরা, সেই তথ্যও পুলিশকে দিতে হবে। এবং কোনও ভাবেই কামদুনির নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না তাঁরা।

শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে মৌসুমী বলেন, ‘‘অপরাধীদের উপর সুপ্রিম কোর্ট যে শর্ত আরোপ করেছে, তাতে আমরা খুশি। এর পর ওরা কিছু করার আগে দু’বার অন্তত ভাববে। কিন্তু এর পরেও আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না। এখন পুজোর সময়। মেয়েরা তো বাইরে বেরোবেই। এই অবস্থায় ওরা পাড়ায় থাকলে সকলেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করবেন। করছেনও। সেটার কী হবে!’’

কামদুনির ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় গত ৬ অক্টোবর রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাই কোর্ট। এই মামলায় যে তিন জনের ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল নিম্ন আদালত, তাদের মধ্যে এক জনকে বেকসুর খালাস করে হাই কোর্ট। বাকি দু’জনের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি আরও তিন দোষী সাব্যস্তের সাজা মকুব করে হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য। যুক্তি হিসাবে রাজ্য জানায়, এই ধরনের অপরাধের অপরাধী বেকসুর খালাস পেলে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হবে। সেই মামলারই শুনানি ছিল বৃহস্পতিবার।

হাই কোর্টে সম্প্রতি কামদুনি-কাণ্ডে সাজা লাঘব হওয়া এবং তার জেরে জেল থেকে চার জনের ছাড়া পাওয়ার পর থেকেই রাজ্য সরকারের গাফিলতি এবং তদন্তে অবহেলার অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে কামদুনিবাসীদের একাংশ। মৌসুমী-টুম্পাদের দাবি, পুলিশ এবং সরকারি কৌঁসুলিরা নিজেদের কাজ সঠিক ভাবে না করায় ‘অপরাধী’রা মুক্তি পেয়েছেন! কামদুনির প্রতিবাদীদের এই অভিযোগকে সমর্থন করে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস এবং বামেরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘আদালতের উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এই রাজ্যে ফাঁসির আসামি যে খালাস পাওয়ার পিছনে পুলিশের গাফিলতি ছিল। এখন বিষয়টা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। আশা করছি আগামী দিনে কামদুনি সুবিচার পাবে।’’

পাল্টা সরকারি সূত্রের অবশ্য, রাজ্যই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। যদি সত্যিই পুলিশের গাফিলতি থাকত, তা হলে রাজ্য সরকার কখনওই সেই পথে হাঁটত না। কামদুনির মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পান, সরকার সেটাই চায়। তবে কোর্টের নির্দেশের উপর কিছু নেই। শাসক তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেনও বলেন, ‘‘কামদুনির মানুষকে ন্যায়বিচারই দিতে চায় রাজ্য সরকার। সেই কারণেই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হয়েছে। তবে কোর্ট যা নির্দেশ দেবে, সেটা তো সকলকেই মেনে নিতে হবে।’’

Kamduni Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy