Advertisement
E-Paper

দীপান্বিতার মাথায় জিয়াদ চাচার হাত

শুভর বাবা মান্তুবাবু ব্যবসায়ী। দু’বার পঞ্চায়েত প্রধানও ছিলেন। তাঁর বড় ছেলের বিয়েতে প্রায় হাজার লোকের নিমন্ত্রণ। বিয়ের দিন মান্তুবাবুর মাথায় হাত। কোনও গাড়িচালক ৪০ কিলোমিটার ঠেঙিয়ে কচুয়া পঞ্চায়েতের দুর্গাবাটি গ্রামে যেতে চায়নি। সেখানকার মেয়ে দীপান্বিতার সঙ্গেই বিয়ের কথা শুভর।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ০৩:৪৪
সম্প্রীতি: নববধূকে আশীর্বাদ। বসিরহাটে। —নিজস্ব চিত্র।

সম্প্রীতি: নববধূকে আশীর্বাদ। বসিরহাটে। —নিজস্ব চিত্র।

প্রায় দেড়শো লোক, প্রচুর গাড়ি, মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন বর। পথে কোথাও জ্বলন্ত টায়ার। কোথাও রাস্তার পাশে বড় বড় গাছের গুঁড়ি ফেলা। হঠাৎ একদল লোক হইহই করতে করতে লাঠিসোঁটা হাতে ছুটে গেল। র‌্যাফ, পুলিশের টহল ইতিউতি।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার বিয়ে করতে গিয়েছিলেন বসিরহাটের শাঁকচুড়ো বাগুন্ডি পঞ্চায়েতের সোলাদানা এলাকার শুভ ঘোষ। শনিবার বললেন, ‘‘ভাবিনি শেষমেশ বিয়েটা হবে। গ্রামের সব মানুষ পাশে না দাঁড়ালে কিছুই সম্ভব ছিল না।’’ রুহুল আমিন ঢালি, জিয়াদ আলি গাজিদের মতো মানুষ শুক্রবার ঘোষ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে বৌভাতটাও উতরে দিয়েছেন। সকলের মুখে একটাই কথা, ‘‘গাঁয়ের ছেলের বিয়ে আটকে যাওয়াটা গোটা এলাকার অসম্মান। বাইরের কাউকে এখানে এসে হুজুত করতে দেব না।’’

আরও পড়ুন: আতঙ্ক সরিয়ে রেখে স্বস্তিতে বসিরহাটবাসী

শুভর বাবা মান্তুবাবু ব্যবসায়ী। দু’বার পঞ্চায়েত প্রধানও ছিলেন। তাঁর বড় ছেলের বিয়েতে প্রায় হাজার লোকের নিমন্ত্রণ। বিয়ের দিন মান্তুবাবুর মাথায় হাত। কোনও গাড়িচালক ৪০ কিলোমিটার ঠেঙিয়ে কচুয়া পঞ্চায়েতের দুর্গাবাটি গ্রামে যেতে চায়নি। সেখানকার মেয়ে দীপান্বিতার সঙ্গেই বিয়ের কথা শুভর।

মান্তুবাবুকে অভয় দিলেন খাদিমুল দর্জি, কুরবান মৃধা, মিজানুর মোল্লারা। বলেন, ‘‘চিন্তা নেই। আমরা গ্রামের লোকই বরযাত্রীদের নিয়ে যাব নিজেদের গাড়ি করে।’’ সেই মতো দেড়শো লোকের কনভয় নিয়ে বিয়ে করতে বেরোন শুভ।

শুক্রবার বৌভাতে আর এক চিন্তা। কোথা থেকে খাবার আসবে? বাকি ব্যবস্থাই বা হবে কী করে। নিমন্ত্রিতেরা সকলে আসবেন তো— মান্তুবাবুর উদ্বেগের শেষ নেই। এ বারও পাশে দাঁড়াল গ্রাম। বৃহস্পতিবার থেকে রাত পাহারায় ছিলেন নিজামুল মোল্লা, পলাশ ঘোষ, বুবাই বিশ্বাসরা। শুক্রবার রাতে যতক্ষণ না নিমন্ত্রিতেরা সকলে ফিরেছেন, পাহারা ছিল। দীপান্বিতাকে আশীর্বাদ করে জিয়াদ, গফুররা বলেছেন, ‘‘তোমার সম্মান এখন গোটা গ্রামের সম্মান।’’

গৌর ঘোষ, রফিক মোল্লাদের কথায়, ‘‘ইছামতীর পাশে সীমান্তের এই এলাকায় এমনিতেই ভয়ে ভয়ে থাকি। নিজেরা যদি একে অন্যের পাশে না দাঁড়াই, তা হলে সকলেরই বিপদ।’’ পঞ্চায়েত প্রধান আরিকুন নাহার ও তাঁর স্বামী জহরুল হক নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসেছিলেন। আরিকুন জানালেন, নিজেদের মধ্যে গোলমাল ছড়ালে কেউ রক্ষা পাবে না।

সব দেখেশুনে অভিভূত শুভ। বললেন, ‘‘বিয়ের আনন্দের থেকেও বেশি আনন্দ হচ্ছে এটা ভেবে, এখানকার মানুষ যে ভাবে সকলে আমাদের আগলে রেখেছেন।’’ নববধূকে বৌভাতে সাজিয়ে দিয়েছেন রেহেনা দর্জি, সাবিনা ইয়াসমিনেরা। দীপান্বিতা বলেন, ‘‘রাস্তায় আসতে আসতে আমার বুক কাঁপছিল। একের পর এক পোড়া দোকান, ভাঙা বাড়ি। এখানে দেখলাম একেবারে অন্য ছবি। মন ভরে গিয়েছে।’’

Marriage Hindu Muslim Basirhat Violence Communal Harmony শুভ ঘোষ বিয়ে
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy