ছিনতাইকারীদের বাধা দিতে গিয়ে কোন্নগরে রেলকর্মীর খুনের ঘটনায় এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল উত্তরপাড়া থানার পুলিশ। ধৃতের নাম বুবাই সিংহ। তার বাড়ি রিষড়ায়। পুলিশ জানায়, রবিবার রাতেই রিষড়া স্টেশনের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় বুবাই অপরাধ কবুল করেছে। ঘটনার সময় সে একাই ওই জায়গায় ছিল বলেও সে জানিয়েছে।
হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীন ত্রিপাঠী সোমবার ঘটনার তদন্তে উত্তরপাড়ায় আসেন। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে স্বীকার করেছে, মাদকাসক্ত অবস্থায় সে খুনের ঘটনা ঘটায়। ধৃতের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় একাধিক অভিযোগও রয়েছে।’’
পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার ভোর চারটে নাগাদ অফিস যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কোন্নগরের আদর্শনগর লোহাপট্টির বাসিন্দা, রেলকর্মী জয়প্রকাশ গুপ্ত (৫৭)। কোন্নগর স্টেশনের কিছুটা আগে এক দুষ্কৃতী তাঁর পথ আগলে দাঁড়ায়। টাকা এবং মোবাইল ফোন দাবি করে। জয়প্রকাশবাবু তাতে রাজি না হয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে এলোপাতাড়ি ভোজালি দিয়ে কোপায় ওই দুষ্কৃতী। ঘটনাস্থলেই মারা যান হাওড়া স্টেশনের টিকিট বুকিং কাউন্টারের ওই কর্মী। এর পরে ক্রাইপার রোড এবং বাটা মোড়েও ওই দুষ্কৃতী তিন জন পথচারীর উপরে হামলা চালায়।
খুনের খবর চাউর হতেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে। তদন্তে নেমে পুলিশ আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলে। তাঁদের কাছ থেকে হামলাকারীর চেহারার বর্ণনা নেওয়া হয়। এর পরেই বুবাইয়ের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়। রবিবার রাতে রিষড়া স্টেশনের কাছে তাকে ধরেন উত্তরপাড়া থানার আইসি মধুসূদন মুখোপাধ্যায়। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই মনে করছেন, এক জনের পক্ষে এ ভাবে পর পর হামলা চালানো সম্ভব নয়। একাধিক দুষ্কৃতী ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এ ব্যাপারে পুলিশের বক্তব্য, বুবাই মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই সে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে বলে সে জেরায় জানিয়েছে। নেশার ঘোরেই এলোপাতাড়ি ভোজালি চালিয়ে দেয় সে। তবে তার সঙ্গে আর কেউ ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আক্রান্ত এক ব্যক্তি সোমবার থানায় এসে ধৃতকে চিহ্নিত করেন। এ দিন ধৃতকে শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হয়। যদিও বুবাইয়ের দাবি, ‘‘আমি নির্দোষ। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। রবিবার ভোরে আমি কোন্নগরে যাইনি।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোন্নগর স্টেশনের আশপাশে ছিনতাইয়ের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিছুদিন আগেই ‘ডিউটি’ সেরে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন এক ব্যক্তি। দুষ্কৃতীরা তাঁকে মারধরও করে। ভোরবেলা রাস্তায় পুলিশের নজরদারি তেমন না থাকার সুযোগেই দুষ্কৃতীরা ওই সময়টাই ছিনতাইয়ের জন্য বেছে নিয়েছে। শুধু ছিনতাই নয়, কোন্নগর স্টেশনের পশ্চিম দিকে নবগ্রাম-কানাইপুরেও দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য লেগেই রয়েছে। পুলিশের অবশ্য দাবি, সমাজবিরোধী কাজকর্ম রুখতে তারা সব সময়েই তৎপর। রাতভর তল্লাশিও চালানো হয়। রবিবার ভোরেও পুলিশের গাড়ি আদর্শনগর এলাকায় টহল দিয়েছিল। সম্ভবত, পুলিশের গাড়ি চলে যাওয়ার পরেই জয়প্রকাশবাবুর উপরে হামলা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy