Advertisement
E-Paper

গতিই কি কাল হল, উঠছে প্রশ্ন

বাসটি করিমপুর থেকে মালদহের উদ্দেশে ছাড়ে ভোর ৫টা ৪০। প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ডোমকলে সেটি পৌঁছয় সাড়ে ৬টা নাগাদ। অন্য বাসগুলি যেখানে এই রাস্তা আসতে সময় নেয় ঘণ্টা দেড়েক, সরকারি এই বাসটি সব স্টপে দাঁড়িয়েও সময় নেয় সাকুল্যে ৫০মিনিট।

কল্লোল প্রামাণিক ও সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৯
বালিঘাট সেতুর রেলিং ভেঙে ভাণ্ডারদহ বিলে বাস পড়ে যাওয়ার পরে উদ্ধার কাজে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। সোমবার ছবিগুলি তুলেছেন গৌতম প্রমাণিক

বালিঘাট সেতুর রেলিং ভেঙে ভাণ্ডারদহ বিলে বাস পড়ে যাওয়ার পরে উদ্ধার কাজে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা। সোমবার ছবিগুলি তুলেছেন গৌতম প্রমাণিক

ছাড়লেই উড়বে! নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের বাসযাত্রায় এ দু’টো বেশ চেনা শব্দ। বাসকর্মীরা জানেন, যাত্রী টানতে গেলে এই মন্ত্রই আওড়াতে হয়। আর যাত্রীরাদেরও বিশ্বাস করতে হয় বাসকর্মীদের এমন আশ্বাস।

ঘন কুয়াশার মরসুম কিংবা দুর্ঘটনার পরে বাসমালিক সমিতির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ‘বাসকর্মীদের বলা হয়েছে গাড়ি আস্তে চালাতে’। কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে ধীরে চলো নীতিতে কি আর যাত্রী টানা যায়? বাসকর্মীদের দাবি, গতি না বাড়ালে অন্য কেউ যাত্রী তুলে নেবে। যাত্রীরাও তাড়া দেন। সময়ে পৌঁছনোটাও একটা বড় ব্যাপার।

সোমবার দৌলতাবাদের বালিরঘাটে সেতু ভেঙে জলে পড়া করিমপুর-মালদহ রুটের ওই বাসটিও যাত্রী টানত ঠিক এই কারণেই। এই বাসটির কথা উঠলেই ডোমকল ও করিমপুর সীমান্তে সকলেই একবাক্যে জানিয়ে দেন, ‘হেব্বি টানে কিন্তু।’ সেই টানই কি কাল হয়ে দাঁড়াল এ দিন? করিমপুর থেকে ডোমকল, দিনভর এই প্রশ্নটাও পাক খেয়েছে।

বাসটি করিমপুর থেকে মালদহের উদ্দেশে ছাড়ে ভোর ৫টা ৪০। প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ডোমকলে সেটি পৌঁছয় সাড়ে ৬টা নাগাদ। অন্য বাসগুলি যেখানে এই রাস্তা আসতে সময় নেয় ঘণ্টা দেড়েক, সরকারি এই বাসটি সব স্টপে দাঁড়িয়েও সময় নেয় সাকুল্যে ৫০মিনিট। ওই বাসের বহু যাত্রী বহরমপুরে গিয়ে ৭টা ৫৫-র ট্রেন ধরেন। নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েক জন শিক্ষক ওই বাসে গিয়ে মালদহে স্কুল করেন।

এ দিন দুর্ঘটনায় কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ডোমকলের মৌসুমী মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘বাসটি ঠিকঠাক সময়ে পৌঁছে দেয় বলেই তো ওই বাসেই যাতায়াত করি। তবে এখন থেকে বাসে উঠলেই ভয় লাগবে।’’ করিমপুরের জয়শ্রী চক্রবর্তী, প্রদ্যোত চৌধুরী, মলয় বিশ্বাস, মানস পালের মতো আরও বেশ কয়েক জন শিক্ষক মালদহ, ফরাক্কা ও মুর্শিদাবাদের স্কুলে পড়ান। তাঁরাও প্রতি সপ্তাহে শনিবার বাড়ি ফিরে সোমবার এই বাসেই স্কুলে যান। এ দিন তাঁরাও দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। জয়শ্রীর বাড়ি করিমপুরের আনন্দপল্লিতে। তাঁর বাবা বিকাশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আড়াই বছর আগে সুতির একটি হাইস্কুলে মেয়ে শিক্ষকতা শুরু করে। শনিবার বাড়ি আসত। সোমবারে আমি ওকে এই বাসেই তুলে দিতাম। এ দিনও তাই করেছিলাম। কী করে জানব কিছুক্ষণ পরেই এমন দুর্ঘটনা ঘটবে!’’

বাসকর্মীরা জানাচ্ছেন, করিমপুর থেকে ছাড়ার সময় ওই বাসের কোনও আসন ফাঁকা থাকত না। এমনকী, ডোমকল, জলঙ্গি থেকেও যাঁরা উঠতেন তাঁরাও আগে থেকেই আসন ‘বুক’ করে রাখতেন। ফলে গতিই ছিল এই বাসের আকর্ষণ। এ দিনের দুর্ঘটনায় জখম নাজিরপুরের বাবর আলি শাহও। বাবর ধুলিয়ানের একটি তেলকলে কাজ করেন। বাবরের কথায়, ‘‘আগে অন্য একটি বাসে যেতাম। কয়েক দিন আগে শুনেছিলাম, এই বাসটি বেশ ভাল টানে। সেই কারণে এটাতেই যাতায়াত করতাম। তবে এ দিন খুব শিক্ষা হয়েছে। আর নয়। গতির থেকে জীবন অনেক দামি।’’ সাদিখাঁরদেয়ারের নওদাপাড়ার রিপন মণ্ডল পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাঁর এ দিন বেলডাঙায় কাজে যাওয়ার কথা ছিল। রিপনের কথায়, ‘‘পঞ্চাননতলায় নেমে বেলডাঙা যাওয়ার গাড়ি ধরতাম। এ দিনই ওই বাসে প্রথম উঠেছিলাম। বাসটা এত গতিতে ছুটছিল, মাঝেমধ্যেই ভয় লাগছিল। সেই গতির কারণেই তো এ দিন টাল সামলাতে পারল না।’’ নদিয়া জেলা বাসমালিক সমিতির পক্ষে অসীম দত্তের অভিযোগ, ‘‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ নিয়ে এত প্রচার চলছে। সে নিয়ম আমরা মেনে চললেও বাস্তবে বহু সরকারি বাস তা মানে না। এটা দেখবে কে?’’

Murshidabad Bus Accident Speed Reckless Driving Passengers Death Injured
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy