Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Sutapa Chowdhury Murder Case

শুধু ফাঁসিতে কী হবে! ৪২ টুকরো হওয়া মেয়ের মতো যন্ত্রণা পাক সুশান্তও, শোক ভুলে বদলা চান সুতপার মা

চেয়েছিলেন, মেয়ের খুনির ফাঁসিই হোক। বৃহস্পতিবার অপরাধীকে সেই ফাঁসির সাজাই শুনিয়েছেন বিচারক। কিন্তু এতে খুশি নন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরকাণ্ডে নিহত সুতপা চৌধুরীর মা পাপড়ি চৌধুরী।

(বাঁ দিকে) পাপড়ি চৌধুরী এবং সুতপা চৌধুরী।

(বাঁ দিকে) পাপড়ি চৌধুরী এবং সুতপা চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৩ ২০:৩০
Share: Save:

চেয়েছিলেন, মেয়ের খুনির ফাঁসিই হোক। বৃহস্পতিবার অপরাধীকে সেই ফাঁসির সাজাই শুনিয়েছেন বিচারক। কিন্তু এতে খুশি নন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরকাণ্ডে নিহত সুতপা চৌধুরীর মা পাপড়ি চৌধুরী। মেয়ের খুনি সুশান্ত চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে— এই খবর পাওয়া মাত্রই মালদহের ইংরেজবাজারের বাড়িতে বসে কেঁদে ফেলেন তিনি। ধরা গলায় বলেন, ‘‘শুধু ফাঁসিতে কী হবে! ফাঁসি অনেক কম শাস্তি।’’

২০২২ সালের ২ মে ভরসন্ধ্যায় বহরমপুরের গোরাবাজারে একটি মেসের সামনে খুন হন বহরমপুরের গার্লস কলেজের প্রাণিবিজ্ঞানের ছাত্রী সুতপা। বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে ফেরার পথে মেসে ঢোকার সময় তাঁর উপরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সুশান্ত। ধারালো অস্ত্রের এলোপাথাড়ি কোপে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছিল সুতপাকে। তাঁর শরীরে মোট ৪২টি আঘাতের চিহ্ন মিলেছিল। সেই খুনের ঘটনায় মাত্র ১৫ মাসের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সুশান্তকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন বহরমপুরের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের অতিরিক্ত ও জেলা দায়রা বিচারক সন্তোষকুমার পাঠক। আদালতের এই রায়ের পরে মা পাপড়ি বলেন, ‘‘আমি চাইছিলাম, ফাঁসি হোক মেয়ের খুনির। তবে এই শাস্তি খুব কম। আমার মেয়ে যে যন্ত্রণা পেয়েছে, খুনি তো সেই যন্ত্রণা পেল না!’’

পাশাপাশিই, পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন পাপড়ি। কুর্নিশ জানান বিচারব্যবস্থাকেও। সুতপার মা বলেন, ‘‘এক বছরের মধ্যেই বিচার হয়েছে। কিন্তু এই দুঃখ সারা জীবনেও মিটবে না। চাকরি করার ইচ্ছে ছিল মেয়ের। কোনও দিন মিটবে না এই যন্ত্রণা।’’ বৃহস্পতিবার আদালতে বিচারক রায় পড়ে শোনানোর পরেই এজলাসে ‘সুতপা... সুতপা মা...’ বলে চিৎকার করে উঠলেন সুতপার বাবা স্বাধীন চৌধুরীও। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ের আত্মা আজ শান্তি পাবে। এই ধরনের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড না হলে আবার অন্য কারও সঙ্গে ঘটতে পারত।’’

সরকার পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় এই রায় প্রসঙ্গে বলেন, “আধুনিক সমাজে এক জন মহিলা যদি মনে করেন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসবেন, তবে সেটি করার অধিকার তাঁর আছে। সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে গেলে প্রেমিকাকে খুন করার অধিকার জন্মায় না। প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক থাকল না বলে অন্য কারও সঙ্গে তাঁকে থাকতে দেব না, এটা সত্যিই বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা।” তিনি জানান, আদালতের কাছে মৃত্যুদণ্ডই প্রার্থনা করা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গেই তাঁর সংযোজন, “এলোপাথাড়ি কোপাতে গিয়ে সুশান্তের নিজের হাত কেটে যায়, তারপরেও থামেননি। একটি অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে গান টয় কেনেন এবং যারা মেয়েটিকে বাঁচাতে গিয়েছিল, তাঁদেরকেও ভয় দেখানো হয়। সুতপার মৃত্যুকে নিশ্চিত করার জন্য ওই খেলনা বন্দুক নিয়ে ঘটনাস্থলে যান সুশান্ত। সমস্ত কিছু বিবেচনা করে আমাদের মনে হয়েছে এটা বিরলতম ঘটনা।”

অন্য দিকে, সুশান্তের আইনজীবী পীযূষ ঘোষ বলেন, ‘‘আমার মক্কেল এক জন মেধাবী ছাত্র। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অন্তত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রার্থনা করেছিলাম। মহামান্য আদালত তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে। রায়ের কপি পাওয়ার পর মক্কেলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE