Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি ধরার যন্ত্র নেই পুর-ল্যাবে

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং প্যাথলজিস্টরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গির অন্যতম নির্ণায়ক হল ‘পিসিভি’ অর্থাৎ প্যাকড সেল ভলিউম নির্ণয় পরীক্ষা এবং ‘এমসিভি’ বা মিন করপাসল ভ্যালু টেস্ট।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শুধু প্লেটলেট কাউন্ট পরীক্ষার ভিত্তিতে কলকাতা পুরসভা ডেঙ্গি নির্ণয়ের পন্থা নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে আগেই। অতি বিপজ্জনক এই প্রবণতা নিয়ে সতর্কও করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। কিন্তু পুর-ল্যাবরেটরিগুলিতে আদৌ কি ডেঙ্গি পরীক্ষার উপযুক্ত পরিকাঠামো রয়েছে?

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং প্যাথলজিস্টরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গির অন্যতম নির্ণায়ক হল ‘পিসিভি’ অর্থাৎ প্যাকড সেল ভলিউম নির্ণয় পরীক্ষা এবং ‘এমসিভি’ বা মিন করপাসল ভ্যালু টেস্ট। কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মনিরুল ইসলাম মোল্লা রবিবার স্বীকার করেছেন, তাঁদের ১৫টি ল্যাবরেটরির একটিতেও এই পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। সেই কারণেই শুধু প্লেটলেট কাউন্টের ভিত্তিতে ডেঙ্গি হয়েছে কি না ঠিক করতে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন।

আরও পড়ুন: চিন্তা পেট ফোলায়, জ্বরে ফের মৃত তিন

মনিরুলবাবুর কথায়, ‘‘এটা ঠিক যে, প্লেটলেটের পাশাপাশি ডেঙ্গি নির্ণয়ের জন্য পিসিভি এবং এমসিভি টেস্টও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা এখনও আমাদের কোনও ল্যাবরেটরিতে সেল কাউন্ট যন্ত্র কিনতে পারিনি। যে যন্ত্রের মাধ্যমে এই পরীক্ষাগুলি করা হয়।’’ তিনি জানান, যন্ত্রগুলির জন্য টেন্ডার হয়ে আটকে রয়েছে নানা কারণে।

কিন্তু কয়েক বছর ধরে যখন কলকাতা ও তার আশেপাশে ডেঙ্গির হামলা হচ্ছে নিয়মিত, তখন কেন পুরসভা টেন্ডার সমস্যার সমাধান করে পিসিভি এবং এমসিভি পরীক্ষা চালু করতে পারল না? বিরোধীদের একাংশ এবং পুরসভার মেডিক্যাল অফিসারদের অনেকেরই অভিযোগ, পুরসভার নীতিই হল ‘ডেঙ্গি হচ্ছে না’ বা ‘কম হচ্ছে’ বলে প্রমাণ করা। পিসিভি বা এমসিভি টেস্ট হলে পাছে ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়, তাই এই বিষয়ে পুরসভা সক্রিয় হয়নি।

পুরসভারই এক মেডিক্যাল অফিসারের কথায়, ‘‘পিসিভি, এমসিভি টেস্ট তো হচ্ছেই না, তার ওপর যে প্লেটলেট কাউন্টের কথা বলা হচ্ছে, তা-ও বৈজ্ঞানিক ভাবে পুর ল্যাবরেটরিতে আমরা করতে পারছি না। কারণ এই প্লেটলেট কাউন্টের জন্য যে রি-এজেন্ট দরকার সেটা অনেক ল্যাবরেটরিতেই এখন নেই। ফলে অনেক সময়েই শুধু স্লাইড দেখে রিপোর্ট দিতে হচ্ছে। তাতে রিপোর্ট ভুল আসার সম্ভাবনা থাকছে।’’

আর এক মেডিক্যাল অফিসার বলেন, ‘‘আমাদের কাছে মৌখিক ভাবে নির্দেশ, প্লেটলেট কাউন্ট এক লক্ষের নীচে না নামলে রক্তের নমুনা ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য নেওয়াই যাবে না। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই ডেঙ্গি হলেও প্লেটলেট নামে না। বরঞ্চ প্যাকড সেল, আরবিসি এবং হিমোগ্লোবিন ভ্যালু ইত্যাদি বেড়ে যায়। সেই পরীক্ষা করার ব্যবস্থা পুর ক্লিনিকে নেই।’’

কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল হেল্থ অফিসার অমিতাভ ভট্টাচার্য জানান, শরীরে প্যাকড সেল, আরবিসি আর হিমোগ্লোবিন ভ্যালু যদি বেড়ে যায় তা হলে বুঝতে হবে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যাচ্ছে। এটা ডেঙ্গির অন্যতম লক্ষণ। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা সব জানে। কিন্তু মানছে না।’’

পুরসভার অন্দরে এমনও অভিযোগ, পুর ল্যাবরেটরিগুলিতে অনেক ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান নেওয়া হয়েছে, যাঁরা স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি স্বীকৃত কোনও সংস্থা থেকে পাশ করেননি। তাঁদের দিয়ে এমসিভি, পিসিভি-র মতো পরীক্ষা করানোটাও কঠিন। এঁদের নিয়োগ হয়েছিল মূলত বাম আমলের শেষ পর্বে। কিন্তু পালাবদলের পরে সে নিয়োগ বাতিল হয়নি। ফলে ডেঙ্গির প্রাবল্যের সময়ে এই লোকবল নিয়ে পুরসভা গলদঘর্ম।

তবে মনিরুলবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের টেকনিশিয়ানরা যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন। শুধুমাত্র পিসিভি, এমসিভি টেস্ট নিয়ে সমস্যা রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব তা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

Dengue ডেঙ্গি পুর-ল্যাবরেটরিগুলি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy